পাকুন্দিয়ায় বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার হুক্কা খাওয়া প্রথা
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০:২৫ পিএম, ৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার হুক্কা খাওয়া প্রথা কালে কালে বদলায় সমাজ। হারিয়ে যায় ঐতিহ্য। অনুরূপ, চিরিরবন্দরে কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনুসঙ্গ হুক্কা। ৫০-৬০ দশকেও জনপ্রিয় ধুমপানের মাধ্যম ছিল হুক্কা।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা গ্রামে গ্রামে বয়স্ক বুড়ো-বুড়িদের হুক্কা খেতে দেখা যেত বিশেষ করে কৃষকদের দেখা যেত জমি চাষের সময়, চারা রোপনের সময় একটু বিশ্রম নেওয়ার সময় গাছ তলায় বসে মনের আনন্দে গান গাইতো এবং হুক্কা টানতো। বর্ষাকালে যখন মানুষ ঘরের বাহিরে যেতে না পারতো তখন ঘরের বারান্দায় বসে এমন কি শীতকালে যখন খুব শীত পড়তো তখন লেপ-খাতা গায়ে দিয়ে হুক্কা টানতে দেখা যেত।
এমনকি গ্রামের মোড়ল, মাতুববর, জমিদাররা যখন বিচারে বসতে তখন বিচার কার্যপরিচালনার সময় হুক্কার পাইপ টানতো আর সকলের কথা বার্তা শুনে তাদের রায় ঘোষণা করতো। তখন তামাক হুক্কায় ভরে টানাটাই ছিলো তখনকার সমাজে সমাজপতিসহ প্রজাদের মধ্যে বিশাল প্রচালন। গ্রাম বাংলার সেই পুরনো প্রথা আজ আর দেখা যায় না হুক্কা খেতে। গ্রামে গ্রামে বুড়োদের হুক্কা খাওয়া নেশা করার একমাত্র প্রথা এখন বিলুপ্তির পথে। প্রতিটি বাড়ি বাড়ি হুক্কা খাওয়ার সরঞ্জাম যেন বাড়ির একটি শোভা ছিল। যার বাড়িতে যত বেশি ঐসব সরঞ্জাম থাকতো, এলাকা জুড়ে তার পরিচিতি থাকতো তত বেশি।
আরও পড়ুন: গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবারে ভয়াবহ হামলা, আহত ৩০
এতে করে শোভা পেত তার বাড়ির বৈঠকখানা। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই বৈঠক খানাও আর নেই, নেই হুক্কার সরঞ্জাম। সবকিছুই এখন বিলুপ্তি হতে চলেছে। সময় ও অর্থের সাশ্রয় এবং ঝামেলামুক্ত থাকতেই লোকজন এখন অন্য নেশায় মত্ত। তামাকের মূল্যবৃদ্ধি, আধুনিকতার ছোঁয়ায় গৃহস্থরা আর চায় না অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে। সময় ও অর্থ বাঁচাতে কৃষকদের মাঝেও গ্রামের বুড়োদের আর দেখা যায় না হুক্কা খেতে। তবে হুক্কা খাওয়া প্রথা বিলুপ্ত হতে চললেও এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন পাকুন্দিয়া উপজেলা শিমুলিয়া গ্রামের সুনাম উদ্দিন দোকানে মাঝে মধ্যে এখানে অনেককে হুক্কা খাওয়ার মতো এমন চিত্র দেখা যায়। হুক্কা টানতে বসে নুচ্ছান মিয়া বলেন, ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে হুক্কা টেনে গা গরম করছেন। এছাড়া আগের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য তিনি এখনো মাঝে মাঝে হুক্কা খেয়ে থাকেন বলে জানান।
উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নে শিমুলিয়া গ্রামের ঈদগাহ মাঠে কোনায় দোকানদার সুনাম উদ্দিন জানান , তিনি একটানা ৪০ বছর ধরে হুক্কা দিয়ে ধুমপান করেন। তার সাথেই আলাপকালে জানা গেলো ঐতিহ্যবাহী হুক্কার আদ্যোপান্ত অনেক গল্প।
সমাজের বিত্তবান পরিবারের লোকরাও নানা সাজে তামাক তৈরি করে হুক্কায় নল লাগিয়ে পরম আনন্দে তৃপ্তির আস্বাদ নিতো। এটিই ছিল সে সময়কার আনন্দ বিনোদনের অংশ। এখন আর তা দেখা যায় না। অর্ধযুগ আগেও আবহমান বাংলার গ্রামগঞ্জে ধূমপায়ীরা হুক্কার মাধ্যমে তামাকপানে অভ্যস্ত ছিল।
আরও পড়ুন: হাসপাতালের শয্যায় শুয়েই বিয়ে, কষ্টের মাঝেও সুখের মুহূর্ত
তামাক পাতাকে ছোট করে কেটে চিটাগুড় মিশিয়ে তৈরি হতো হুক্কার প্রধান উপাদান। হুক্কা তৈরির উপাদানগুলোর জন্য সে সময় তামাক পান-সুপারিওয়ালারা বাজারে বিক্রি করতো। এখন আর এগুলো বিক্রি করতে চোখে পড়ে না।
এমএল/