জবি বাংলা বিভাগের হুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লীতে একদিন


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, ৯ই মার্চ ২০২৩


জবি বাংলা বিভাগের হুমায়ূন আহমেদের নুহাশপল্লীতে একদিন
ছবি: জনবাণী

বাংলাদেশের অন্যতম কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বাগানবাড়ী সবার কাছে পরিচিত ‘নুহাশপল্লী’ নামে। হুমায়ূন আহমেদ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার ছেলে নুহাশ হুমায়ূনের নামে রাখা নুহাশপল্লীকে মনের মতো করে নিজস্ব স্বপ্নজগতের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন। নন্দনকাননে হুমায়ূন আহমেদ ছুটেছেন বারবার, তাইতো তিনি দুর্লভ সব ঔষধি গাছ ও প্রায় আড়াইশ প্রজাতির সবুজ গাছের সমারোহ করেছেন ৪০ বিঘা এই জমিতে। 


যদিও এটি নুহাশ চলচিত্রের শুটিংস্পট ও পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তারপরও নিত্যদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এখন সেই ‘পল্লী’ দেখতে ছুটে যান। 


ঠিক তেমনিভাবে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ পরিবারও ছুটে গিয়েছে সেখানে।


শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙিন অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগেও তেমনি অন্যান্য বছরের মতো দূরপাল্লার ভ্রমণকে বাদ দিয়ে একদিনের একটি ভ্রমণের আয়োজন করে৷ সিদ্ধান্ত হয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ শিল্পীর গড়া জাদুর বাগান বাড়ি অর্থাৎ ‘নুহাশপল্লীতে’ যাওয়ার।


ঢাকা থেকে প্রায় ৫৭ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার হোতাপাড়া বাজারের পিরুজালী নামক গ্রামে অবস্থিত নুহাশপল্লী। 


মঙ্গলবার (৭ মার্চ) সকাল আটটায় নুহাশপল্লীর উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলা বিভাগের প্রায় দেড়শো জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী। নাস্তা শেষে সাড়ে দশটার দিকে পৌঁছে কাঙ্ক্ষিত সেই জায়গায়। সেখানে প্রবেশের পর মাঠ ধরে সামনে এগিয়ে হাতের বাঁ-পাশে শেফালি গাছের নীচে একটি নামাজের ঘর চোখে পড়ে। এর পাশে তিনটি পুরনো লিচুগাছ নিয়ে রয়েছে একটি ছোট্ট বাগান। লিচু বাগানের উত্তর পাশে জাম বাগান আর দক্ষিণে আম বাগান। ওই লিচুগাছের নিচে হুমায়ূন আহমেদের সমাধি অবস্থিত।


শহরের যান্ত্রিক কোলাহল থেকে মুক্তির জন্য, মুক্ত বাতাসে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য, রুটিনমাফিক জীবনটাকে কয়েকঘন্টার জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে আমরা ছুটে গিয়েছিলাম শিল্পীর গড়া জাদুর বাড়ি ‘নুহাশপল্লীতে’। এদিন সবার গায়ে ছিল হলুদ টি-শার্ট। ঠিক যেন হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি হিমুর মত অসংখ্য হিমুর সমাবেশ ঘটেছে  নতুনভাবে নুহাশপল্লীতে। সেটি ছিলো একটুকরো শান্তির জায়গা। ছোট্ট তবে গভীরতা আর শিল্পের ছোঁয়ায় ভরপুর। কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ যেনো তার লেখার মতই বাড়িটাকে সাজিয়েছিল নান্দনিকতার ছোঁয়ায়। 


এখানে ছিলো কতশত গাছ, দোলনা, দাবা বোর্ড, ট্রি হাউজ, কবুতরের বাসা, কাঠগোলাপ ঘেরা সুবিশাল বাঁধানো ,আর লেখকের বৃষ্টি বিলাস। তার বানানো শৈল্পিক বাড়িতেই তিনি আছেন চিরনিদ্রায়।


নুহাশপল্লীতে হুমায়ূন আহমেদ স্যুটিং স্পট, দিঘি আর তিনটি সুদৃশ্য বাংলো গড়ে তুলেছেন। একটিতে তিনি থাকতেন আর বাকি দুটিতে তিনি তার শৈল্পিক চিন্তাধারার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। শানবাঁধানো ঘাটের দিঘির দিকে মুখ করে বানানো বাংলোকে তিনি ‘ভূত বিলাস’ নাম দিয়েছিলেন। দুর্লভ সব ঔষধি গাছ নিয়ে যে বাগান তৈরি করা হয়েছে তার পেছনেই রূপকথার মৎস্যকন্যা আর রাক্ষসের ভাস্কর্য রয়েছে। 


আরও রয়েছে পদ্মপুকুর ও অর্গানিক শৈলীতে নকশা করা এবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল। আর সেই সুইমিংপুলে আমরা ছাত্র-শিক্ষক সবাই মিলে গোসল করে অন্যরকম আনন্দে মেতেছিলাম।


দুপুরের খাবারের পর কিছু ইভেন্টের মাধ্যমে পিকনিককে করে তোলা হয়েছিলো আরও আনন্দমুখর। মেয়েদের জন্য ছিলো 'চেয়ারদখল', 'লক্ষ্য স্থান নির্ধারণ', আর ছেলেদের জন্য ছিলো 'লক্ষ্যে বল ছোড়া' ও 'মুভমেন্ট এক্টিভিটিস' এর করার মজার খেলা। এছাড়াও শিক্ষকদের জন্যও ছিল এমনই ধরনের খেলা। ছেলে শিক্ষকদের জন্য ছিল 'অন্ধের হাঁড়ি ভাঙা', 'লক্ষ্যে বল ছোড়া' এবং মেয়ে শিক্ষকদের জন্য ছিল 'চেয়ারদখল' খেলা।


বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছিল র‍্যাফেল ড্র। খেলায় বিজয়ী, র‍্যাফেল ড্র বিজয়ী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নির্বাচিতদের সুন্দর সব গিফট আইটেমের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হয়েছে।


শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রী সবাই বন্ধুর মত মিলে মিশে দিনটি উপভোগ করেছে। একসাথে ছবি তুলেছে, গান গেয়েছে। আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছিল সবাই। 


পুরো আয়োজন সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে অন্যান্য শিক্ষকরা ছিলেন। সাথে প্রতি ব্যাচের শ্রেণি প্রতিনিধিরাও নিজেদের সর্বোচ্চটা সহযোগিতা করেছেন এই পিকনিকের জন্য। সবশেষে খুব সুন্দর একটি দিন কেটেছে গাজীপুরে অবস্থিত হুমায়ূন আহমেদ এর বাগান বাড়ি নুহাশপল্লীতে।