রোজার আগেই গৃহহীনদের মাঝে ঈদের আমেজ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, ২১শে মার্চ ২০২৩


রোজার আগেই গৃহহীনদের মাঝে ঈদের আমেজ
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে গৃহহীনদের মাঝে ঘর হস্তান্তর উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: জনবাণী

সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে চতুর্থ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া ১৭০ টি পরিবারে ঈদের আনন্দ বিরাজ করছে। অনাদরে অবহেলায় জীবনের অনেকটা সময় পার করা এসব ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারের সদস্যরো স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তারা পাকা ঘরসহ জমি পাবেন। তাদের সেই স্বপ্ন আজ সত্যি হলো। আজ তারা অন্যসবার মতো জমিসহ পাকা ঘরের মালিক। 


কাজিপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে , চতুর্থ পর্যায়ে উপজেলার সোনামুখী, লক্ষীপুর ও চরগিরিশে ১৭০ টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। 


এরমধ্যে চরাঞ্চলের চরগিরিশে ১৪০ টি ব্যারাক নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনেফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে এই ঘরগুলোর উদ্বোধন করবেন। আর এর মাধ্যমে কাজিপুর উপজেলাকে গৃহহীন ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে। 


এর আগে প্রথম পর্যায়ে ৩৫ টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৫ টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১১২ টি ঘর নির্মাণ করে সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। 


উপজেলার সোনামুখী আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন তিন সন্তানের জননী রেনুকা খাতুন। তিনি জানান, স্বপ্নেও ভাবি নাই আমার জমি ও পাকা ঘর হইবো। ছোটবেলায় বাপে বিয়া দিছিলো। তিন মেয়ে রাইখা উনি (স্বামী) মারা গেছেন দশ বছর আগে। অন্যের বাড়ি ঝিয়ের কাজ হইরা ছলপলগোরে বড় হরছি। দুইজনকে বিয়া দিছি। এহনো আমি অন্যের বাড়িতে কাম করি আর সেহানেই থাকি। আইজ জমি ও ঘর দিলো আমাগোরে প্ররধানমন্ত্রী। আমি আইজ খুইব খুশি। আল্লাহ শেখের বেটিরে বাঁইচা রাখুক। 


আশ্রয়ণের ঘর পেয়েছেন বাক প্রতিবন্ধী চন্দনা রানী। তার তিনকূলে কেউ নেই। দূর সম্পর্কের এক বোনের বাড়িতে থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে পেট চলে তার। ঘর পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আনন্দে তার দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। ইশারায় তিনি সেই আনন্দ প্রকাশ করেন। হাতের ঈশারায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। 


উপজেলার লক্ষীপুর আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ঘর পাওয়া দিনমজুর সেলিম রেজা। জন্মের পর থেকে বেড়ে উঠেছেন অন্যের বাড়িতে। বুঝ হবার পরেই পেট চালানোর তাগিদে বাবা তাকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করেছেন। অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে সেখানেই জীবনের ৬২ টি বছর পার করেছেন। আজ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে তিনি আনন্দে আত্মহারা। সেলিম রেজা জানান, মনে হইতাছে আইজকা আমার জীবনের ঈদ। এতো আনন্দ কখনও পাই নাই। জন্মের পর থেকে সবার দূরদূর ছাইছাই শুনে, লাঠিঝাটা খেয়ে বড় হইছি। আইজক্যা নিজের নামে জমি ও ঘর পাইলাম। এহন আর কেউ আমাকে তাড়াইয়া দিতে পারবো না। প্রধানমন্ত্রীর এই ঋণ শোধ কইরবার পারমু না। শুধু প্রাণভরে দোয়া করমু। 


কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুখময় সরকার জানান, ১৭০ টি ঘরের মধ্যে আজ ১৫৪টি পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। কেউ বাদ পড়লে বাকিঘরগুলোতে তুলে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্পের জন্যে রাতদিন খুঁজে খুঁজে প্রকৃত সুবিধাভোগী নির্বাচন করেছি। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দলিল উপহার দিতে পেরে ভালো লাগছে। এই কাজে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিলো। জমি উদ্ধার, শ্রেণি পরিবর্তন, দলিল তৈরি, নথি সৃজন করার মতো কাজগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে হয়েছে। এসব কাজের কষ্ট ভুলে গেছি যখন আশ্রয়ণে ঘর পাওয়া পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি দেখেছি।