দূর্নীতিবাজ সাব রেজিষ্ট্রারের বিদায়, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


দূর্নীতিবাজ সাব রেজিষ্ট্রারের বিদায়, এলাকায় মিষ্টি বিতরণ

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার দূর্নীতিবাজ মোঃ নুরুল আফসারকে বদলি করেছে আইন ও  বিচার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানা যায়। এ খবর নলছিটি বাসীর কাছে পৌছালে অনেকে  আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করে।

গত ২ বছর পূর্বে নলছিটি সাবরেজিস্ট্রী অফিসে যোগদান করে কিছু দালাল চক্র নিয়ে সেন্ডিকেট তৈরি করে সাব রেজিষ্ট্রার নুরুল আফসার। সেই সেন্ডিকেটের  মাধ্যমে ভুয়া দলিল সহ বাক প্রতিবন্ধির বে আইনি ভাবে দলিল রেজিষ্ট্রী করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সাব রেজিষ্ট্রার। তাহার দূর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় স্থানীয় এক সাংবাদিকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানীর চেষ্টা চালায়। ওই সাংবাদিক কোন উপায় না পেয়ে সাব রেজিষ্ট্রারে বিরুদ্ধে গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে নলছিটি থানায় ১১৬৫ নং সাধারণ ডাইরি করে। যা বর্তমানে তদন্তদিন। 

এর আগে সাব রেজিষ্ট্রার অনিয়মের বিরুদ্ধে ও অপসারণের দাবীতে মানবন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, সাব রেজিষ্ট্রারের যত অভিযোগ তিনি গত ১২/০৪/২০২১ তারিখে ২১ লক্ষ ৬৫ হাজারের মূল্যের  ৮৬.৫০( সাড়ে ছিয়াশি শতাংশ ) জমি প্রিজাইড গ্রীণ সিটি লিমিটেডে কোম্পানির অনুকুলে  ১৩০৩ নম্বর একটি জাল জলিয়াতির ভুয়া দলিল রেজিষ্ট্রি করেন। ওই দলিলে উল্লিখিত উপজেলার পূর্ব্বচর দপদপিয়া মৌজার ১৬১ ও ১৬৬ খতিয়ানের রেকর্ডিয় মালিক কাছেম আলী। কাছেম আলীর মৃত্যুতে ওয়ারিশসূত্রে জমির মালিক হন তার ছেলে আবদুর রশিদ ফকির। রশিদ ফকির মৃত্যু বরণ করলে তার সম্পত্তির কিছু অংশের ওয়ারিশ সুত্রে মালিক হয় সুমনা বেগম ও তার ভাই আল মামুন। কিন্তু ভুয়া ওয়ারিশ সার্টিফিকেট তৈরি করে মাহামুদ ফকির ও মিনারা বেগম নামে দুই ব্যক্তি ঐ সম্পত্তি জাল জালিয়াতি করে বিক্রি করেন। প্রকৃতপক্ষে তারা ওই জমির মালিকই নন। এ জাল-জালিয়াতির দলিলের বিরুদ্ধে মোকাম ঝালকাঠি আমলী আদালতে সি,আর  ১৩২/২০২১ নং  মামলা হয়। 

