সীমান্তের শূন্য রেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোলাগুলিতে নিহত ১
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, ১৯শে জানুয়ারী ২০২৩
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ার শূণ্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘মিয়ানমারের সশস্ত্র দুই গ্রুপের’ মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় এ পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়ে এক রোহিঙ্গার মৃত্যু ও একজন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুর ২ টা ৪০ মিনিটের সময় উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, সকালের কোন এক সময় সীমান্তের শূণ্য রেখা ক্যাম্পে গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ এক রোহিঙ্গা আহতাবস্থায় কুতুপালংস্থ এমএসএফ হাসপাতালে আনা হলে ওখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া করছে। একই সঙ্গে গুলিবিদ্ধ আহত একজন রোহিঙ্গাকেও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
নিহতের নাম হামিদ উল্লাহ (২৭) এবং গুলিবিদ্ধ মুহিব উল্লাহ (২৫) বলে ওসি জেনেছেন। বিস্তারিত পরিচয় নেয়ার চেষ্টা চলছে।
নিহত ও আহতের গায়ে বিশেষ রঙের পোষাক রয়েছে। এরা মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠির বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুতুপালং ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএন ১৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, শূণ্যরেখায় গোলাগুলির পর গুলিবিদ্ধ ২ জনকে এমএসএফ হাসপাতালে আনা হলে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যজনকে আশংকাজনক অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে পর্যাবেক্ষণ করছেন তারা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আশেকুর রহমান জানিয়েছেন, বিকাল সাড়ে ৫ টায় নিহত হামিদ উল্লাহর মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পৌঁছে। একই সঙ্গে আনা হয়েছে গুলিবিদ্ধ মুহিব উল্লাহকে। তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধিন রয়েছে। মুহিব উল্লাহর পিতা দিলদার আহমদ এবং তিনি জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, বিকাল ৫ টার দিকে তমব্রæ শূণ্য রেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘরে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আগুন জ্বলছে। ওই ক্যাম্পে আশ্রয়রত রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলে গেছেন। গোলাগুলি শব্দ আগের চেয়ে বেড়েছে। স্থানীয়রা চরম আতংকে রয়েছে।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৬ টার পর থেকে শূন্যরেখা রেহিঙ্গা ক্যাম্পে এ গোলাগুলি শুরু হয় বলে জানিয়েছেন, শূণ্য রেখার ক্যাম্পে বসবাসকারি রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ।
দিল মোহাম্মদ বলেন, “সকালে মিয়ানমারের সশস্ত্রগ্রæপ রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সশস্ত্র গোষ্ঠি সদস্যরা নাইক্ষ্যংছড়ির কোনারপাড়া শূণ্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এসে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে। পরে তা শূণ্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও ছড়িয়ে পড়ে।”
রোহিঙ্গাদের কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, “বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অব্যাহত এ গোলাগুলির ঘটনায় শূণ্যরেখায় বসবাসকারি রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। অনেকে আশ্রয়শিবিরের ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। এতে তারা নানা সংকটে ভূগছেন।”
বিষয়টি নিয়ে ফোনে বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেছেন, সকাল থেকে তমব্রæ সীমান্তের শূণ্যরেখায় থেমে থেমে গোলাগুলির খবর স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছেন। তা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ইউএনও বলেন, " ঘটনাটি যেহেতু শূণ্যরেখায় সেখানে আন্তর্জাতিক রীতি মতে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। তারপরও সীমান্তের উদ্ভুদ পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রশাসন এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছে। "
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টায় কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তে ধমনখালী সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়ে ছিলেন, ৫ টা ৪০ মিনিট থেকে আধা ঘন্টাব্যাপী এই গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য ঘটনাস্থলে ছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরী প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, বালুখালী বিওপি হতে আনুমানিক ১.৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে এবং সীমান্ত পিলার-২০ হতে আনুমানিক ৮০০ গজ উত্তর-পূর্ব কোনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রহমতের বিল হাজীর বাড়ী নামক এলাকায় কতিপয় ইয়াবা ব্যাসায়ী কর্তৃক ইয়াবা চোরাচালানির সময় গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে বালুখালী বিওপির একটি বিশেষ টহল দল অভিযান পরিচালনা করে। বিজিবি টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বিজিবি টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলি করে। বিজিবি টহল দল তাদের জান মাল ও সরকারী সম্পদ রক্ষার্থে কৌশলগত অবস্থানে থেকে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি করলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এতে বিজিবি টহলদলের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কোন সদস্য হতাহত হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। ঘটনার পর থেকে সকল বিওপি সমুহ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি টহল এবং গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
আরএক্স/