জীবন যুদ্ধে হার না মানা শিউলি

সংসার জীবন মানে যুদ্ধক্ষেত্র আর উদ্যোক্তা মানেই যোদ্ধা। সাহস আর কর্ম দক্ষতা না থাকলে যুদ্ধ ক্ষেত্র যেন মূল্যহীন। ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে বড় সহায়ক অর্থায়ন। অর্থ না থাকলেও স্বপ্ন ষোল আনা বিথা।
বিজ্ঞাপন
সংসার জীবন মানে যুদ্ধক্ষেত্র আর উদ্যোক্তা মানেই যোদ্ধা। সাহস আর কর্ম দক্ষতা না থাকলে যুদ্ধ ক্ষেত্র যেন মূল্যহীন। ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে বড় সহায়ক অর্থায়ন। অর্থ না থাকলেও স্বপ্ন ষোল আনা বিথা। আরও সেই যুদ্ধক্ষেত্র নারীদের জন্য অনেকটা ব্যতিক্রমী। পোহাতে হয় অসংখ্য ঝামেলা একদিকে অর্থ সংকট অন্যদিকে ব্যাংকের ঋণ পাওয়া অনেক সহজ, কিন্তু ঋণ নিতে গেলে দেখা যায় নানা ভোগান্তি। এছাড়াও ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
ব্যবসা করতে হলে পুরুষের চেয়ে নারীদের সাহসী হতে হবে। তা না হলে সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায় না বলে মনে করেন তিশা পল্ট্রি এন্ড ডেইরী ফার্ম'র স্বত্বাধিকারী রুবা আক্তার শিউলী। প্রথমে তার স্বামী সংসারের লোকজন এবং বাবা-মাসহ আশেপাশের লোকজন সবার কাছ থেকেই প্রথমে এই ব্যাপারে নানান কথা শুনতে হয়েছে। বর্তমানে রুবা আক্তার শিউলী শুধু ডিমলা উপজেলার নয় নীলফামারী জেলারও একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। অজর্ন করেছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উদ্যোক্তা হিসেবে বিভিন্ন সম্মাননা ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলছেন, অর্থায়নই নারীদের ব্যবসার বড় বাধা। ব্যাংকগুলো সহজে ঋণ দেয় না, এ কারণে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় নারী উদ্যোক্তাদের। অন্যদিকে শ্বশুড়বাড়ীর পক্ষ থেকে সাপোর্ট না থাকায়, ২০০৫ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও ৯ বছরের মাথায় স্বামীর সংসারের হাল ধরতে হয়। ২০১৪ সালের একটি সড়ক দূর্ঘটনায় হারাতে হয় পরিবারের এক সদস্যকে আর পঙ্গুত্ব ও স্মৃতি হারাতে হয় নিজের স্বামীকে। স্বামীর কর্ম সক্ষমতা থাকাকালে শ্বশুড় বাড়ীতে দুই মেয়েকে নিয়ে অনেকটা সুখে জীবন যাপন করছিল। স্বামীর পঙ্গুত্ব বরণের পর থেকে চালানো হয় তার উপর ফিল্মি কায়দায় নির্যাতন।
বিজ্ঞাপন
২০১৪ সালে শ্বশুড়বাড়ীর অত্যাচারের কারণে দুই মেয়েকে নিয়ে বাবার বাসায় আবস্থান নিতে বাধ্য হয়। তিনি, আবারও শুরু করেন লেখাপড়া বছরের শেষে বিবিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেন। সেখানে উর্ত্তিণ হন। পরবর্তীতে স্নাতকোত্তরের জন্য ভর্তি হন নীলফামারী সরকারি কলেজে। দুই মেয়ের জীবন গড়তে আবারও ফিরে আসেন শ্বশুড় বাড়ীতে। শত কষ্টের মাঝেও তিনি, স্বামী-সন্তান কে নিয়ে সংসার শুরু করেন।
একদিকে স্বামীর দীর্ঘদিনের অসুস্থ্যতা অন্যদিকে মাথার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলা, আবার শ্বশুড় পরিবারের লোকজন জমি-জমা দখল নেন। সংসারের হাল ধরতে ২০১৯ সালে নারী উদ্যোক্তা ফরম পূরণ করেন সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহনের পরে ''পল্ট্রি ফার্ম'' দেন। সূচনার দিকে কম মুরগী থাকলেও বর্তমানে সেখানে ১২ শতাধিক মুরগী রয়েছে তার ফার্মে। প্রতিদিনে আউটপুট হয় ১১০০-১০৫০টি ডিম । দেখ-ভালের জন্য রয়েছে তিনিসহ আরও একজন। পাশাপাশি শুরু করেছেন ডেইরী ফার্ম। ২০২০ সালে সেই ফার্মে ১০ গাভী থাকলেও বর্তমানে রয়েছে অষ্টলিয়ান জাতের ৪টি গাভী। আর করোনাকালে ব্যবসায় লোকসান ও অর্থ সংকটে বিক্রি করতে হয় ৬টি গাভী।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে বড় মেয়ে নুরে তাছসিন তিশা'র বয়স ১৫ বছর, সে একটি সরকারি বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত আর ছোট মেয়ে অতিশী হাসান ঐশি বয়স তার ১৪ বছর, সে রংপুরে তানজিমুল উম্মাহ নামে একটি একাডেমিতে ৮ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। তিনি, ফার্মের পাশাপাশি প্যারাগন এগ্রো লিমিটেডের একজন ডিলারও বটে। যদি সরকারী বা কোনো সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পাশে পায় তাহলে নিজের প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও নারী উদ্যোক্তা তৈরীতে অবদান রাখবে তিনি।
বিজ্ঞাপন
ডিমলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাঃ মদন কুমার রায় বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তা খুব দুর্লভ বিষয় ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী গ্রামে রুবা আক্তার শিউলী নারী উদ্যোক্তা ২০২৩ সালের প্রাণী পরিদর্শন মেলায় অংশ গ্রহন করেছিল। তার একটি লেয়ার ফার্ম আছে পাশাপাশি তিনি একটি ডেইরি ফার্ম দিতে আগ্রহী আমরা তাকে সকল ধরণের সহযোগিতা করবো। যেন নারী উদ্যোক্তা সফল ভাবে দেশ গড়তে সহযোগিতা করতে পারে।
আরএক্স/








