অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে কলেজে ভর্তির অভিযোগ
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন, ১৪ই ডিসেম্বর ২০২২
পঞ্চগড় সদর উপজেলায় দাখিল পাস করা শিক্ষার্থীরা যাতে অন্যত্র ভর্তি না হতে পারে এজন্য একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য গোপনে অনলাইনে আবেদনের অভিযোগ উঠেছে মোজাম্মেল হক নামে এক মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এতে করে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো কলেজে ভর্তি হতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও তাদের প্রশংসাপত্র পাচ্ছেন না। উল্টো শিক্ষার্থীদের সাথে অশালীন আচরণ করছেন অধ্যক্ষ।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলিম মাদ্রাসায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন দাখিল পাস করা মাদ্রাসাটির সবাই। উপায় না পেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সদর উপজেলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলিম মাদ্রাসা থেকে ৩২ জন শিক্ষার্থী এবারের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে ২৯ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। এদিকে গত ৮ ডিসেম্বর থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হলে ওই দিনই শিক্ষার্থীরা স্থানীয় কম্পিউটারের দোকানে আবেদন করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। কারণ আবেদন প্রক্রিয়ায় তাদের আবেদন পেমেন্ট দেখানো হচ্ছে। ওই দিনই শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কক্ষে প্রশংসাপত্র এবং মার্কসিট তুলতে যান। এ সময় অধ্যক্ষ জানান, শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য কোনো আবেদন করতে হবে না। এই কলেজেই ভর্তি হতে হবে।
শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষকে জানান, আমাদের ফলাফল ভাল হয়েছে। আমরা পছন্দমতো কলেজে ভর্তি হব। তাছাড়া আমাদের না জানিয়ে কেন অনলাইনে আবেদন করলেন।
এ সময় উত্তেজিত হয়ে অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক মোয়াজ্জেম আলী নামে এক শিক্ষার্থীকে গলা ধাক্কা দিয়ে কক্ষ হতে বের করে দেন। উচ্চস্বরে মোজাম্মেল হক বলেন, যদি তোমরা অন্য কলেজে ভর্তি হতে চাও তাহলে সবাইকে পাঁচ হাজার টাকা মাদ্রাসায় জমা দিয়ে প্রশংসাপত্র নিতে হবে। তবে কেন টাকা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে তিনি বলেন এখান থেকে পাস করেছ, এজন্য দিতে হবে। পরবর্তীতে উপায় না পেয়ে ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয় শিক্ষার্থীরা।
উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থী ফরমান আলী জানান, দাখিল পরীক্ষায় আমরা ভাল রেজাল্ট করেছি। কিন্তু আমরা বর্তমানে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছি। কারণ আমাদের অধ্যক্ষের কারণে আমরা ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারছি না। আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছেন অধ্যক্ষ।
আরেক শিক্ষার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আমরা পঞ্চগড় জেলার উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হতে চাই। কিন্ত অধ্যক্ষ আমাদের বাধা দিচ্ছেন। আমাদের না জানিয়ে গোপনে কেন অনলাইনে ভর্তির আবেদন করবেন? আমরা বিচার চাই।
জানতে চাইলে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রমানিক জানান, শিক্ষার্থীদের সাথে এ ধরনের আচরণ করার অধিকার মাদ্রাসা অধ্যক্ষের নেই। কোনো ছাত্র দাখিল পাস করার পর একাদশ শ্রেণিতে তার পছন্দমতো কলেজ বা আলিম মাদ্রাসায় ভর্তি হতে পারবে, এটা তার অধিকার। তবে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের সাথে কথা বলেছি। তিনি আমার অফিসে এসে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুল হক জানান, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।