দেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি উদ্বোধন


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:৩২ পূর্বাহ্ন, ২১শে মার্চ ২০২৩


দেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি উদ্বোধন
দেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি উদ্বোধন করা হয়েছে

নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। মিং ক্লাসের দু'টি সাবমেরিন কমিশনিং এর মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে যাত্রা করলো বাংলাদেশ নৌবাহিনী।


সোমবার (২০ মার্চ) কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নে নৌবাহিনীর সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষ্যে সাবমেরিন ঘাঁটি এলাকা সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।


নৌবাহিনী সূত্র জানায়, চীনের কারিগরী সহায়তায় বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটিটি নির্মাণ করে। সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণে দেড়শো কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। চীন থেকে দু'টি সাবমেরিন কিনতে ব্যয় হয়েছে বিশ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। ২০১৭ সালে সাবমেরিন যুগে প্রবেশের পর কর্ণফুলী নদীর ঈশা খাঁ নৌঘাঁটিতে রাখা হতো বানৌজা 'নবযাত্রা' ও 'জয়যাত্রা' সাবমেরিন। এসময় সাবমেরিনের এ ঘাঁটি নির্মাণের ঘোষণা দেন সরকার প্রধান। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলের পাশ ঘেঁষে প্রায় ৭০০ একর জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয় সাবমেরিন ঘাঁটিটি। সাবমেরিন দুটির প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৭৬ মিটার ও প্রস্থ সাড়ে ৭ মিটার। টর্পেডো ও মাইনে সুসজ্জিত সাবমেরিনগুলো শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ ও ডুবো জাহাজে আক্রমণ চালাতে সক্ষম। পূর্ণ ধারণক্ষমতা নিয়ে এগুলোর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭ নটিক্যাল মাইল।


নৌবাহিনী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বানৌজা শেখ হাসিনা ঘাঁটিতে সাবমেরিন নিরাপদে রাখতে বেসিন ও এন্ট্রি চ্যানেল, সাবমেরিন ফ্রিট হেডকোয়ার্টারস, যুদ্ধ জাহাজের বার্থিং ফ্যাসিলিটিজ, এবং সাবমেরিন সংক্রান্ত সকল প্রকার বেস সাপোর্ট ফ্যাসিলিটিস রয়েছে।


বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সাবমেরিনের অর্ন্তভূক্তির পর হতে এর অবস্থান ছিল কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী বানৌজা ঈসা খানে। সাবমেরিনের অপারেশনাল কার্যক্রম, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপদ বার্থিংয়ের জন্য বিশেষায়িত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘাঁটি খুবই জরুরি। এ প্রেক্ষিতে সাবমেরিনের নিরাপদ বার্থিং সুবিধার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার জেলার পেকুয়ায় নির্মিত হয়েছে আধুনিক সকল সুবিধা সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ সাবমেরিন ঘাঁটি।


বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসাবে রুপান্তরে সাবমেরিন সংযোজন ছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। সংবেদনশীল ও কৌশলগত রণতরী হিসেবে সাবমেরিন এর সর্বোত্তম ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে একটি বিশেষায়িত ও স্থায়ী ঘাঁটির গুরুত্ব বিবেচনায়, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা, ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় গত ১২ মার্চ ২০১৭ এ 'বানৌজা শেখ হাসিনা' নির্মাণে ঘাঁটির নামফলক উন্মোচিত হয়।


কমিশনিং উদ্বোধনের আগে গণভবন হতে ভিডিও টেলিকনফারেন্স (ভিটিসি) এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ঘাঁটির অধিনায়ক কমডোর মোহাম্মদ আতিকুর রহমান এর হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন। এর মধ্য দিয়ে ঘাঁটিটি নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করল।


নৌবাহিনীর প্রধান এর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্টিত কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি আধুনিক শক্তিশালী ও সক্ষম নৌবাহিনী গঠনে বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠার কথা তুলে ধরে বলেন, সমুদ্রের অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় নৌবাহিনী আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা ও দূর্যোগ মোকাবেলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আধুনিক ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীর স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি তা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি আধুনিক শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলতে সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ বিষেশায়িত ঘাঁটি সংযোজিত হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের জলসীমা সুরক্ষায় নৌবাহিনীর সাবমেরিনসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এ ঘাঁটির গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া, দেশের সার্বভৌমত্ব, সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা রক্ষা ও চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালনের জন্য নৌবাহিনীর সদস্যদের কঠোর পরিশ্রম ও কর্তব্যনিষ্ঠার জন্য তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।


এর আগে ‘বানৌজা শেখ হাসিনা' ঘাঁটিতে ভিডিও টেলিকনফারেন্সে সংযুক্ত হলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান, নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ও ঘাঁটির অধিনায়ক কমডোর মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, চকরিয়-পেকুয়ার সাংসদ জাফর আলম, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক ও পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম।


এ সময় সাবমেরিনারদের একটি চৌকস দল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রীবর্গ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডোগণ, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কুটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, নৌ সদর দপ্তরের পিএসওগণ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং উর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।