দীর্ঘ এক দশক পর সড়কের সংস্কার কাজ শুরু


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:০০ পূর্বাহ্ন, ৯ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩


দীর্ঘ এক দশক পর সড়কের সংস্কার কাজ শুরু
দীর্ঘ এক দশক পর সড়কের সংস্কার কাজ শুরু

একশ পঞ্চান্ন বছরের পুরনো ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা। দীর্ঘ এক দশক পর নিজস্ব অর্থায়নে নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘবে সড়ক সংস্কার শুরু করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার তথ্যানুযায়ী বিশ বর্গ কিলোমিটার শহরের ২৩৭ কিলোমিটার পাকা ও কাঁচা সড়ক রয়েছে। এর মাঝে এক কিলোমিটার সড়কও ভালো নেই। ফলে পৌরবাসী যাতায়াতে ভোগান্তি দীর্ঘতর হয়েছে। 


পৌর শহরে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক নাগরিকের বসবাস থাকলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চিকিৎসা, কোর্ট কাচারীসহ নানান কাজে আগত নাগরিক সব মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত রয়েছে। 


সড়কের বেহাল দশায় মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে মনে। জেলার বাহির থেকে অতিথিদের আগমনেও শহরের প্রতি তাদের দৃষ্টি থাকে অসহনীয় ও অমার্জনীয়। শহরবাসীর অভিযোগ পৌর মেয়র ও কাউন্সিলদের জবাবদিহিতার আওতায় না রাখা ও  তাদের হেয়ালিপনা এবং বিভিন্ন অনিয়মের কারণে পৌরসভার সড়কগুলো বেহাল অবস্থায় রয়েছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীসহ নানা রকমের মানুষের যাতায়াতে ভাঙ্গা সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় অসংখ্য দুর্ঘটনা। এসব সড়কে যাতায়াতে পায়ে চালিত রিকশা ব্যবহার বন্ধ রয়েছে আরো অর্ধযুগ আগে থেকেই। এর পরিবর্তে যোগ হয়েছে ব্যাটারী চালিত রিকশা। যার ভাড়া দ্বিগুণের চেয়েও দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকছে চালকেরা। ফলে চালকদের সাথে যাত্রীদের নিয়মিত তর্ক-বিতর্ক চলে প্রতিনিয়ত। 


তবে আশার আলো দেখাচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় নিযুক্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কুদ্দুছ। তিনি যুক্ত হওয়ার পর থেকে পৌর কার্যালয়ের কাজ ধীরগতি থেকে সদগতি হয়েছে। তিনি এ বছর পৌরসভার বিভিন্ন খাত থেকে কর আদায় করে নিজস্ব তহবিল গঠন করেন। প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে চার কিলোমিটার সড়কের কাজ সংস্কার চলমান রেখেছেন। 


এর মাঝে রয়েছে শহরের মঠের গোড়া থেকে মধ্যপাড়া বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চু সড়ক মেরামত, কুমারশীল মোড় আমিন কমপ্লেক্স থেকে পুরাতন জেলখানা হয়ে ক্রিসেন্ট কিন্টারগার্টেন স্কুল পর্যন্ত সড়ক মেরামত, আধুনিক পৌর সুপার মার্কেট থেকে মৌলভীপাড়া, হালদাপাড়া, অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে পুরাতন জেলাখানা মোড় পর্যন্ত এডভোকেট আলী আজম ভূইয়া সড়ক মেরামত, মসজিদ রোড থেকে মহাদেবপট্টি পর্যন্ত সড়ক মেরামত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার অধীনে কুমিল্লা- সিলেট বাইপাস শিশু পরিবার থেকে তিতাস নদী পর্যন্ত মেড্ডা তিতাস পাড়ায় আরসিসি ড্রেন নির্মাণ ও বিদ্যমান রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়াও আরো ৪ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। মেড্ডা পোদ্দার বাড়ির সড়ক বিসি দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ, মেড্ডা পীরবাড়ি মোড় থেকে সৎ সঙ্গ বিহার পর্যন্ত বিসি দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ, টাউনখাল ফুটপাতে বালু ভরাটকরণ, শিমরাইলকান্দি চাষী ভবন থেকে বিএডিসি গেইট পর্যন্ত রাস্তার পাশে আরসিসি ড্রেন স্ল্যাবসহ নির্মাণ ও ভাদুঘর ফাঁটাপুকুর পাড় সড়কে কভার স্ল্যাবসহ রাস্তা ও ড্রেন উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। 


