দেশে পৌঁছে লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিলেন এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:৪২ অপরাহ্ন, ১৪ই মে ২০২৪


দেশে পৌঁছে লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিলেন এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন
ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ | ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সোমালিয়ান জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশি ২৩ নাবিক চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছেন। এমভি আবদুল্লাহর এই ২৩ নাবিকের বিষয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় ছিল সারা দেশের মানুষ। তাই তাদেরকে স্বাগত জানাতে নাবিকদের পরিবার-পরিজনের বাইরেও উপস্থিত ছিলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রামের মেয়র, কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন সব কর্মকর্তারা।


২৩ নাবিকদের বহন করা লাইটার জাহাজ যখন বন্দরে পৌঁছায় তখন এক অভাবনীয় দৃশ্য ছিল। খুশিতে চোখের নোনা জল মুছছিলেন নাবিকদের আপনজনেরা। প্রথমেই দেশের মাটিতে পা রাখেন এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ। তাকে ঘিরে ধরেন সংবাদকর্মীরা। বিভিন্ন বিষয় জানতে চান তার কাছ থেকে। এসময় সকল প্রশ্নের একটিই মাত্র উত্তর ভেসে আসে তার কাছ থেকে। 

 

এ সময় তিনি বলেন, আমি সেফটি অব লাইফটাকে প্রাধান্য দিয়েছি। তাইতো সোমালিয়ার দস্যুদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে আজ আমরা দেশে পৌঁছাতে পেরেছি। আমরা ২৩ নাবিকই এখানে পৌঁছাতে পেরেছি। আমাদের দেশের সরকার কৌশলগতভাবে সবার সাথে যোগাযোগ করেছেন। জীবনে প্রথম এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম আমি। মনে অনেক ভয় ছিল, কিন্তু সর্বদা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ স্বাভাবিক রেখেছি। সবাইকে হ্যান্ডেল করেছি, যেন আমাদের কোনো ক্রুর কোনো ধরণের ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর রাখি।


আরও পড়ুন: অবশেষে স্বজনদের কাছে ফিরলেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক


নৌবাহিনী প্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়ে ক্যাপ্টেন আব্দুর রশিদ বলেন, আমি বলেছিলাম বিদেশি নৌ-বাহিনী যেন কোনো ভায়োলেন্স না করে, যাতে আমাদের নাবিকদের কারও প্রাণ না হারায় বা জাহাজের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। প্রথমদিন যখন আমরা দস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত হলাম, সে সময় সেকেন্ড অফিসার ব্রিজে ছিলেন। আর আমি নিচে নেমে অ্যালার্ট দিচ্ছিলাম। সবকিছুই অতি দ্রুত ঘটছে। দস্যুরা স্পিডবোটের মাধ্যমে এসে দ্রুত জাহাজে উঠে ব্রিজে চলে আসে। এসময় আমি আর সেকেন্ড অফিসার আমাদের হিডেন রুমে যেতে পারিনি।


লোমহর্ষক সে ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে ক্যাপ্টেন বলেন, সেকেন্ড অফিসার আটক করার পর আমি গিয়ে দেখি একে-৪৭ তার দিকে তাক করে আছে। আর আমি যেতেই আমার দিকেও একে-৪৭ তাক করে। আমি হাত তুলে সারেন্ডার করে বললাম, আমরা মুসলিম, আমরা বাংলাদেশি। আমরা সবাই রোজাদার বলে চিৎকার তুলি। আমি স্ট্রং ছিলাম। আমরা  কেউ দুর্বল হয়ে পড়িনি।


মৃত্যুর হুমকি ছিল উল্লেখ করে ক্যাপ্টেন আরও বলেন, এসময় তারা আমাদের সবাইকে সেখানে ডাকতে বলে। এরপর আমাদের সবাইকে ব্রিজের মধ্যে সারাদিন সারারাত রেখে দেয়। আমাদের নাবিকদের কেউ কেউ সেসময় কান্নাকাটিও করছিল। আমার মনে অনেক ভয় ছিল, কিন্তু বডি ল্যাঙ্গুয়েজ স্বাভাবিক রেখেছি। সবাইকে হ্যান্ডেল করে, যেন আমাদের কোনো ক্রুর কোনো প্রকার ক্ষতি না হয় সেদিকে সবসময় নজর রাখি।


আরও পড়ুন: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর পরিদর্শন


উল্লেখ্য, ৩৩ দিনের মাথায় গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। এরপর জাহাজটি প্রথমে আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে এসে পৌঁছায়। সেখানে পণ্য খালাস শেষ করে আরেকটি বন্দর থেকে চুনাপাথর বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছিল জাহাজটি। সে হিসেবে আমিরাত থেকে ১৩ দিনের মাথায় জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছাল।


কেএসআরএম গ্রুপ জানায়, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ৫৬ হাজার টন পণ্য চুনাপাথর রয়েছে। এতে প্রায় ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজটির ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতার পরিমাপ) বেড়ে সাড়ে ১২ মিটার হয়েছে। জাহাজটির ড্রাফট অনেক বেশি থাকায় কুতুবদিয়ায় প্রথমে কিছু পরিমাণ পণ্য খালাস করে। এরপর পতেঙ্গার কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরের বন্দর জলসীমায় আনা হয়। আর সেখানেই বাকি পণ্য খালাস করা হবে। এ জন্যই দেশে পৌঁছার পরও নাবিকদের ঘরে ফিরতে একটু সময় লেগেছে।


২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। বিভিন্ন চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।


এমএল/