ডাকাত সন্দেহে শ্যালক-দুলাভাইকে পিটিয়ে হত্যা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০:৪৩ অপরাহ্ন, ১৪ই জানুয়ারী ২০২৩


ডাকাত সন্দেহে শ্যালক-দুলাভাইকে পিটিয়ে হত্যা
পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে

মাইকে ডাকাত ঘোষণা দিয়ে কুমিল্লার মুরাদনগরে বৃহস্পতিবার রাতে শ্যালক ইসমাইল হোসেন (৩০) ও দুলাভাই নুরে আলমকে (৩৫) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। 


বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) গভীর রাতে উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইসমাইল হোসেন পালাসুতা গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ও নিহত নূরে আলম পাশের কাজিয়াতল গ্রামের আবদুস ছালামের ছেলে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।


এ ঘটনায় শাহজাহান মিয়া (৩২) নামে আরো একজন মারাত্মক আহত হয়েছেন। তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোটবাড়ী বাঘমারা এলাকার সেলিম মিয়ার ছেলে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবদেন লেখা পর্যন্ত পুলিশ উক্ত ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। তবে একটি চক্র প্রকৃত ঘটনাটি আড়াল করে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


নিহত নুরে আলমের পরিবারের দাবি, নুরে আলম কুমিল্লা শহরে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বৃহস্পতিবার তিনি কাজিয়াতল গ্রামের বাড়িতে আসেন। ওইদিন রাতে তিনি তাঁর বন্ধু কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোটবাড়ী বাঘমারা এলাকার বাসিন্দা সেলিম মিয়ার ছেলে শাহজাহান মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে পাশের পালাসুতা গ্রামের হাশেম মেম্বারের বাড়িতে তার শশুরালয়ে যান। এ সময় তার সঙ্গে শশুর বাড়ির চাচাত শ্যালক ইসমাইলও ছিলেন। সে বাড়ীই নিহত নুরে আলমের শশুর বাড়ি। এ সময় সে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে পূর্ব বিরোধের জের ধরে ওই এলাকার কিছু লোক ও তার শশুর পরিবারের সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই তিনজনকে বেদম লাঠিপেটা করে। পরে তাঁদের ফেলে রেখে ‘ডাকাতদের গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে’ বলে গ্রামে অনুষ্ঠিত এক ওয়াজ মাহফিলের মাইকে প্রচার করা হয়।


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে উপজেলার পালাসুতা, লক্ষ্মীপুর, বোরারচর, নেয়ামতকান্দি, মেলামচর ও কাজিয়াতল গ্রামে চুরি–-ডাকাতি বেড়ে গেছে এমন সংবাদ প্রচার করে আসছিলো একটি চক্র। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ ছিলেন। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পালাসুতা গ্রামের মসজিদের পাশে মাহফিল চলছিল। হঠাৎ খবর আসে গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে। তখন মসজিদের ও মাহফিলের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নিয়ে পালাসুতা গ্রামের জামাই ও একই গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইলসহ তিনজন যুবককে গ্রামের কয়েকজন শশুরের ঘর থেকে ধরে নিয়ে পিটুনি দেন। এতে ঘটনাস্থলেই শশুর বাড়ির জামাতা নুরে আলম ও চাচাত শ্যালক ইসমাইল হোসেন মারা যান।


শুক্রবার সন্ধ্যায় কাজিয়াতল গ্রামের নিহত নুরে আলমের বাবা আবদুস ছালাম বলেন, আমার ছেলে নুরে আলম আমাদের একই ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামের হাশেম মেম্বারের বাড়ির নায়েব আলীর মেয়ে হালিমা বেগমের সঙ্গে ১৫ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের আবুবকর নামে ৯ বছরের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে শশুর পরিবারের সাথে মান অভিমান ছিল। সে বিরোধ মোটাতে নুরে আলম (আমার ছেলে) তার এক বন্ধুকে নিয়ে শশুর বাড়িতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকেসহ তার এক চাচাত শ্যালককে পিটিয়ে হত্যা করে ডাকাত বলে প্রচার করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই আর এ জন্য আমি অসুস্থ থাকায় ছেলে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য আমার স্ত্রী জাহানারা বেগমকে থানায় পাঠিয়েছি।


মুরাদনগর থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, এ বিষয়ে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। নিহত ও আহতদের পরিচয় সর্ম্পকে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। ঘটনাটি গভীর ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিহত নুরে আলমের শশুর বাড়ী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে দুই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। কেহই সুনির্দিষ্ট ভাবে নিহত ও আহতদেরকে কোথায় ও কার বাড়িতে ডাকাতি বা ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তার কোন সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। তাদের অতীত কর্মকান্ড যাচাই করা হচ্ছে। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আকাশ/