দুমকিতে স্কুলে যাওয়ার বয়সে অটো-মিশুক গাড়ি নিয়ে রাস্তায় শিশুরা


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, ১৬ই মার্চ ২০২৩


দুমকিতে স্কুলে যাওয়ার বয়সে অটো-মিশুক গাড়ি নিয়ে রাস্তায় শিশুরা
ছবি: দৈনিক জনবাণী

বই-খাতা ও কলম নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা থাকলেও বাড়তি উপার্জনের লোভে অটো-মিশুক চালানোর মত ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নেমেছে পটুয়াখালীর দুমকিতে অনেক অবুঝ শিশু-কিশোর। ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুর্ঘটনা। 


বুধবার(১৫ মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় সড়কেই শিশু-কিশোর চালকদের সরব উপস্থিতি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দুমকি গ্রামের হারুন মৃধার ছেলে জিহাদ (১২), জলিশা গ্রামের বাবুলের ছেলে মনির(১৩), জামলা স্ট্যান্ড এলাকার মামুন(১৪), বাহেরচর গ্রামের সোহেল(১৩)সহ আরও নাম পরিচয় দিতে ইচ্ছুক নয় এমন অর্ধশতাধিক শিশু-কিশোর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক।


সাধারন পথচারিদের অভিযোগ, যেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক চালকরাই অটোরিকশা ও মিশুক চালাতে হিমশিম খায়। সেখানে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই ভাইয়ের, চাচার, বন্ধুর এমন কি ভাড়া নিয়ে অটো-মিশুক নিয়ে নেমে পড়ে রাস্তায়। এছাড়াও কিছু মুনাফা লোভী অটো-মিশুকের মালিক শিশুদের হাতে অটো-মিশুক তুলে দেয় নির্দ্বিধায়। যারা এই অপ্রাপ্ত বয়সে চালকের আসনে বসছেন তারা নিজেরাও বুঝে উঠতে পারেনা আসলেই তাদের জীবনও কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। নেই কোন ম্যানুয়াল প্রশিক্ষণ, অপরদিকে জানেনা কোন ট্রাফিক আইন এবং নিতে পারেনা বিশেষ মুহূর্তে একজন দক্ষ চালকের সিদ্ধান্ত। এছাড়াও রাস্তার মাঝখানে গাড়ি ঘুরানো, যত্রযত পার্কিং ও অদক্ষভাবে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। 


অপর দিকে আবার কেউ কেউ মনে করছেন, যেসব শিশু-কিশোর আর্থিক অনটন ও পারিবারিক সমস্যার কারনে অটো-মিশুক চালাতে বাধ্য হচ্ছে তাদের পূর্নবাসন, আর্থিক সাহায্য ও উপযোগী কাজের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরী। 


অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া লিমন(১৩) নামের একজন কিশোর চালককে অল্প বয়সে গাড়ি চালাও কেন জিজ্ঞেস করলে জবাবে তিনি বলেন, সবসময় চালাইনা। ভাইয়ের গাড়ি। তাই মাঝে মাঝে চালাই। সেও চালায়। 


অটো চালক মোঃ রায়হান(১১) অপ্রাপ্ত বয়সে গাড়ি চালানোর কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, বাবা নয় বছর ধরে অসুস্থ। পারিবারিক অর্থ সংকটের কারণে চালাই। 


এবাদুল হক নামে এক পথচারি বলেন, শিশু শ্রম ও শিশু চালক বিষয়টি অত্যন্ত হতাশা ও বিপদজনক। এমনিতেই অটো-মিশুক অবৈধ, সরকারিভাবে শিশু শ্রম নিষিদ্ধি। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উচিৎ এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। 


অটো ও অটোরিকশা শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ১৮ বছরের নিচে যাতে কেউ এসব চালাতে না পারে তার জন্য অবজারভেশন চলমান রয়েছে। আর ১০-১৫ দিনের মধ্যেই এরা আর রাস্তায় অটো-মিশুক নিয়ে নামতে পারবে না। 


এ ব্যাপারে মুরাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান শিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের গাড়ি চালানো নিষেধ। আমার ইউনিয়নে এমন কাউকে পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, কোনভাবেই অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকেরা গাড়ি চালাতে পারবে না। এ বিষয়ে আমরা অতি দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা নেব।