চলাচল শুরুর আগেই হুমকির মুখে সেতু


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, ২০শে মার্চ ২০২৩


চলাচল শুরুর আগেই হুমকির মুখে সেতু
হুমকির মুখে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সেতু। ছবি: জনবাণী

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী ও বাগজানা ইউপি এলাকার যমুনা নদীর ওপর চলাচলের সুবিধার্থে নির্মিত হচ্ছে সেতু। এতে সুবিধা পেতে যাচ্ছে নদীর উভয় দিকের মানুষেরা। তবে নির্মাণ শেষ না হতেই সেতুটি পড়েছে হুমকির মুখে।


সেতুর পাশ থেকে বালু মহাল ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে সেতুটি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি প্রকৌশল বিভাগের। 


পাঁচবিবি উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, উপজেলার বাগজানা-ধরঞ্জী ইউনিয়নের সংযোগ সড়কের জন্য কুটাহারা-বাগজানা এলাকায় যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ১৫০ মিটার চেইনেজে ৯৬ মিটার দীর্ঘ প্রি-স্ট্রেস গার্ডারের এই সেতু উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনুর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এর কাজ চলছে। এর প্রাক্কলিক মূল্য ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা হলেও চুক্তিমূল্য ৮ কোটি ৭৩ লাখ ধরা হয়েছে। ব্রিজটির কাজ পেয়েছেন মেসার্স বিএইচবি লিটন জেভি ও মেসার্স লিটন ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হলেও কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর। তবে এই সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথমে ৩ মাস ও পরে ৬ মাসসহ দুইবার কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরপরও বাকি রয়েছে ৩০ শতাংশ কাজ।


সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগজানা-ধরঞ্জী ইউনিয়নের সংযোগ সড়কের জন্য যমুনা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ২৯ মে এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু (জয়পুরহাট-১)। সেতুর কাজ চলমান রয়েছে। বেশিরভাগ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেতুর নিচ ও ধার ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে বিকল্প রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে মেসি ট্রাক্টর। এসব ট্রাক্টর বালু নিয়ে চলে যাচ্ছে। আবার বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে তোলা হচ্ছে টোলের টাকা।


রতনপুরের আজাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি ব্রিজ নির্মাণের আগে নৌকায় মানুষ পারাপারের জন্য খেয়া ঘাটটি লিজ নিতেন। আজাদ হোসেন বলেন, ব্রিজ নির্মাণের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিকল্প রাস্তা করে দেয়নি। এই রাস্তা বালু মহালের ইজারাদার করে দিয়েছে। এতে আমিও সহায়তা করেছি। ঘাট ডেকে নেওয়ার কারণে মানুষ হেঁটে, মোটরসাইকেলে বা ভ্যান নিয়ে গেলে টোল হিসেবে টাকা আদায় করা হয়।


কুটাহারা-বাগজানা এলাকায় বালু মহাল ইজারা নিয়েছেন আবু সাঈদ রনি নামের এক ব্যক্তি। তিনি পাঁচবিবি উপজেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক পদে রয়েছেন। তিনি বলেন, এই বালু মহালটি ১২ লাখ ২০ হাজার টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে। ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা পড়েছে। বিকল্প রাস্তাটি আমি করে দিয়েছি। এতে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে।


আবু সাঈদ রনি বলেন, বালু মহাল থেকে বালু তুলতে গেলে অনেক নির্দেশনা থাকে। এসব মেনে চললে বালু পাওয়া যাবে না। নদী খননের ফলে নদীতে তেমন বালু নেই। তাই পাশের জমিগুলো থেকে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। 


শরিফুল ইসলাম নামের বালু মহালের এক শ্রমিক জানান, আমি দিনে পাঁচশ টাকা মজুরি পাই। দিনে ৩০ থেকে ৪০ গাড়ি বালু বিক্রি হয়। প্রতি গাড়ি বালু ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা ধরা হয়।


স্থানীয় বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন নৌকায় চড়ে নদী পারাপার হতে হয়েছে। ব্রিজটি হলে মানুষের অনেক সুবিধা হবে। কিন্তু ব্রিজের পাশেই বালুর ঘাট ইজারা দেওয়া আছে। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত বালু তোলা হয়। এভাবে বালু তুলতে থাকলে ব্রিজটি ঝুঁকিতে পড়বে। ব্রিজের কাজ চলমান রয়েছে। প্রথমে বিকল্প রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করলেও পরে বিকল্প রাস্তা করে দেননি বলে স্বীকার করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী মো. লিটন ইসলাম।


পাঁচবিবি উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বিকল্প রাস্তা কয়েকবার স্থান পরিবর্তন করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও করে দিয়েছেন। ব্রিজ নির্মাণের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দুইবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আরেকবার মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। ব্রিজ নির্মাণের কাজ ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে।


তিনি বলেন, ওই ব্রিজের অদূরে নদীর পাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এটি বালু মহাল হিসেবে ইজারা দেওয়া আছে। এমনভাবে বালু উত্তোলন করলে ব্রিজটি ঝুঁকিতে পড়বে। নদীর পাশে যেখান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেখানে বড় অংশ পুকুরের মতো তৈরি হচ্ছে। নদীতে পানি বাড়লে স্রোত বৃদ্ধি পাবে। বালু উত্তোলনের ওই স্থানে বড় ধরনের ঘুর্ণনের সৃষ্টি হলে পানি বের হওয়ার সময় ব্রিজের পাশে রাস্তা ভেঙেও যেতে পারে। পানির ধাক্কা ব্রিজ পড়বে। এতে ব্রিজ অনেক ঝুঁকিতে পড়বে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।


পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  (ইউএনও) মো. বরমান হোসেন বলেন, বালু মহাল যেখানে ইজারা দেওয়া আছে সেখানে বালু উত্তোলন হচ্ছে না। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে আমাদের অভিযান চালানো হবে।