সাধারণ মানুষের মতো অবসর যাপন করতে চান আব্দুল হামিদ
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০:৩২ অপরাহ্ন, ২৫শে এপ্রিল ২০২৩
আর সক্রিয় রাজনীতি করবেন না সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অবসরের দিনগুলো সাধারণ মানুষের মতো যাপন করতে চান ভাটি বাংলার এই সন্তান। বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেয়ার প্রাক্কালে এভাবেই নিজের ভাবনার কথা সাংবাদিকদের জানান আব্দুল হামিদ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ দুই মেয়াদে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন শেষে বঙ্গভবন ছেড়ে যান সোমবার দুপুরে। ওঠেন রাজধানীর নিকুঞ্জে তার নিজের বাড়িতে।
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে এর আগেও এসেছেন ১৫ জন। কারও বিদায় হয়েছে বেদনাবিধুর, কারও নীরবে, কারও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। কেউ একটি মেয়াদ শেষ করে অনাড়ম্বরে ছেড়ে গেছেন রাষ্ট্রপতির জন্য বরাদ্দ বাড়িটি। এ দিক দিয়ে ব্যতিক্রম আবদুল হামিদ, তাকে যে আড়ম্বরের সঙ্গে বিদায় দেয়া হয়, এর আগে কখনও তা দেখা যায়নি।
এর আগে বেলা ১১টায় নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে শপথ পড়ান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। সেই অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলা মনে কথা বলেন আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, আমি রিলিভড বোধ করছি। আমি খুবই আনন্দিত। ১০ বছর পরে আমি একটা মুক্ত জীবনে ফিরে যেতে পারছি। কারণ আপনার শুনেছেন, অনেক সময় আমি বলেছি- আমি একটা বন্দি জীবনে আছি। এর থেকে আমি মুক্তি পাচ্ছি। এখন আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি একটু ফ্রি লি মুভ করতে পারব। এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ।
সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতির কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, পরবর্তী জীবনে কী করবেন? জবাবে আবদুল হামিদ বলেন, আমি তো এখন রিটায়ার্ড হয়ে গেছি। দোজ হু আর টায়ার্ড, দে গো ফর রিটায়ার্ড। এখন বাড়ি বসে থেকে কিছু লেখালেখি করতে পারি। কিন্তু সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করার পরিকল্পনা নেই।
কারণ, দেশের মানুষ আমাকে এত বড় ইজ্জত দিয়ে দুই মেয়াদে দেশের সর্বোচ্চ পদে রাষ্ট্রপতি করেছে। সুতরাং আবার আমি রাজনীতি করা বা অন্য কোনো পদে যাব—এটা করলে এ দেশের মানুষকে আমি হেয় করব। সুতরাং সেটা আমি করব না।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হাওরের মুক্ত পরিবেশে বেড়ে উঠা আবদুল হামিদ রাজনীতি জীবনের শুরু থেকেই হয়ে উঠতে চেয়েছেন সবার প্রিয় হামিদ ভাই।
তার প্রিয় এই ‘ভাই’রা কখনও তাকে নিরাশ করেননি। স্বাধীনতার আগে ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে সে সময়ের মংয়মনসিংহ-১৮ (বর্তমানে কিশোরগঞ্জ-৪) আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি নির্বাচন করেন। স্বাধীন দেশে আরও সাতবার ভোটে জিতে তার প্রতি আস্থা-বিশ্বাস আর ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে ডেপুটি স্পিকার এবং ২০০০ সালে তিনি হন স্পিকার। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে আবার পান সংসদ পরিচালনার দায়িত্ব।
২০১৩ সালে সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অসুস্থ হলে প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তিনি মারা গেলে ওই বছরের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন আবদুল হামিদ। ১০ বছর পর এই ২৪ এপ্রিলই মেয়াদ শেষে বঙ্গভবন ছেড়ে তিনি উঠলেন ঢাকায় তার আপন নিবাস নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকার বাড়িতে।
২০০০ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে তিন কাঠার জমিটি বরাদ্দ পেয়েছিলেন তিনি। কয়েক বছর পর সেখানে তোলা হয় তিন তলা বাড়িটি।