রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি শান্ত হলেও কাটেনি আতংক
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:১৯ পূর্বাহ্ন, ২০শে জানুয়ারী ২০২৩
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ার শূণ্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি বুধবার মধ্যরাত থেকে শান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বেলা ১২ টার দিকে ইউএনও জানান, মধ্যরাত থেকে গোলাগুলির আর কোন শব্দ শুনা যায়নি। ফলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া যায়। শূণ্যরেখায় আন্তর্জাতিক রীতি মতে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ করার এখতিয়ার নেই। ফলে ওখানে প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে এখনও স্বচ্ছ ধারনা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যতটুকু দেখা যাচ্ছে বুধবার দেয়া আগুনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পটির ৭০/৮০ টি ঘর ছাড়া অন্যান্যগুলো পুঁড়ে গেছে।
২০১৭ সালের আগস্টে ব্যাপক সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। যার মধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩৩ টি ক্যাম্পে অবস্থান নিলেও কিছু রোহিঙ্গা শূণ্যরেখার ক্যাম্পটিতে বসবাস করতেন। যে ক্যাম্পটিতে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়, আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা সহায়তা না করলেও আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট কমিটি (আইসিআরসি) সহায়তা করে আসছিল। আইসিআরসির তথ্য মতে, শূণ্য রেখার ক্যাম্পটিতে ৬৩০ টি ঘরে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করতো।
বৃহস্পতিবার পাওয়া তথ্য মতে, বুধবারের আগুনে ক্যাম্পটির ৫ শতাধিক ঘর পুঁড়ে গেছে। নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও রোমেন শর্মা জানিয়েছেন, ঘটনার পর কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা শূন্য রেখা থেকে অনুপ্রবেশ করেছে। যাদের ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। ওখানে মোট কত জন রোহিঙ্গা রয়েছে এটা নিশ্চিত নন তিনি। তবে এসব রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সরকারের উর্ধ্বতন মহলের সাথে আলাপ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে এদের শূন্য রেখায় ফেরত পাঠানো হতে পারে।
এখনও কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা শূন্য রেখায় অবস্থান করলেও বেশিভাগ মিয়ানমারে অভ্যন্তরে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও, সীমান্তের উদ্ভুদ পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রশাসন এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছে। "
এ ঘটনায় এমএসএফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য মতে একজন নিহত আর ২ জন আহত ছাড়া আর কোন হতাহতের তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন, উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী।
তিনি জানিয়েছেন, হামিদ উল্লাহ (২৭) নামের নিহত রোহিঙ্গার মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। গুলিবিদ্ধ মুহিব উল্লাহ (২৫) আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। আহত অপর শিশু এখনও কুতুপালংস্থ এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন।
পরিস্থিতি শান্ত হলে সীমান্ত এলাকার মানুষ এখনও চরম আতংকে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি জানান, শূণ্য রেখা নিয়ে এখন সাধারণ মানুষ চরম আতংকিত। ঘটনার আশে-পাশেও কেউ যাচ্ছে না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল ৬ টার পর থেকে শূন্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘মিয়ানমারের সশস্ত্র দুইগ্রুপের’ মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা শুরু হয়।
মিয়ানমারের সশস্ত্রগ্রুপ রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সশস্ত্র গোষ্ঠি সদস্যদের এই সংঘর্ষ চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।
বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত বিজিবির কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরএক্স/