অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া রফিকুল বই পড়ে বানাত ব্রিটিশ কয়েন
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ২০২৩
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের অভিযানে মহানগর ও আন্তঃ জেলা প্রতারক চক্র ও অজ্ঞান পার্টির ০৩ সদস্য গ্রফতার পূর্বক তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কথিত ১৮৩৯ সালের ব্রিটিশ আমলের মূল্যবান ভূয়া কয়েন ও কয়েন তৈরীর সরঞ্জামাদি এবং চেতনানাশক রাসায়নিক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রতারক চক্রের মূলহোতা রফিকুল ইসলাম (৫৫) গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও বিজ্ঞান বিভাগের বই পড়ার প্রতি তার ছিল বিশেষ ঝোঁক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ব্রিটিশ আমলের কয়েনের বিশেষ চাহিদার কথা জানতে পেরে তার ঘরেই একটি মিনি ল্যাব তৈরী করে একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণির একটি পুরাতন রসায়ন বই পড়ে বিভিন্ন রাসায়নিকের মিশ্রণ তৈরীর মাধ্যমে তার হাতে তৈরী কয়েন গুলোকে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন করে তুলে প্রতারণা করতো।
তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন জাহাজে রং করার কাজে লিপ্ত থাকায় রং সম্পর্কে তার ছিল বিশেষ ধারণা। সেটাকে কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন মিশ্রণ মিশিয়ে রং এর মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা সৃষ্টি করতেন। যা তিনি ১৮৩৯ সালেট ব্রিটিশ আমলের মূল্যবান কয়েন বলে সর্বনিন্ম ১ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দাম হাকিয়ে বিক্রি করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিত।
এই কয়েন বিক্রি করতে তাকে সহায়তা করতো তার একাধিক সহযোগী, যারা ঘুরে ঘুরে বিত্তশালী ও লোভী মানুষদের টার্গেট করে এই কয়েনের গুনাগুন সম্পর্কে জানাত। তার মতে, কেউ যদি প্রতারণা জালিয়াতির কথা বুঝে ফেলতো তাহলে তাকে কৌশলে নির্জন স্থানে এনে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করে ভুক্তভোগীকে নির্জনস্থানে ফেলে আসতো তারা।
এছাড়াও যাত্রী সেজে পরিবহনে উঠে সাধারণ যাত্রীদের অজ্ঞান করে লুট করার কথাও জানান তিনি। গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) নগরীর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের একটি সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর-দক্ষিন) বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে একটি চৌকস আভিযানিক টিম (ডিবি উত্তর বিভাগের টিম নং- ৩৪) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার আনুমানিক ১১ ঘটিকার সময় নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন বিবিরহাট, কাঁচাবাজার, ১ নং গলি, আব্দুল করিমের বাড়ির নীচ তলায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্র এবং অজ্ঞান পার্টির মূল হোতা ১/ রফিকুল ইসলাম (৫৫) পিতা- মৃত আবদুল করিম, মাতা- মৃত শুকুর জাহান, সাং- বিবিরহাট, কাঁচাবাজার, ১ নং গলি, হোল্ডিং নং- ১৮৩২, থানা- পাঁচলাইশ, জেলা- চট্টগ্রামসহ তার অপর দুই সহযোগী ২/ শাহেদ আহম্মদ খান (৪৪), পিতা- মৃত আলাউদ্দিন খান, মাতা- করিমা খানম, সাং- দাড়ীপাতন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভা, ওয়ার্ড নং-৫, আলাউদ্দিন মিয়ার বাড়ী, থানা- গোলাপগঞ্জ, জেলা- সিলেট। ৩/ মোহাম্মদ আলমগীর (৩৭), পিতা- মোঃ চাঁন মিয়া, মাতা- ছরা খাতুন, সাং- দক্ষিন রহমত নগর, ৪ নং মুরাদপুর, ওয়ার্ড নং- ৯, থানা- সীতাকুণ্ড, জেলা- চট্টগ্রাম, বর্তমানে- বখতিয়ারের ভাড়া বাসা, বটতল মাজার গেইট, আল আমিন মসজিদের পার্শ্বে, থানা- বায়েজিদ বোস্তামী, জেলা- চট্টগ্রামকে আটক করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কথিত ১৮৩৯ সালের ব্রিটিশ আমলের নকল কয়েন ও সিরামিকের ভূয়া কয়েন, কয়েন তৈরীর ডাইস, মনোগ্রাম, তামা, পটাশিয়াম ক্লোরেড, হাইড্রোজেন সালফার এসিড, হাইড্রোক্লোরিন এসিড, সালফাইড্রিক এসিড, ইথিনিল, সালফার মনোক্লোরাইড, কস্টিক সোডা, কপার সারফাইড, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কথিত পুরাতন ব্রিটিশ কয়েন তৈরীর ডাইস, কথিত একাধিক ব্রিটিশ নকল পয়সা, পোড়া মাটি, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনির একটি রসায়ন বইসহ চেতনানাশক দ্রব্য তৈরীর কাজে ব্যবহৃত ক্লোরফর্ম উদ্ধার করা হয়।
ডিবি জানায়, ধৃত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন যাবৎ পরস্পর যোগসাজশে সাধারন লোকজনের প্রাচীন মুদ্রার কয়েনে নির্দিষ্ট সময় চিনি তা গলিয়ে বিশ্বাস অর্জন করে বোকা বানিয়ে প্রতিটি কয়েন ১ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে প্রতারণার মাধ্যমে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়।
বর্নিত প্রতারণার পাশাপাশি বিভিন্ন সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টিকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রনের মাধ্যমে চেতনানাশক রাসায়নিক দ্রব্য তৈরী করে সরবরাহ এবং বিক্রয় করে। অতঃপর উক্ত চেতনানাশক রাসায়নিক মিশ্রণ রুমাল, তোয়ালের সহিত মিশ্রিত করে বাস, ট্রেন, সিএনজিসহ বিভিন্ন যানবাহনে থাকা যাত্রীদের উপর প্রয়োগ করে অজ্ঞান করে ফেলে রেখে সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যায়। আসামীদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অজ্ঞান পার্টির অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে। আসামীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তারা।
এদিকে একই সংবাদ সম্মেলনে, মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) রিপন কুমার দাস এর নেতৃত্বে বিশেষ টিমের সদস্যদের অভিযানে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন মৌলভী পুকুরপাড়স্থ মা ব্যাটারী হাউস নামক দোকান থেকে অভিযানে ১৫টি চোরাই মোবাইল উদ্ধারসহ চোরাই মোবাইল ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত ১/ মিনহাজুল ইসলাম (৩২), পিতা- মৃত আবদুল কাশেম, মাতা- রোকেয়া বেগম, সাং- বিশ্বনাথ পুর, কানসাট ফাঁসিতলা কাশেম হাউস, ওয়ার্ড নং-০৪, ০৬ নং কানসাট ইউপি, থানা- শিবগঞ্জ, জেলা- চাপাই নবাবগঞ্জ, বর্তমানে- মৌলভী পুকুরপাড়, মৌলভী বাড়ি, আবদুল সবুর এর বিল্ডিং এর নীচতলা, থানা- চান্দগাঁও, জেলা- চট্টগ্রাম এবং ২/ মো. জয়নাল আবেদীন (৩৮), পিতা- আবদুল সবুর, মাতা- রেহানা বেগম, সাং- মৌলভী পুকুর পাড়, আবদুল সবুরের বিল্ডিং, থানা- চান্দগাঁও, জেলা- চট্টগ্রামকে আটক করার তথ্য জানান।
আরএক্স/