বারোমাসিয়া'য় দুঃখ বারো মাস
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে নাওডাংগার বারোমাসিয়া নদীর ইন্তুর ঘাটের বাঁশের সাঁকোটি। ভাঙ্গা চোরা এই সাঁকো দিয়ে ঝূঁকিপূর্ণ পারাপারে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সাঁকো থেকে নিচে পড়ে হাত-পা ভাঙ্গারও নজির আছে অনেক। এছাড়াও নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের পারাপার হতে দুর্ভোগের শেষ নেই। স্থানীয়দের দাবি, যুগের পর যুগ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে আসছে। এখানে একটি সেতু নির্মাণ হলে পারাপারের দূর্ভোগ থেকে রেহাই মিলবে দশ গ্রামের প্রায় ৩০ সহস্রাধিক মানুষের।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দুই পারের প্রায় ৩০ সহস্রাধিক মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। পশ্চিম পাড়ের ঝাউকুঠি, ঝামাকুঠি, পশ্চিম ফুলমতি, গোরকমন্ডল, চর গোরকমন্ডল, কান্দাপাড়া সহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দা হাট-বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ অফিস আদালতে যাতায়াত এ পথে।
পশ্চিম ফুলমতি গ্রামের মীর হোসেন (৪২) বলেন, এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখানে কৃষিপণ্য ও অন্যান্য মালামাল সরবরাহ করা দুষ্কর। অসুস্থ রোগী হাসপাতালে নিতেও স্বজনরা বিড়ম্বনায় পড়েন। জরুরী কলে ডাক্তাররাও এখানে আসতে চায় না। সেতু না থাকায় আমাদের কষ্টের শেষ নাই। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে সেতুর দাবি করে। সেতু নির্মাণ হলেই আমাদের ভাগ্য বদলে যাবে।
পার্শ্ববর্তী গ্রামের মনিহার বিক্রেতা শ্রী নগেন চন্দ্র বলেন, জীবিকার তাগিদে প্রতি সপ্তাহে ২/৩ দিন এই সাঁকো পারাপার হতে হয় তাকে। দুই চারজন একসঙ্গে পার হলেই সাঁকো দোলে। মনের মধ্যে আতঙ্ক জাগলেও বাধ্যহয়ে পারাপার হতে হয়। সাঁকো সংলগ্ন বাড়ির যুবক উজ্জ্বল আলী বলেন, লোকজন সাইকেল, মোটরসাইকেল সহ নিচে পড়া ও ছোট বড় দূর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। বৃদ্ধ লোকজন তো একা পারাপার হতেই পারে না। কেউ হাত ধরে পার করতে হয়।
সাঁকোর পশ্চিম পাড়ের বাসিন্দা ও অনার্স পড়ুয়া দেলোয়ার হোসেন, নাওডাংগা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ শ্রেণীর আলমগীর হোসেন, দশম শ্রেণির নুর মোহাম্মদ মিয়া, ষষ্ঠ শ্রেণির আরিফুল ইসলাম, সাগর ইসলাম, সবুজ মিয়া সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শত শত শিক্ষার্থীর এ সাঁকো পারাপারে নানান সমস্যার সম্মুখীন হন। বন্যায় সাঁকো ভেঙ্গে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সাঁকোর বিকল্প পথ দুর্গম ও দূরত্ব বেশি হওয়ায় অনেকে সময়মতো পৌঁছাতে পারে না। এখানে সেতু নির্মাণ হলে আমাদের অনেক কষ্ট লাঘব হবে।
ঘাটের ইজারাদার শাহজামাল শেখ বলেন, তিনি ইউনিয়ন পরিষদ হতে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে এই ঘাট ইজারা নেন। একসময় সবাই নৌকায় পারাপার হতো। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। তবে ইজারা নিলেও ঘাটে বসে টাকা উত্তোলন করেন না তিনি। এলাকার সবাই উন্মুক্ত যাতায়াত করে বার্ষিক হালখাতায় ধান, চাল, টাকা পয়সা দেন। প্রতিবছরের উত্তোলিত অর্থ সাঁকো মেরামতে ব্যয় হয়। অতিরিক্ত লোকজন চলাচলের কারনে কয়েকদিনেই সাঁকো নড়বড়ে হয়ে যায়। ফলে কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে পারাপার। সরকার এখানে সেতু দিলে সকল দুর্দশার অবসান ঘটবে।
নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান হাছেন আলী জনবাণীকে বলেন, বন্যায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে শিশু ও বৃদ্ধদের ভোগান্তি বাড়ে। কয়েক বছর আগে একটা প্রাইমারির স্কুলের বাচ্চা সাঁকো থেকে পানিতে পড়ে মারাও গেছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার ফলে ওই পারের চরাঞ্চলের বাসিন্দারা অবহেলিত। তাদের জীবন মান উন্নয়নে সেতু নির্মাণ খুবই জরুরী। সেতু বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমি তীব্র চেষ্টা চালাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমি নাওডাংগাকে উন্নয়ন বান্ধব একটি মডেল ইউনিয়ন গড়তে অঙ্গীকারবদ্ধ। সারাদেশে যে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, এখানে সে ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করবো।
উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল রাজীব জনবাণীকে জানান, ইন্তুর ঘাটের পাকা সড়ক নির্মাণ সহ ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণের আবেদন করা হয়েছে। পাশ হয়ে আসলেই কাজ হবে।
এসএ/