কোটি টাকার ব্রিজে উঠতে হয়ে কাঠের সাঁকো বেয়ে


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, ১২ই এপ্রিল ২০২৩


কোটি টাকার ব্রিজে উঠতে হয়ে কাঠের সাঁকো বেয়ে
কাঠের সাঁকো বেয়ে উঠতে হচ্ছে ব্রিজে

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় কোটি টাকার ব্রিজ এখন কাঠের সাঁকো হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের বানাতি বাজার ও মহল্লাপাড়া যাতায়াতের ব্রীজের কাজ শেষ হলেও দুই প্রান্তের মাটি ভরাটের কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। 


দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর ব্রীজের দুই প্রান্তে কাঠের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে এলাকাবাসী। এতে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। বর্ষা মৌসুমে এ কাঠের সাঁকো দিয়ে চলাচল অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ন হয়ে ওঠে। ব্রীজের দুই প্রান্তের মাটি ভরাটের কাজ শেষ করে ব্রীজটি জনসাধারনের চলাচলের উপযোগী করে দেয়ার দাবী জানান স্থানীয়রা। 


এদিকে ব্রীজের সংযোগ স্থলের জায়গা নিয়ে স্থানীয়দের সাথে জটিলতা থাকায় মাটি ভরাটের কাজ আটকে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান শাহিন গিয়াস উদ্দিন জেবি কন্সট্রাকশন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর।


উপজেলা প্রকৌশলী নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা যায়, লালুয়া ইউনিয়নের বানাতি বাজার সংলগ্ন এ ব্রীজটির ব্যয় নির্ধারন করা হয়েছে ২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। ২১ সালের মে মাস থেকে ২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এর সময়সীমা নির্ধারন করা হয়। 


কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারনে এখন পর্যন্ত এর কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। এ ব্রীজটি দিয়ে ইউনিয়নের মহল্লাপাড়া, চিঙ্গুড়িয়া, দশকানী, ছোনখলা, চরপাড়া, পশরবুনিয়া ও উত্তর লালুয়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ নিয়মিত যাতায়ত করে থাকেন। 


তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন কাজে জেলা ও উপজেলা শহরে এ ব্রীজ দিয়ে যাতায়ত করতে হয়। এছাড়া পায়রা কর্তৃপক্ষ ও শের-ই-বাংলা নৌঘাটির লোকজনদেরও বিভিন্ন সময়ে এ ব্রীজটি ব্যবহার করতে হয়। 


অথচ এ ব্রীজের দুই প্রান্তের সংযোগ সড়কের মাটি ভরাটের কাজ অসমাপ্ত থাকায় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এদের সকলকে। এ নিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয়রা বিপরীতমূখী অবস্থানে রয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বলছে জমির মালিকরা সংযোগ স্থলের জমি ছাড়তে অনিহা দেখাচ্ছে। 


তারা জমি ছেড়ে দিলে আমরা কাজ শেষ করতে পারি এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এদিকে জমির মালিকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা জানান, আমাদের কিছু ক্ষতিপূরন দিলেই জমি ছেড়ে দিবো। এমনকি তাদের কিছু ক্ষতিপূরন দেয়ার আশ্বাস দিয়ে একমাস সময় চেয়েছিলো পটুয়াখালীর পিডি (প্রজেক্ট ডিরেক্টর)। 


কিন্তু দুইমাস চলে গেলেও এখন পর্যন্ত তারা কোন খবর নেইনি বলে ওই জমির একাংশের মালিক হিরন মৃধা জানান। অথচ এদের একে অন্যের বিপরীতমূখী অবস্থানের কারনে যাতাকলে পরেছে সাধারন মানুষ। দৃশ্যমান একটি ব্রীজ থাকলেও তার সুফল ভোগ করতে পারছেন না কেহ। 


তবে পথচারীদের চলাচলের সুবিধার্থে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস ব্রীজের দুই প্রান্তে দুইটি কাঠের সাঁকো সংযোগ করে দেন। এ কাঠের সাঁকো দিয়েই মটরসাইকেল, অটোরিক্সা ও ভ্যানগাড়ীসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন অত্যান্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। 


বিকল্প পথ না থাকায় এ পথ দিয়েই চলতে হয় বলে একাধিক পথচারীরা জানান।

স্থানীয় একাধিক পথচারী বলেন, জমি নিয়ে যে বিরোধ ছিলো শুনেছি তার সমাধান হয়েছে। তাহলে কি কারনে ব্রীজের সংযোগ স্থলে এখন তারা মাটি দিচ্ছে না সে বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। অতিদ্রুত সম্পূর্ণ ব্রীজের কাজ শেষ করে জনগনের চলাচলের উপযুক্ত করে দিবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তারা।


বানাতী বাজার ব্যবসায়ী কমিটি’র সভাপতি মো. রুবেল হাওলাদার বলেন, ব্রীজটির সংযোগ কাজ শেষ না হওয়ায় প্রতিনিয়ত এখানে বিভিন্ন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটছে। জরুরী রোগী পারাপারে অনেক বেগ পোহাতে হয়।


লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্রীজটি অচল অবস্থায় পরে রয়েছে। সাধারন মানুষের ভোগান্তি ও দূর্ভোগের কথা চিন্তা করে ব্রীজের দুই প্রান্তে কাঠের সাঁকো সংযুক্ত করে কোন রকমে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তবে জনগনের স্বার্থে ব্রীজটির সংযোগ স্থলের মাটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি। 


স্থানীয়রা জমি না ছাড়ায় ব্রীজের সংযোগ কাজ আটকে রয়েছে বলে মন্তব্য করে উপজেলা প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল বারী পূর্ণ বলেন, জায়গা নিয়ে জমির মালিকদের সাথে জটিলতা থাকায় ব্রীজের কাজ শেষ হতে দেরি হচ্ছে। তবে, তারা জমি ছেড়ে দিলে আমরা দ্রুত কাজ শেষ করবো।


আরএক্স/