ত্রিশাল-বড়মা আঞ্চলিক সড়ক

চার কিলো সড়কে ১৬ গতিরোধক, যেনও মৃত্যুফাঁদ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন, ১৪ই নভেম্বর ২০২২


চার কিলো সড়কে ১৬ গতিরোধক, যেনও মৃত্যুফাঁদ
ছবি: জনবাণী

ময়মনসিংহের ত্রিশাল-বড়মা আঞ্চলিক সড়কের দূরত্ব চার কিলোমিটার। ত্রিশাল পৌর অংশ থেকে বড়মা বাজার যেতে সড়কের প্রবেশপথেই উঁচু একটি বড় গতিরোধক দিয়ে শুরু। এভাবে পুরো চার কিলোমিটার সড়কে কোথাও ৫০ ফুট, কোথাও ১০০ ফুট দূরত্বে বসানো হয়েছে গতিরোধক।


সড়কটি দিয়ে চলাচলকারীদের অভিযোগ, পরিকল্পনা ছাড়া স্থাপন করা এসব গতিরোধকই পথচারীর ও যানচলাচলের জন্য মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর সিমানার পর বড় একটি গতিরোধক দেওয়া হয়েছে। তারপর কিছুদুর যাওয়ার পর একেক পর এক গতিরোধক। যা খোলা চোখে কত সময় চোখে পড়ে অনেক সময় পড়ে না। সড়কটি দিয়ে যান বলতে বেশির ভাগই মোটরসাইকেল আর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। তবে সেই সড়কেই রয়েছে ১৬টি গতিরোধক। সড়কের পাশে পাঁচ-সাতটি দোকান থাকলেই তার দুই পাশে দেয়া হয়েছে গতিরোধক। বাড়ি, স্কুল, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনার সামনে অপরিকল্পিত ইচ্ছামতো দেয়া হয়েছে গতিরোধক। কোনটাতেই দেওয়া হয়নি রংয়ের সাইন। অনেক সময় অপেক্ষা কওে দেখা গেল অপরিচিত যানচালক না দেখেই গতিরোধকের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যান চালিয়ে যাচ্ছেন। এত ঘটছে দুর্ঘটনা। দিনের বেলাতে ঝুঁকি এড়াতে পথচারী, মোটরসাইকেল চালকরা গতিরোধক এড়িয়ে সড়কের পাশ ঘেঁষে চলাচল করছেন। রংয়ের সাইন না থাকায় গ্রামীণ সড়কে গতিরোধকগুলো রাতে বোঝার কোন উপায়ও নেই।


আরিফুল ইসলাম নামের এক মোটরসাইকেলচালক বলেন, এই কম দুরত্ব সড়কে এত গুলো বিট মেনে নেওয়া যায়না। বিটগুলো যে উঁচু করে এবং ঘনঘন দিছে তাতে অনেক সময় ব্রেক করতে করতে গাড়ী উল্টে পড়ে। অনেক সময় এগুলো দেখাযায়না তখর উপর দিয়েই চালিয়ে দিতে হয়। আর রাতে বিট দেখা যায়না তখন পড়তে হয় বেশী সমস্যায়। আমিসহ অনেকেই এসব বিটের কারনে দুর্ঘটার শিকার হয়েছে। কোনো মোটরসাইকেল চালক এই সড়কে প্রথম আসলে অবশ্যই দুর্ঘটনার কবলে পড়বেন। যে যার ইচ্ছেমত বাড়ি, মসজিদ, দোকানের সামনে বিট দিয়েছে। প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ, এর দায় কে নিবে?


এই সড়কে চলাচলকারী অটোরিকশাচালক আলিম উদ্দিন বলেন, এই সড়কে ঘনঘন বিট দিছে গাড়ী চালাইয়া মজা নাই। একটু পর পর ব্রেক করতে হয়। অনেক সময় মনেও থাকে না। এত বিটের তো দরকার নাই। সারাডা সড়কে বিট দিছে। ফাঁকা জাগাতো আছে। এসব বিটের কারনে অনেক গাড়ী উল্টে যাত্রীরা ব্যথা পাইছে। বেশি মটর সাইকেল এক্সিডেন্ট হয়।  প্রায় রাইতেই মোটরসাইকেল উল্টে পড়ে। আবার অনেক সাইকেল চালাইতে চালাইতে না দেখে বিটে পড়ে যায়।


এই সড়কে চলাচলকারী ইদ্রিস আলী, আকলিমা খাতুন, জহিরুল ইসলাম, স্কুল পড়ুয়া হাসিবুর বলেন, এই কয়েক কিলোমিটার সড়কে এতগুলো গতিরোধন সারা ত্রিশালে আর কোথাও নাই। যার যেখানে ইচ্ছে হইছে সেখানেই গতিরোধক দিছে। এসব ছোট , বড় গতিরোধকের ফলে অটো রিকসা, মটরসাইকেল প্রতিদিন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। অটোরিকশা বা সিএনজিতে করে হাসপাতালে অসুস্থ রোগী, গর্ববতী মাকে নিলে সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছু কিছু গতিরোধক চলন্ত অবস্থায় বোঝা যায় না। এতে আমাদের সমস্যা হয়। গাড়িভর্তি যাত্রী থাকলে বিট পার হওয়ার সময় ঝাঁকি লাগে। দূর থেকে আসা চালকরা রাস্তা অপরিচিত হওয়ায় কোথায় গতিরোধক আছে তা তারা বুঝতে পারেন না। অপরিকল্পিত এসব গতিরোধকের কারণে সন্ধ্যার পর দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। এগুলো অপসারন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।


উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ সড়কে এতগুলো গতিরোধক কারা বসিয়েছে সে তথ্য আমরা বলতে পারবোনা। আমার ডিপার্টমেন্ট এগুলো দেয়নি। এটা আনঅথরাইজড। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন এ সড়কে ১৬ টি গতিরোধক। এটি গতিরোধক নয়, এটা মরনফাঁদ। স্থানীয় যারাই গতিরোধক দিয়ে থাকুক তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিৎ। সড়কে অপরিকল্পিত ভাবে গতিরোধক দেয়ার নিয়ম নেই। যখন সড়কটি করা হয় তখন স্থানীয়রা এগুলো দিতে পারে। তবে আমি বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

জেবি/ আরএইচ