দুমকিতে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন, ৩০শে নভেম্বর ২০২২
পটুয়াখালীর দুমকি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুর রস। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে খেজুর রসের মত আরো অনেক কিছু। গ্রাম গঞ্জে আগের মত খেজুর গাছও দেখা যায় না ।
একসময় শীতের মৌসুমে শুরুতেই গ্রামগঞ্জের মানুষ খেজুর গাছ কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। কে কার আগে খেজুর গাছ কেটে প্রাকৃতির সেরা উপহার সমূহ মধ্যে অন্যতম খেজুর রস সংরক্ষণ করতে পারে এই প্রতিযোগিতা নেমে পড়ত।
এরপর সেই রস দিয়ে স্বল্প সময় তৈরি করা হতো গুড়, বাটালি গুড়, মিঠাসহ নানান রকমের মজাদার খাবার। তবে সময়ের পরিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস। উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং আয়লায় অনেক খেজুর গাছের ক্ষতি হয় এ সময় অনেক খেজুর গাছ মারা যায়।
ফলে এই অঞ্চলের খেজুর রস ও গুড় অনেক সংকট হয়ে পড়ছে, আজ থেকে ১৫-২০ বছর পূর্বে বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার খেজুর গাছ থেকে রস সংরক্ষণ করতো গাছিরা। গত ১০ বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ জলোবায়ু পরিবর্তনের কারনে দক্ষিণাঞ্চলে খেজুর গাছ সংকট। এলাকাবাসী বলেন, আমরা আগে শীত আসলেই দেখতাম গাছিরা খেজুর গাছ কাটতো কার আগে কে কটতে পারে এমন একটি প্রতিযোগিতা ছিলো।
আমরা তাদের কাছ থেকে রস এবং মিঠা কিনে বিভিন্ন পিঠা পায়েস খেতাম । এখন আগে মত কেউ গাছ কাটে না। দুই এক জনে কাটলেও যে মূল্য চাচ্ছে তাতে কিনে খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা জানতেও পারবেনা এই ঐতিহ্যবাহি খাবারটির কথা।দক্ষিণ মুরাদিয়ার এর গাছিয়া শাহজাহান মাঝি(৭৩) বলেন, আগে ৭০/৮০ টি খেজুর গাছ থেকে রস বের করতাম, এবার গাছ কমে যাওয়ায় ৩০/৪০টি গাছ প্রস্তুত করতে চাই।
গাছ কাটার সরঞ্জাম যেমন দা, রশি ও হাড়ির দাম বেড়ে গেছে অপরদিকে বয়সের ভারে এখন আর গাছে উঠতে পারি না। এছাড়াও গাছের রস কমে গিয়েছে পূর্বে গাছ থেকে ১০ থেকে ১২ লিটার রস সংগ্রহ করা হতো এখন প্রতিটি গাছ থেকে ৫লিটারের বেশি রস পাওয়া যাচ্ছে না। তবে প্রতিকলস রস ৫ থেকে ৬ শত টাকায় বিক্রি করা হয়।
শ্রীরামপুর ইউনিয়নের গাছিয়া আ. খালেক হাওলাদার ও দেলোয়ার মৃধা জানান,রস বেশি হবার জন্য যে আবহাওয়া দরকার এখন আগের মত সে আবহাওয়া নেই,পরিবেশ বিপর্যেয়র কারণে যে হারে গাছ মরে যাচ্ছে সে তুলনায় গাছ লাগানো হচ্ছে না এবং পরিচর্যার অভাবে দিন দিন কমে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ ও খেজুরের রস।
দুমকিতে পরিবেশ ও কৃষি নিয়ে কাজ করে সামাজিক সংগঠন সবুজ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের ইসলাম বলেন,আমাদের উপজেলা উপকূলীয় এলাকায় হওয়ায় বিভিন্ন দুর্যোগ এবং জলোচ্ছ্বাসের কারণে গাছগুলো নষ্ট হয়ে যায়। খেজুর গাছ মানুষের কাজে না লাগায় অবহেলায় অযত্নে পড়ে থাকে তাই গাছ কেটে লাকড়ি হিসেবে রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহার হচ্ছে।গাছ যখন ছোট থাকে গরু,ছাগলে খেয়ে ফেলে এতে করে নতুন করে গাছ বড় হচ্ছে খুবই কম। এসব কারণে খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে।
আরএক্স/