এছাড়াও আরো একটি ভুয়া দলিল গত ৩০  মে ২০২১ ইং তারিখে নলছিটি সাব-রেজিষ্ট্রী ১৪৬৪ নং সাব কবলা দলিল রেজিষ্ট্রী করেন সাব রেজিষ্ট্রার দলিলে নলছিটি উপজেলার পূর্ব্বচর দপদপিয়া মৌজার ১৬১ও ১৬৬ খতিয়ানের রেকর্ডিয়  মালিক মোক্তার আলির মৃত্যুতে ওয়ারিশ সুত্রে মালিক তার পুত্র  হাসমত আলী । হাসমত আলির প্রাপ্ত জমি -৯৫.৫০ (সাড়ে পচানব্বই শতাংশ) ভুয়া একজন বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করে  হাসমত ফকির নাম ব্যবহার করে ২৩ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকার একটি দলিল রেজিষ্ট্রী করা হয়  প্রিজাইড গ্রীন সিটি লিমিটেডের নামে। প্রকৃত জমির মালিকের নাম মোঃ হাসমত আলী পিতাঃ মৃত মোকতার আলী ফকির মাতাঃ মৃত মালেকা বেগম যার জন্ম তারিখ ০৭/০৪/১৯৪৫ ইং তারিখ হলেও ভুয়া জাতিয় পরিচয় পত্রে নাম ব্যবহার করে হাসমত ফকির, পিতা- মৃতঃ মোক্তার আলী, মাতা- মৃতঃ ফুলবানু, জন্ম তারিখ ০২/০১/১৯৭৫ দেখানো হয়, এতে আইডি নাম্বার সহ সব কিছুই  অমিল দৃশ্যমান থাকা স্বত্বেও  যাছাই বাছাই না করেই সাব রেজিষ্ট্রার দলিল রেজিষ্ট্রী সম্পাদন করে। গত ০৪-১২-২০১৭ তারিখে ৪১৬৯ নং ভূমিহীন বন্দোবস্ত দলিলের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলার ষাইটপাকিয় মৌজার ১৩০ ও ১৩১ দাগের সরকারি ১ একর খাস জমি ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দলিল প্রাপ্ত হয়ে মালিকহন রিজিয়া বেগম ও তার স্বামী আমির আলি মাঝি। 

বন্দোবস্তের দলিলের শর্তে ১৩ কলামে   উল্লেখ আছে যে, উক্ত সম্পত্তি গ্রহিতা ২ জনে ভোগ দখল করিতে পারিবে কিন্তু কোন ভাবেই কারো কাছে হস্তান্তর করিতে পারিবেনা। কিন্তু অসাধু সাব রেজিষ্ট্রার সরকারে শর্ত না মেনে  গত ১৯/০৯/২০২১ তারিখে ২৫০৫ নং দলিল রেজিষ্ট্রীর মাধ্যমে রিজিয়ার অংশ হতে ৫৬.২৫( সোয়া ছাপ্পান্ন  শতাংশ)  জমি মোঃ মোসলেম আলী মাঝীর অনুকুলে সম্পুর্ন বেয়াইনি ভাবে হেবা ঘোষনা দলিল রেজিষ্ট্রী করে দেন সাব-রেজিষ্ট্রার নুরুল আফসার। 

এছাড়া বাকপ্রতিবন্ধি নুর মোহাম্মদের উপজেলার উত্তর জুরকাঠি ও জুরকাঠি মৌজার ২ একর ৭৩ শতাংশ পৈত্রিক সম্পত্তি গত ৩০-১১-২০২০ তারিখে নলছিটি সাব রেজিষ্ট্রী অফিসে  আবদুল করিম হাওলাদারে নামে সম্পূর্ন বেআইনি ভাবে ৩০৭৯ নং একটি দলিল রেজিষ্ট্রী সম্পাদন করে দেন। যাহা পরবর্তিতে ৯নং দপদপিয়া ইউনিয়ন পরিষদে বাকপ্রতিবন্ধি নুর মোহাম্মদের বোন মমতাজ বেগম বাদী হয়ে গ্রাম্য আদালতে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। সাব রেজিষ্ট্রারের দূর্নীতির বিরুদ্ধে ও অপসরণের দাবীতে গত ৩ নভেম্বর মানববন্ধন এলাকাবাসী। 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগে গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে নলছিটি সাব রেজিষ্ট্রী অফিসে তার অনিয়মের সন্ধানে তদান্ত কমিটি তদান্ত করতে আসে তদন্ত কর্মকর্তা সেলিম ভূইয়ার। সাব রেজিষ্ট্রারে বিরুদ্ধে  ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক, জেলা রেজিষ্ট্রার ও  মহা পরিদর্শক নিবন্ধন অধিদপ্তর, আইন মন্ত্রণালয় ও দূর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ রয়েছে নুরুল আফসারের বিরুদ্ধে। এরই পরিপেক্ষিতে প্রাথমিক পর্যায় তাকে বদলি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এসএ/