এসব কাজের ঠিকাদারী পেয়েছে মেসার্স মোনালিসা তাহসিন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শাপলা কন্সট্রাকশন, মেসার্স শাহ জাহান বিল্ডার্স, মেসার্স হাজী এন্ড সন্স, মেসার্স সাহা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স কিয়ান এন্টারপ্রাইজ।


শহরের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের ব্যক্তিরা স্বস্তি প্রকাশ করলেও বর্তমানের কাজের গতি দেখে তাদের মাঝে আশার সঞ্চার ঘটেছে। 


আবরনি আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক হাবিবুর রহমান পারভেজ বলেন, আমাদের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, আমাদের স্পিকার নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী তিনিও নারী। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের পৌরসভার মেয়রও একজন নারী। তাকে পেয়ে আমরা যে উচ্ছ্বসিত ছিলাম, শহরকে নিয়ে যে স্বপ্ন বুনন করেছিলাম তা সময়ের ব্যবধানে হতাশা করে দিয়েছে। এরই মাঝে আমাদের পৌরসভায় প্রধান নির্বাহীর আগমনে আমরা আবারও চোখে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি। তিনি গত এক বছরে আমাদের অগোছালো পৌরসভার যে কাজগুলো করেছেন তা সত্যি প্রশংসনীয়। তিনি পৌর কর আদায় করে শহরের ক্ষত-বিক্ষত প্রধান সড়কগুলো মেরামতের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন। তিনি যেভাবে দায়িত্ব নিয়ে নিজের শহরের মত আমাদের শহরটি উন্নয়নে কাজ করছেন আমাদের আশার আলো জাগিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরো কিছুদিন থাকলে শহরের চিত্র সৌন্দর্যে ভরে উঠবে।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কুদ্দুছ বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় দশ কোটি টাকার কাজ করছি। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি সরকারের সিআরপি প্রকল্প, আইইউআইডিপি প্রকল্প এবং ইউজিআইআইপি থ্রি তিনটি প্রকল্পের অর্থ সরকার ও দাতা সংস্থাগুলো থেকে যখন অর্থ পাবো তখন আমরা সাথে সাথেই পিপিআর অনুযায়ী কাজ শুরু করবো। এই শহরকে সৌন্দর্য বর্ধ্বনে এক ইঞ্চি জায়গাও বাদ যাবেনা। আমরা সকল রাস্তার মেরামত কাজ শুরু করবো। তিনি প্রত্যাশা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ২০ কিলোমিটার আয়তনের শহরের এক ইঞ্চি রাস্তাও ভাঙা থাকবেনা। 


তিনি বলেন, আমি এবং পৌর কর্তৃপক্ষ রাত জেগে পরিশ্রম কাজের তদারকি করছে। শহরে অবৈধভাবে রাস্তার ভিতরে থাকা ড্রেন দখল, বাড়িঘর নির্মাণ করে রাস্তা দখল করে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়েছে সেসব জায়গা অপসারণ করে মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন। 


তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন তার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভাকে স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার প্রত্যাশা করেন। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে কী হয়েছে সেটা আমি জানিনা, তবে বর্তমানে কী হচ্ছে বা হবে তা দেখার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিক সমাজ, রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজসহ সর্বমহলকে কাজের মান দেখার আহবান জানিয়ে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের রাস্তা প্রশস্ত করে একটি নান্দনিক শহরে রূপ দিতে পারবো।