ত্রিশালে লেপ-তোশক তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:২৪ পূর্বাহ্ন, ২০শে নভেম্বর ২০২২

এবার শীতের আগমন একটু আগে থেকেই শুরু হয়েছে। এখন থেকেই আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে শীতের। বেশ কয়েকদিন ধরে কুয়াশাসহ ঠান্ডা হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এতে একটু আগেই শীতের বাতাস বইতে শুরু করেছে।
শীতের আগমনে ময়মনসিংহের ত্রিশালে লেপ-তোশক তৈরীতে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতে উপজেলার লেপ-তোশকের দোকান গুলোতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে কারিগররা।
দেখা যায়, এ বছর বাংলা কার্তিক মাস শুরুর হতেই দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা আর ভোরে হালকা কুয়াশা। ভোর সকালে ঘাস, লতাপাতার ওপর জমে থাকা হালকা শিশির বিন্দু দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীত আসার আগেই সবাই প্রস্তুত হয় ঠান্ডা মোকাবিলার জন্য। গত কয়েক দিন ধরে আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। রাত শেষে ভোরে কুয়াশাচ্ছন্ন থাকার কারণে সূর্যের আলো দেড়িতে উঠছে। সঙ্গে হালকা শীত শীত অনুভব। দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। আর শীতের আগমনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে লেপ-তোশক তৈরির কারিগরসহ দোকানীরা।
কার্তিকের সকালে শীতের শুরু হলেও পৌষ ও মাঘ এ দুই মাস শীত মৌসুম। আবার অনেকেই তাদের পুরাতন উঠিয়ে রাখা লেপ-তোষক বের করে রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করছেন।
সরেজমিনে লেপ-তোশকের দোকান ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার পৌর এলাকায় যে লেপ-তোশকের দোকানগুলো সারা বছর ক্রেতাশুণ্য বসে থাকতো। সেই প্রতিটি দোকানেই দেখাযায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কারিগররা লেপ-তোশক তৈরীতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। শীতের শুরুতেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। কারিগরের পাশাপশি দোকানিরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ক্রেতার কাছ থেকে অর্ডার নিচ্ছেন। ক্রেতাদের বিভিন্ন রং-মানের কাপড় ও তুলা দেখাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শীত বাড়ার সাথে সাথে লেপ-তোশক তৈরীতে তাদের ব্যস্ততা আরও বাড়বে বলে জানান তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের চাইতে তুলা ও কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে লেপ-তোশকের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। সাথে লেপ-তোশক তৈরীর কারিগরকেও বেশী টাকা দিতে হচ্ছে।
লেপ-তোষক তৈরীর কারিগর ইদ্রিস আলী, ইমরান হোসেন, আমিরুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম বলেন, সারাবছর বেশী কাজ করতে পারিনা। অর্ডার কম থাকে। বসেই সময় কাটাতে হয়। আবার ঐ সময় অন্য কাজও করি। তবে এবার শীত একটু আগেই শুরু হয়েছে। ক্রেতারা লেপ-তোশক বানাতে শুরু করেছে আমরা একটু ব্যস্ত সময় পাড় করছি। লেপ-তোশকের চাহিদা শীতেই বেশী। ক্রেতাদের এ আনাগোনা চলবে পুরো শীতজুড়ে। তাই এই সময়ের আয় দিয়েই আমাদের সংসার চলে। আগের চেয়ে এবার জিনিসের দাম বেশী। আমাদের আকার অনুযায়ী লেপ-তোষক তৈরিতে ৪০০, ৫০০, ৮০০ টাকা মজুরি নেওয়া হচ্ছে। আগের চেয়ে মুজুরিটাও একটু বেড়েছে। আশা করি শীত বাড়ার সাথে সাথে লেপ-তোশকের চাহিদা আরও বাড়বে ।
উপজেলার লেপ-তোশক ব্যবসায়ী রেজাউল করিম, হারেছ আলী, আল-আমীন, আমির হোসেন, সুরুজ আলী বলেন, সারা বছর এই গরম জিনিসের ব্যবসা একটু কম। শীত আসলে এর চাহিদা বাড়ে। আগের চেয়ে তুলা, কাপড়, কারিগরের মজুরী বেশী হওয়ায় লেপ-তোশকের দামও একটু বেড়েছে। তবে কাপড়, তুলার মান ও পরিমাণের ওপর নির্ভর করে লেপ-তোষক তৈরির খরচ। আগে যে লেপ একহাজার বারশ বিক্রি হতো তা এখন ১৬শ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে একটি ভালো মানের লেপ তৈরি করতে খরচ হচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। এছাড়া ভালো মানের তোষক তৈরি করতে খরচ হয় তিন থেকে চার হাজার টাকা। গত বছর ভালো মানের লেপ তৈরিতে খরচ হয়েছে এক থেকে দুই হাজার টাকা। আর তোষক তৈরিতে দেড় থেকে তিন হাজার টাকা। একটি লেপ- তোষক বিক্রি করলে আমাদের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার বেশী লাভ হয়না। শীতের তীব্রতা বাড়লে লেপ-তোশকের চাহিদা আরও বাড়বে। বর্তমানে শীতের আগমনে বিকিকিনি ভালোই হচ্ছে। বাজারে লোক সমাগম রয়েছে। অনেকে আগেভাগে পুরোনো লেপ-তোশক, বালিশ ঠিকঠাক ও নতুনভাবে তৈরি করার জন্য অর্ডার দিচ্ছেন।
জেবি/ আরএইচ/