শ্রীপুরে প্লাস্টিকের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ শিল্প


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, ২২শে নভেম্বর ২০২২


শ্রীপুরে প্লাস্টিকের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ শিল্প
ছবি: জনবাণী

গ্রামীণ জনপদে এখন  প্লাস্টিকের পণ্যের কদর বেড়ে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসছে বাঁশ দিয়ে তৈরি শিল্পসামগ্রী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক পণ্য যত সহজলভ্য হয়েছে, ততই বাঁশের তৈরি শিল্পের কদর কমেছে। বাঁশ পণ্যের চলমান করায় কারিগররাও রয়েছেন বিপাকে।


বাঁশের তৈরি পণ্য আমাদের লোকজ শিল্পের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। গ্রামীণ অর্থনীতি ও গ্রামীণ বহু মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে এ শিল্পের সঙ্গে। কালের বিবর্তনে ও প্রযুক্তির বদৌলতে প্রাচীন এ শিল্পের ঐতিহ্য এখন ভাটার দিকে। বাঁশের তৈরি পণ্য দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করা যায় না, ফলে মেয়াদের প্রশ্নে মানুষের নজর কেড়েছে প্লাস্টিক। তা ছাড়া কম দামে প্লাস্টিকপণ্য কিনতে পারায় মানুষ দিনে দিনে বাঁশের তৈরি পণ্য ছেড়ে ঝুঁকছেন প্লাস্টিক দূষণের দিকে। সবখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্লাস্টিক আর চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন আমাদের বাঁশের শিল্পী ও কারিগররা। 


গাজীপুরের শ্রীপুরে বরমী ও নিকটবর্তী উপজেলার কালিয়াকৈরের ফুলবাড়িয়া একসময় বাঁশের পণ্যেই সয়লাব ছিল বাজার। পূর্ব প্রজন্মের ধারায় বাঁশশিল্প নিজ উদ্যোগে টিকিয়ে রেখেছেন আমাদের বাঁশশিল্পীরা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পের মান কমেছে, বাজার হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তারা। 


শ্রীপুরের কালিয়াকৈর ফুলবাড়িয়া বাজার ঘুরে দেখা যায় ,কয়েকটি দোকানে বাঁশ পণ্যের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন কেউ কেউ। এখনকার বাজারে তাদের বিকিকিনি ভালো নয়, সমাজে নেই বাঁশশিল্পীর আগের সম্মান। তবু নিজ দায়িত্বে কয়েক প্রজন্মের ব্যবসা ধরে রেখেছেন তারা। 


ফুলবাড়িয়া বাজারে গত ৪০ বছর ধরে বাঁশ দিয়ে তৈরি শিল্পসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। দোকানের মালিক পরির্বতন হলেও স্থানের নেই কোনো পরির্বতন। বাঁশের তৈরি হরেকরকম পণ্যে সাজানো দোকান দেখে মনে হবে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। যেন ফুল দিয়ে সাজানো বাগানে পাহারা দিচ্ছেন মালী। ক্রেতার সংখ্যা তেমন নেই বললেই চলে। দোকানে সাজানো আছে বাঁশ দিয়ে তৈরি কুলা, চালুন, খাঁচা, মাচা, খালই, মাছ ধরার বাইড়, মই, চাটাই, ঢোল, গোলা, ওড়া, বাউনি, ঝুড়ি, ডুলা, মোড়া, মাছ ধরার চাঁই, ঠুয়া, টুকরি, খাদা, উড়ি, মাথাল, ঝাঁপ, ডালা, বেলকি, তালের পাখা, শীতলপাটি, খেজুর পাতার ঝাড়ু, নকশিপাটি, ফুলঝাড়ুসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী।


ফুলবাড়িয়া বাজারের বাঁশপণ্য বিক্রেতা আক্কাস ও আয়নাল জানান, একসময় বাঁশের তৈরি পণ্যের অনেক চাহিদা ছিল। প্লাস্টিক এসে ব্যবসা নষ্ট করে দিয়েছে। আদি পেশা হিসেবে এখনও ধরে রেখেছি এ ব্যবসা। আগে আমাদের উপজেলার কারিগরের তৈরি করা জিনিস বিক্রি করতাম। এখন তারা আর আগের মতো তৈরি করে না, তাই বাইরে থেকে কিনে এনে ফুলবাড়িয়া বাজারে বিক্রি করে থাকি।  প্লাস্টিকের পণ্যে বাজার ভরে গেছে। আল্লাহর রহমতে যেটুকু বিক্রি হয় কোনোরকম চলে যাচ্ছি। এ ব্যবসা থেকেই আমার পুরো সংসার চলে।


বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাঁশ, বেত দিয়ে তৈরি পণ্যসামগ্রীর দাম। চাটাই ১০০-১৫০ টাকা, কুলা ১০০-১৩০ টাকা, চালুন ৮০- ১৫০ টাকা, খাঁচা ১০০-৩০০ টাকা, মাচা ১৫০-৩০০ টাকা, মাছ ধরা বাইড় ১০০-৫০০ টাকা, মই ২০০-৫০০ টাকা, ঠুয়া ৫০-১০০ টাকা, টুকরি ৫০-৮০ টাকা, খাদা ১০০-২৫০ টাকা, উড়ি ৫০ টাকা, মাথাল ১০০-২০০ টাকা, ডালা ৬০-১০০ টাকা, তালের পাখা ৩০-৮০ টাকা, পাটি ৮০-১০০০ টাকা, খালই ৫০-১০০ টাকা, ঝাড়ু ৬০-১০০ টাকায় খুচরা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। 


বাঁশের পণ্য সংগ্রহের পাইকার জসিম, কাজল ও বশির শেখ বেপারি জানান, আমরা বিভিন্ন এলাকার কারিগরের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করি। বাঁশ আগের মতো পাওয়া যায় না। তাই বাঁশের দাম ও মজুরি বেশি হওয়ায় পণ্যের দামও একটু বেড়েছে। একই সঙ্গে প্লাস্টিকের পণ্যের কারণে একটু চাহিদা কম। চাহিদা কম থাকায় এসব পণ্যের কারিগররা অন্য পেশায় চলে গেছে। প্রত্যন্ত গ্রামে কিছু লোক তৈরি করে আমরা সেখান থেকে সংগ্রহ করি।