নিম্নচাপের প্রভাবে রাঙ্গাবালীতে ঘের-পুকুর তলিয়ে কোটি টাকার ক্ষতি!


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:০৩ অপরাহ্ন, ২রা জুন ২০২৫


নিম্নচাপের প্রভাবে রাঙ্গাবালীতে ঘের-পুকুর তলিয়ে কোটি টাকার ক্ষতি!
নিম্নচাপের প্রভাব রাঙ্গাবালীতে

*১ হাজার ৩০০টি পুকুর এবং ৬৫০টি মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে।


*মাছ চাষিদের ক্ষতি প্রায় ৪ কোটি টাকা 


*২৬০ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।


* আউশ ধানের ৮ হেক্টর বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।


জোয়ারের পানিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেরিবাঁধ ভেঙে চালিতাবুনিয়ার পুরো এলাকা তলিয়ে যায় এবং ভাটার সময় পানি নেমে যায়,এরপর জেগে ওঠে এক ভয়ংকর ক্ষতির চিত্র । এই এলাকায় এ ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠা দুষ্কর। আমাদের আর কিছু বাকি রইল না। একেতো নদীভাঙনে নিঃস্ব এলাকার মানুষ। আবার বর্ষা মৌসুমে জলোচ্ছ্বাস হয় প্লাবিত। এখানে জন্মটাই বোধহয় পাপ।


আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে,রাঙ্গাবালীতে কয়েক গ্রাম প্লাবিত


আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিল, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. ওমর সানি। এ গল্প শুধু ওমর সানির একার নয়! ভিটে-বাড়ি,লক্ষ লক্ষ টাকার পুকুর-ঘেরের মাছ,জমির ফসল হারিয়েছেন উপজেলার চালিতাবুনিয়া, চরমোন্তাজ,মৌডুবী ইউনিয়নের বাসিন্দারাও।


বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় উপজেলা রাঙ্গাবালীতে  দুই দিনের টানা বৃষ্টি এবং অমাবস্যার প্রভাবে অস্বাভাবিকভাবে নদ-নদী পানি বৃদ্ধি পায়। এতে করে উপজেলার চালিতাবুনিয়া ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পরে ঘের বাড়ি-পুকুর তলিয়ে যায়। এছাড়াও চরমোন্তাজ ইউনিয়নের নয়ারচর এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রক বাঁধের বাহিরে বসবাস করা লোকজনের বাড়িঘর জোয়ারের পানিতে ভেসে যায়। পাশাপাশি উপজেলার ওইসব ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের বাহিরে থাকা মাছের ডুবে গিয়ে মাছ ভেসে যায়। ফলে মাছ চাষিদের চোখে-মুখে এখন শুধুই হতাশা।


জানা গেছে,গভীর নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক জোয়ার এবং টানা দুইদিনের ভারী বৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ডুবে গেছে হাজারো মৎস্য ঘের, পুকুর ও কৃষি জমি। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ভাসছে-ডুবছে হাজার হাজার মানুষ।


উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চতলাখালী গ্রামের ঘের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে আমার ঘের ডুবে গেছে। কিছু দিন আগেও মাছের পোনা ছেরেছি সব হয়তো ভাটার পানির সাথে চলে গেছে।


মৌডুবী ইউনিয়নের আশাবাড়িয়া এলাকার মৎস্য ঘের  মালিক মিন্টু সরদার বলেন, মৌডুবীর আশাবাড়িয়ার এই চরে আমারসহ প্রায় ৩০টির অধিক ঘের রয়েছে। সবগুলো ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে এতে প্রায় কোটি টাকার ওপরে আমাদের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। একই কথা জানালেন আরেক ঘেরের মালিক লিটু গাজী বলেন, অমাবস্যা ও গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে আমার ঘেরটি তলিয়ে গেছে। এতে করে আমাদের প্রায় কয়েক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।


উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গাবালীতে মাছ চাষিদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৩০০টি পুকুর এবং ৬৫০টি মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। এতে বিপুল পরিমাণ চাষের মাছ পানিতে ভেসে গেছে এতে চাষিদের প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।


আরও পড়ুন: রাঙ্গাবালীতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন


এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানা গেছে, আউশ ধানের ৮ হেক্টর বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সবজি ক্ষেতও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোট ২৬০ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে স্থানীয় কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছেন।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকবাল হাসান বলেন, গভীর নিম্নচাপ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে বাঁধ ভেঙে উপজেলার চালিতাবুনিয়া ও চরমোন্তাজ ইউনিয়নের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আমরা দুর্গতদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিরাপদে রাখতে পেরেছি এবং প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, আরও ত্রাণ সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব করে দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে।


এসডি/