সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ শুরু, আগ্রহ বাড়ছে তরুণদের


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ শুরু, আগ্রহ বাড়ছে তরুণদের

মাশরুমে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কাঁচা অবস্থায় মাশরুমে পুচুর "ভিটামিন বি" পাওয়া যায়। মাশরুম দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার। এ সবের কারনে মাশরুম দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মানুষের কাছে। গুড়া মাশরুম সহ বিভিন্ন ভাবে সংরক্ষণ করে শহরের ছোট বড় সুপার শপ গুলোতে বিক্রয় হচ্ছে । বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষে আগ্রহ বাড়ছে তরুণদেরো। 

২০১৮ সালে সাতক্ষীরার সদর উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিসে চাকরীর সুবাদে কাঁঠালতলা গ্রামের হত-দরিদ্র কৃষক আব্দুল হাকিম সানার ছেলে মো.সাদ্দাম হোসেনের পরিচয় হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। তার পরার্মশ ও সহযোগিতায় মাশরুম চাষের উপরে প্রশিক্ষন নিয়ে ছোট পরিসরে শুরু করেন মাশরুম চাষ। সাদ্দামের খামারে মাশরুম উৎপাদন শুরু হলে অনলাইনে সহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রয়ের জন্য প্রচার করেন। সেখানে ভালো সাড়া পেয়ে আর পিছনে ফিরতে হয়নি সাদ্দামকে। সাতক্ষীরায় মাশরুম উদ্যোক্তা হিসাবে মানুষের কাছে পরিচিত লাভ করেছেন তিনি। সাতক্ষীরা শহরে কসমিক মাশরুম ক্যাফেটেরিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এবং সেখানে বিক্রয় করছে মাশরুমের চপ, সিংড়া, খিচুড়ি, চাওমিন , নুডলস, কফিসহ নানা রকমের মুখরুচি খাবার। সাদ্দামের দেখে অনেক শিক্ষার্থী এ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।



মাশরুম চাষী সাদ্দাম হোসেন জানান, সাতক্ষীরা মানুষের কাছে পরিচিত করতে অনেক কষ্ট হয়ছে। অল্প খরচে মাশরুম চাষ করা যায়। আমি প্রথমে ৪ হাজার টাকা দিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেছিলাম। এখন বর্তমানে আমার প্রজেক্টটি ১ বিঘা জমির উপরে। এখন প্রতি মাসে ১ থেকে ঢেড় লাখ টাকার বেশি উপার্জন করি। আমার এখানে ৫ জন শ্রমিকের কাজের সুযোগ হয়েছে। আমার থেকে অনেক বেকার যুবক প্রশিক্ষন নিয়ে চাষ শুরু করেছে। আমি কিছুদিন আগে একটা কাসমিক মাশরুম ক্যাফটেরিয়া তৈরি করেছি।

কাসমিক মাশরুম ক্যাফটেরিয়া মাশরুমের চপ খেতে আসা রতন রায় জানায়, ব্যাঙের ছাতার মত দেখা যাওয়ায় এটি অনেকে শখ করে খায়না। আমারও প্রথম দিকে ভালো লাগতো না। তবে প্রথমে খেয়ে দেখি খুব সুস্বাদু, সেখান থেকে মাশরুম খাওয়ার প্রতি একটা ভক্তি চলে আসলো।
নগরঘাটা গ্রামের আঞ্জানা সরকার বলেন, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে মাস্টার্সে লেখাপড়া চলাকালীন সময়ে অনলাইনে মাধ্যমে মাশরুম চাষ সম্পর্কে জেনে  ৪ হাজার টাকায় ১০০ প্যাকেট মাশরুম দিয়ে চাষ শুরু করি । একমাস পরিচর্যা শেষে মাশরুম বিক্রয় উপযোগী হয়ে ওঠে। সেখান থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করি।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্র আব্দুল করিম জানান, ১৩ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করে ২৫-৩০ হাজার টাকা ইনকাম করেছি। বর্তমানে আরও বড় পরিসরে চাষ করার জন্য ঘর তৈরি করেছি।

কুখরালী গ্রামের রাজিব আহমেদ জানান, গরুর খামারে লস হওয়ায় ফেলানো খামারকে কাজে লাগিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছি প্রিন্স মাসরুম সেন্টার। ৮ লক্ষ টাকা খরচ করে ১২ হাজার প্যাকেট মাশরুম তুলেছি ফলন আসার সময় হয়েছে। আশা করি এখান থেকে দৈনিক ৫ শত -১ হাজার কেজি মাশরুম উৎপাদন হবে। এ মাশরুম বিদেশে রপ্তানির জন্য আমরা চেষ্টা করছি।


সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জনবাণীকে জানান, বাংলাদেশের দক্ষিণের সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৫০-৬০ জন লোক পারিবারিক ভাবে মাশরুম উৎপাদন করছে। এদের মধ্যে আবার ২-৫ জন লোক বানিজ্যিক ভাবে চাষ করছে। এটি একটি পুষ্টিকর সবজি। আমাদের পবিত্র গ্রহন্থ "আল-কোরআন" এ  মহাঔষধ নামে উল্লেখ করা আছে। মাশরুম সেবনে ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ প্রায় ৩০-৩৫ ধরনের রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করে।রেস্তোরা গুলোতে মাশরুম ব্যবহার করে বিভিন্ন মুখরোচক ও সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হচ্ছে।  শুধুমাত্র কৃষকরা চাষ করে লাভবান হচ্ছে এমনটি নয়। তরুণ-তরুণীরা পড়ালেখার পাশাপাশি মাশরুম উৎপাদন করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে।

এসএ/