ভোগান্তির শেষ নেই চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন অফিসে


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭:০১ পূর্বাহ্ন, ৩রা মার্চ ২০২৩


ভোগান্তির শেষ নেই চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন অফিসে
ছবি: জনবাণী

মোর্শেদুল ইসলাম এনআইডিতে মায়ের নাম সংশোধন করতে ঘুরছেন নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কর্মকর্তার দুয়ারে দুয়ারে। সব কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও দুই বছরে পাননি সমাধান। 


তার মতে, ‘ভোটার হওয়া যতটুকু সহজ সংশোধনের কাজ করা আরও কঠিন। তাদের ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে আমাদের। পটিয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে চট্টগ্রামে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে কাগজপত্র পৌঁছাতে লেগে গেছে প্রায় দুই বছর। তারপরও ভোগান্তির শেষ হয় না’। 


তিনি অভিযোগ করেন, সমাধানযোগ্য একটি বিষয় সমাধান না করে অন্য অফিসে কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে গ্রাহক প্রতিবাদ করলে ফাইল আর সামনের দিকে আগায় না। 


শুধু মোর্শেদ নয়, প্রায় প্রতিদিনই এনআইডির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অনেকে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে আসেন সেবা নিতে। যত সহজ সংশোধনই হোক না কেন, অন্তত ৬ মাসের আগে করা যায় না এ কাজ। 


সেবা নিতে আসা সোমা চৌধুরী নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ভোটার হয়েছি বছর তিনেক আগে। এখনও এনআইডি কার্ড হাতে পাইনি। কয়েকবার নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ঘুরে গেছি। আজ আসেন-কাল আসেন বলে প্রায় ৬ মাস পার হলো। 


আনিসুর রহমান নামে এক প্রবাসী নির্বাচন কমিশনে এসেছেন ভোটার হতে। কার্ড নিতে যতটা ভোগান্তি ততটাই ভোগান্তি যেন ভোটার হতে।  তিনি বলেন, ভোটার হতে এখন পর্যন্ত চার বার আসা হয়েছে। কিন্তু একবারও সুযোগ পাইনি। একদিন কর্মকর্তা থাকেন না তো অন্যদিন কর্মচারী থাকেন না। এছাড়া এ কাজ, সে কাজ বলে বলে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে দিনের পর দিন। এভাবেই চলছে নির্বাচন কমিশন। 


তিনি আরও জানান, আমরা নির্বাচন কমিশনে এলে মনে হয় ঠেকায় পড়ে এসেছি। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। 


সরেজমিন দেখা গেছে, শুধু আঞ্চলিক কার্যালয় নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ভোগান্তি আরও বেশি। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৬ উপজেলা পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়ায় ভোটার হতে গিয়ে শত বাধার মুখে ভুক্তভোগীরা। 


কার্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির পর থেকে নতুন ভোটারদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে চায় না দায়িত্বরতরা। এ নিয়ে দুদকের একাধিক মামলা থাকায় এবং কেলেঙ্কারির ভয়ে কাজ এড়িয়ে চলতে চান অনেকে। এমনকি ঝুঁকি এড়াতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে এড়িয়ে যান। ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়ছে। 


ভোটার হতে ভোগান্তির বিষয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, অনলাইনে আবেদনের বিষয়ে সাধারণ মানুষ এখনও পারদর্শী নয়। তারা আবেদন করার পর আমরা সেটা গ্রহণ করি। তাদের মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু তারা সময়মতো পরবর্তী প্রক্রিয়া শেষ করতে আসেন না। তাই আবেদন প্রক্রিয়াধীন থেকে যায়। তাছাড়া তারা যে আবেদন করেছে, তার স্বপক্ষে বেশকিছু কাগজপত্র দরকার হয়। যদি তারা তা না দেয়, আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবো কি করে?  


এদিকে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও ভোটার দিবস উদযাপন করেছে জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ভোটার হব নিয়ম মেনে, ভোট দিব যোগ্যজনে’। 


সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস থেকে এ উপলক্ষে বের করা হয় র‌্যালি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।