মুক্তিপণের পুরো টাকাই ফেরত পেল এমভি আবদুল্লাহ


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩:১৯ অপরাহ্ন, ১৫ই মে ২০২৪


মুক্তিপণের পুরো টাকাই ফেরত পেল এমভি আবদুল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত

সোমালিয়ান দস্যুদের মুক্তিপণের টাকা দিয়েই মুক্তি মিলেছে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ এবং ২৩ নাবিকের। কিন্তু এই টাকার অংক কত ছিল কিংবা এই টাকা কে দিয়েছে এসব প্রশ্ন ঘিরে গেল এক মাস ধরেই ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। এই মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ প্রক্রিয়া ও দেশে চলমান ডলার সংকটে সেটি যোগান দেওয়া নিয়েও ছিল আলোচনা। তবে জাহাজ দেশে ফিরে আসার পর মালিক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, উচ্চ শ্রেণির বিমার আওতায় থাকায় মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করেছে সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানি।


মঙ্গলবার (১৪ মে) এস আর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিম বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা আমরা অনেকটাই বিমার মাধ্যমে সামাল দিয়েছি। আমাদের জাহাজের ফার্স্ট ক্লাস বিমা করা ছিল। তাই মুক্তিপণের কোনো টাকাই দিতে হয়নি আমাদেরকে। সব টাকাই দিয়েছে বিমা কোম্পানি।


আরও পড়ুন: দেশে পৌঁছে লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিলেন এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন


তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঝুঁকি এড়াতে নৌ পরিবহন দপ্তর ও আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সংস্থার নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটির মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাওয়ার পথে পাইরেসি সংক্রান্ত বিমা করা হয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বার্কলি কোম্পানির সঙ্গে। সাধারণত জাহাজ মালিকেরা এ ধরনের যাত্রা ঝুঁকি বিবেচনা করে পাঁচ থেকে সাত দিনের জন্য ইউরোপ, আমেরিকা, চীন ও জাপানভিত্তিক ২০টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব বিমা করে। এ জন্য জাহাজ মালিককে গুণতে হয় সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ডলার। আপাত দৃষ্টিতে ব্যয়বহুল মনে হলেও এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘এসব ঝুঁকিপূর্ণ রুটে চলাচলের ক্ষেত্রে জাহাজ মালিকদের অবশ্য নৌপরিবহন দপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। সঠিক বিমা ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব।’


আরও পড়ুন: অবশেষে স্বজনদের কাছে ফিরলেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক


এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর চায় বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ঝুঁকিমুক্ত ভাবে সাগরে চলাচল করুক। এ জন্য জাহাজ মালিকদেরকেও দায়িত্ব নিতে হবে। মনে রাখতে হবে সব সময় নৌবাহিনী দিয়ে এ ধরনের সমস্যা সমাধান সম্ভব নাও হতে পারে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ পথে জাহাজে গানম্যান নেওয়া উচিত।


মালিকপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও বিভিন্ন সূত্র বলছে, এম ভি আবদুল্লাহকে জিম্মিমুক্ত করতে ৫ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দিতে হয়েছে।


গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে কয়লাবোঝাই এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা। এ সময় জাহাজটিতে থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিককেও জিম্মি করা হয়। নাবিকদের উদ্ধারে নানা চেষ্টা করা হয়। চলে কূটনৈতিক তৎপরতাও। কিন্তু অগ্রগতি আসতে সময় লাগছিল। 


আরও পড়ুন: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর পরিদর্শন


জাহাজটির জিম্মি নাবিকদের ঈদও কাটে বন্দী দশায়। তবে তাঁদের ঈদের দিন ভালো খাবার দেওয়া হয় বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল।


গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত মধ্যরাতে ২৩ নাবিকসহ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্তি পায়  এমভি আবদুল্লাহ। পরের দিন দুপুরে মুক্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান।


জেবি/এজে