টেবিল ভেঙেছিল বাবা, প্রতিশোধ নিতে শিশু সন্তানকে হত্যা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


টেবিল ভেঙেছিল বাবা, প্রতিশোধ নিতে শিশু সন্তানকে হত্যা

বছর দুয়েক আগে এক ঈদের রাতে হত্যাকারী আব্দুল মোমেন তার বন্ধুরা উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে আনন্দ করছিল। এ সময় প্রতিবেশি আব্দুল বারেক ক্ষিপ্ত হয়ে সেই সাউন্ড বক্সের টেবিলে লাঠি মারলে টেবিলটি ভেঙে যায়। এতে তিন হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয় আব্দুল মোমেনের। এ ঘটনার চার মাস পর আব্দুল বারেকের বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে উচ্চস্বরে সাউন সিস্টেমে গান বাজতে দেখে প্রতিশোধ নিতে সুযোগ খুজতে থাকে মোমেন। 

এরই জের ধরে আব্দুল মোমেন গত ১৯ জানুয়ারী দুপুরে আব্দুল বারেকের একমাত্র পুত্রসন্তান আবু হুরাইরাকে (১১) খরগোশের দেয়ার লোভ দেখিয়ে নিয়ে যায় স্থানীয় একটি কবরস্থানে। সেখানেই হাত-পা বেধে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর একটি কবরের মধ্যে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে রাত ৮ টার দিকে এসে মরদেহ কবরের মধ্যে মাটি চাপা দিয়ে দেন।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোঃ আবু তারেক এ তথ্য জানান।

এর আগে রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত আড়াইটার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা গ্রামের সরকারি কবরস্থানের একটি কবরের ভেতর থেকে মাটি চাপা দেয়া হাত-পা বাধা অবস্থায় অর্ধগলিত শিশু আবু হুরাইরার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আবু হুরাইরা চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা গ্রামের ভুট্টা ব্যবসায়ী ও কৃষক আব্দুল বারেকের একমাত্র ছেলে। সে চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। আর হত্যাকারি আব্দুল মোমিন একই এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে। সে পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী।

১৯ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে আবু হুরায়রা পার্শ্ববর্তী বাড়ির রনজু হক নামের এক প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়তে যায়। ওই শিক্ষকের ঘরে বইব্যাগ রেখে সে বাইরে বের হয়। এরপর থেকে তাকে পাওয়া যায়নি। ওই দিন সন্ধ্যায় পরিবারের লোকজন খুঁজতে বের হয়। রাতে পুলিশকে খবর দেয় তারা। এলাকায় মাইকিংও করা হয়। পরে ধারণা করা হয় বাড়ির পাশে পুকুরে পড়েছে, সে জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এসে পুকুরে দীর্ঘসময় ধরে তল্লাশি করেন। তবু সন্ধান মেলেনি তার। পরে নিখোঁজের পর ২৫ জানুয়ারি বাবা আবদুল বারেক বাদী হয়ে প্রাইভেট শিক্ষক রঞ্জু, তাঁর ভাই মঞ্জু, মা মহিমাসহ পাঁচজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন। ওই দিনই রঞ্জু ও মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক বলেন, আবু হোরায়রা নিখোঁজের পর ২৫ জানুয়ারি বাবা আবদুল বারেক বাদী হয়ে প্রাইভেট শিক্ষক রঞ্জু, তাঁর ভাই মঞ্জু, মা মহিমাসহ পাঁচজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন। ওই দিনই রঞ্জু ও মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে তাঁদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এরপর এই ছাত্রের খোঁজে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু হয়।

তিনি বলেন, হত্যার কয়েকদিন পর প্রতিবেশি বাড়িতে একটি সিম কার্ড চুরি করে আবু মোমেন। সেই সিম কার্ড দিয়ে একসহযোগীকে দিয়ে আবু হুরাইরার বাবা আব্দুল বারেকের নিকট ১০ লাখ টাকা চাদা দাবি করে। এরপর টাকা চেয়ে পাঠানো হয় একটি চিরকুট। পুলিশ আব্দুল বারেকের মোবাইল নাম্বারের কল লিস্টের সুত্রে ধরে আব্দুল মোমেনকে রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারী) রাত ৮ টার দিকে নিজ এলাকা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে রাতে আব্দুল মোমেন হত্যার কথা স্বীকার করে। এরপর তার দেখিয়ে দেয়া কবরস্থানের মধ্যে থেকে মাটিচাওয়া দেয়া হাত-পা বাধা অবস্থায় আবু হুরাইরার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক বলেন, হত্যার কাজে আব্দুল মোমেন একাই অংশ নেই। পরবর্তীতে অন্য একজনের সহযোগীতায় আব্দুল বারেকের নিকট অপহরনের টাকা দাবি করেন। আমরা ওই সহযোগীকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাচ্ছি।

এসএ/