পাবনায় ইট ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ,হুমকির মুখে পরিবেশ
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:৪২ পূর্বাহ্ন, ২১শে নভেম্বর ২০২২
‘পাবনা জেলার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে একের পর এক অবৈধ ইট ভাটা। কোন নিয়মনীতি না মেনে পােড়ানাে হচ্ছে কাঠ, ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। বসতির পাশে গড়ে উঠা এসব ইট ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় মানবদেহে বাড়ছে নানা রকম রােগ ব্যাধী, বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। সরকারি বিধি নিষেধ সত্তেও পাবনার বিভিন্ন এলাকা থেকে ফসলি জমির ক্ষতি করে সংগ্রহ করা হচ্ছে ইট তৈরি করার মাটি। ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও লাকড়ি।
পাবনা জেলায় মােট ইট ভাটা ২২৮ টি হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকায় রয়েছে ১৮৭ টি। শুধু পাবনা সদর এবং সদরের সাথেই ঈশ্বরদীর কিছু অংশ মিলে রয়েছে ১৪০ টি ইট ভাটা। উল্লেখযোগ্য শুধু ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী কামালপুর, লক্ষীকুন্ডা, বিলকাদা, সাহাপুর এলাকায় রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক এর বেশি ইট ভাটা। হাতেগোনা কয়েকটি ইট ভাটা ছাড়া অধিকাংশ ভাটাতে নাই- পরিবেশ, ফায়ার, ট্রেড, বিএসটিআই সহ কােন ছাড়পত্র । যার ফলে তারা কম দামে ইট বিক্রি করলেও বেগ পেতে হচ্ছে বৈধ ইট ভাটা গুলোর।
বৈধ ইটভাটা মালিকরা বলেন, কয়লার দাম ও জ্বালানি তেল এর বৃদ্ধি হওয়ায়, কয়লা বেশী দামে কিনতে হচ্ছে, এবং সব কিছুর খরচ বেড়েছে। এতে ইট উৎপাদন করতেও অনেক বেশী ব্যায় হচ্ছে, অথচ সেই তুলনায় ইট বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছি না। কারণ অবৈধ ইটভাটা মালিকরা তাদের ইচ্ছে মতো সরকারি নিয়মনীতি না মেনে খড়ি, লাকড়ি ব্যবহার করে ও কোন রকমের লাইসেন্স না করেই ইট ভাটা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে তারা স্বল্পমূল্যে ইট উৎপাদন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। কিন্তু আমরা ব্যয়বহুল খরচ করে ইট উৎপাদন করেও সঠিক দামে বিক্রয় করতে পারছি না। এ বিষয়ে অনুমোদনহীন ইটভাটা মালিকদের কাছে জানতে চাইলে, তারা কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।
এদিকে অনুমােদনহীন এসব ইট ভাটার কারণে পাবনায় লিচু, আম ও ধানের ফলন কমতে শুরু করছে, পাবনা জেলায় প্রচুর পরিমাণ লিচু,আম ও ধান উৎপাদন করে এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জায়গায় রপ্তানি করা হয়। তাই মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্ঠির আগেই পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। তারা আরও বলেন, কৃষি জমির উপরের মাটি কেটে নিলে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে ২০/৩০ বছর সময় লেগে যায়। স্কুল কলেজ বসতবাড়ীর এক কিলামিটারের মধ্যে ভাটা ¯স্হাপন নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেনা ভাটা মালিকরা। ফলে ভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় দেখাদেয় নানা রােগ ব্যাধী। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে র্দীঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পরতে পারে।
এদিকে অভিযােগ রয়েছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই দিনের পর দিন চলছে এসব অবৈধ ইট ভাটা। এলাকাবাসীর অভিযােগ নদী, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য ও মানুষের বসতির ক্ষতি করেই চলছে অবৈধ ইট ভাটাগুলো। এসব ভাটাতে পরিবেশ, ফায়ার, ট্রেড, বিএসটিআই সহ কােন ছাড়পত্র নাই, কিন্তু আইনের তােয়াক্কা না করেই ভাটা চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লােক দেখানাে অভিযানে ভাটা মালিকরা হয়ে উঠে আরও বেশি বেপরোয়া।
এখনই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বা নজরদারি না বাড়ালে হুমকির মুখে পড়তে পারে মানুষের স্বাভাবিক জীবন, এবং ঘটতে পারে পরিবেশ বিপর্যয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমুল হােসাইন বলেন- আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়ার না থাকায় আমাদের অনেক সময় অভিযান করতে বিলম্ব হয়। শুধু মাত্র পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকেই ভ্রাম্যমান অভিযান পরিচালনা করতে পারে। তাছাড়া আমাদের জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। তবে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয় কে অনুরােধ করেছি, খুব দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করার জন্য।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হােসেন বলেন, আমরা খুব দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করবো। আশা করছি পাবনাতে কােন অবৈধ ইট ভাটা থাকবে না।,
আরএক্স/