রোগীর সেবায় আরো আন্তরিক হতে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:০৫ পূর্বাহ্ন, ১৪ই মার্চ ২০২৩
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৩ মার্চ) বিকাল ৪টায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে এ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতিত্ব করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সাথে গবেষণা এবং অধিকতর উন্নত চিকিৎসা প্রদান করার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করায় দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে না যেয়ে কম খরচে দেশেই উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, মানবসেবা একটি স্বর্গীয় গুণ। রোগাক্রান্ত মানুষ সৃষ্টিকর্তার পর একজন ডাক্তার ও নার্সের ওপর ভরসা রাখেন। আপনাদের ভালো ব্যবহার ও চিকিৎসা যে কোনো রোগীর পরম কাম্য। আপনারা উদার মন নিয়ে জনসাধারণের মাঝে ভালো ডাক্তারের পাশাপাশি বড়ো মানুষ হিসেবেও বিবেচিত হবেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই, অথচ আমাদের চিকিৎসা শিক্ষায় গবেষণার পরিমাণ খুবই কম। আমাদের দেশের রোগব্যাধির ধরণ উন্নত ও পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে ভিন্ন। যে কারণে আমাদের নিজস্ব গবেষণাকর্মই শুধু পারবে এদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ রোগসমুহের কার্যকর ও সুলভ চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবন করে এদেশের রোগীদের সত্যিকারের সমাধানটি সহজলভ্য করতে। তাই আমি আপনাদের গবেষণায় আরো বেশি নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
চ্যান্সেলর বলেন, রোগী আছে বলেই চিকিৎসা পেশা আছে। তাই যাদের কারণে আপনাদের রুটিরুজি তাদের প্রতি আপনাদের আরো যত্নবান হওয়া উচিত। বড়ো ডাক্তার হয়ে অপ্রয়োজনীয় বড়ো বড়ো টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি করবেন না। কিছুসংখ্যক অসাধু ও প্রতারক চিকিৎসকদের জন্য যাতে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম ক্ষুন্ন না হয় সেদিকেও সচেতন থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে একজন রোগী সার্বক্ষণিক সেবা ও সহচার্য পায় নার্সদের কাছ থেকে। একজন নার্সের সুন্দর ব্যবহার ও উৎসাহব্যাঞ্জক কথা রোগীর হাসপাতালে অবস্থানকে আরামদায়ক করে ও আরোগ্য ত্বরান্বিত করে। তাই নার্সদের রোগীর সেবায় আরো আন্তরিক হতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের চিকিৎসকরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশেষ করে করোনা মহামারিকালে সেবার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা খুবই প্রশংসনীয় ও অতুলনীয়। অনেক চিকিৎসককে রোগীর সেবা দিতে গিয়ে প্রাণও দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদেরও মনে রাখতে হবে ডাক্তারগণ আল্লাহ বা ভগবান নন। তারাও মানুষ। কেবল চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন। তাই রোগীর কিছু হলেই ডাক্তারদের দায়ী করবেন আর হাসপাতাল ভাঙচুর করবেন এটাও কাম্য নয়। তাই ডাক্তার, রোগী ও আত্মীয়স্বজনদের আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। এমন অবস্থা কারোরই কাম্যই নয় যার ফলে সাধারণ মানুষ ও রোগীরা অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথির হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি। ভারতের বিহারে ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাজবর্ধন আজাদ সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। গুরুত্বপূর্ণ এই সমাবর্তনে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রমুখসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্যবৃন্দ, সম্মানিত ডিনবৃন্দ, বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষকবৃন্দ, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চিকিৎসকবৃন্দ, সেবিকাবৃন্দ, অফিস প্রধানগণ ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদের মাননীয় সদস্যবৃন্দ, মহামান্য রাষ্ট্রপতির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।