কুয়াকাটায় ভাসমান দোকানপাট স্থান্তরে সমুদ্র সৈকতে ফিরেছে নান্দনিক সৌন্দর্য
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:২০ পূর্বাহ্ন, ২রা মে ২০২৩
সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবারের ঈদে ঝঞ্জালমুক্ত নান্দনিক দৃশ্য উপভোগ করেছেন পর্যটকরা। এখন থেকে সমুদ্র সৈকতের সোন্দর্য বর্ধন রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা অব্যাহত থাকবে বলে জানান জেলা প্রশাসন।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জিরোপয়েন্ট এলাকা হতে পূর্বে ও পশ্চিমে এক কিলোমাটারের বাইরে জাল নৌকা স্থান্তর করাসহ বীচ বাইক, মটর বাইক প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয় এবং সৈকতের ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আধা কিলোমিটার পূর্বে নির্দিষ্ট স্থানে বসানোর মাধ্যমে পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা করে পর্যটকদের মনোরম সৈকত উপহার দিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করেন প্রশাসন। এতে কিছু ভাসমান ব্যবাসায়ীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেও অনেক ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। দেখা গেছে সৈকতের নিয়ম মানতে আবার অনেককেই প্রশাসনের দেয়া নির্দেশনাকে উপেক্ষা করার ফলে করা হয়েছে অর্থদন্ড।
এর পূর্বে সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশ কয়েক বছরধরে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের আধা কিলোমিটার এলাকার মধ্যে যত্রতত্রভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে যার মতো মনগড়া ভাসমান দোকানপাট বসিয়ে কেনা-বেচা করছে! যা পরিবেশ প্রতিবেশ বিনষ্ট সহ পর্যটন কেন্দ্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পরেছে।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জিরোপেন্টের দুইদিকে আধা কিলোমিটারে মধ্যেএখন আর পূর্বের সেই বিচ্ছিন্ন পরিবেশ বিরাজমান নেই। তাই বর্তমানের যে ভিন্ন চিত্র তৈরী হয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের তা পর্যটকদের ভ্রমনের জন্য পরিবেশ উপযোগী ও মানসম্মত বলে মন্তব্য করেন আগাত পর্যটক দর্শনার্থীরা।
তবে বর্তমানে সকল ভাসমান ব্যবাসায়ীদের স্থান্তর করা হলেও ঐদিকে অনেকেই জিরোপয়েন্ট এলাকায় সড়কের দুইপাশে আবারো দোকান বসানোর পায়তারায় টেবিল, চেয়ার-বাক্স গেড়ে এখনো বসে আছে, এতে কুয়াকাটা পর্যটনের প্রধান কেন্দ্রস্থলে পরিবেশের অনুপযোগী হিসেবে সরেজমিনে দেখা গেছে। এসব অবৈধ দখল একটি প্রভাবশালী সেন্ডিকেট পরিচালনা করছে বলে সূত্রে যানা যায়।
জানা যায়, গত বছরের ১২ নভেম্বর সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দোকানগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসন। মূলত সৈকত এলাকার সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে এবং ৪৮নং পোল্ডারের পাউবো বেড়িবাধ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য এ সমস্ত ভাসমান দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হয়। তখন সৈকতের ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্থায়ীভাবে ব্যবসার পরিবেশ চেয়ে দাবী জানান। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে মৌখিক ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট জায়গায় বসানোর কথা বলা হয়েছিলো জানা যায়। যার সূত্র ধরে জেলে প্রশাসনের উদ্যোগে ভাসমান ব্যবাসীদের স্থায়ী বসানোর কার্যক্রম নেয়া হয়।
ঈদুল ফিতরের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী দীর্ঘসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন) মো. রবিউল ইসলাম ও কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার এর উপস্থিতীতে কুয়াকাটা ট্যুরিজম পার্কের পূর্বপাশে এসকল ভাসমান দোকানগুলো বসার জায়গা করে দেয়া হয়। নির্দিষ্ট স্থানে সারিবদ্ধভাবে ঔষধের দোকান, খাবার হোটেল, চায়ের দোকান, চটপটির দোকান, বার্মিজ আচারের দোকান, ফিশ ফ্রাইয়ের দোকানসহ অন্যান্য দোকানগুলো পুনঃবাসন করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট জায়গা পেয়ে ব্যবসায়ীরা দোকান নির্মাণের কাজ করেছেন। যার ফলে একদিকে সৈকতের সৌন্দর্য ফিরে এসেছে অন্যদিকে ভাসমান ব্যবাসায়ীরা নির্ভয়ে ব্যবসা করতে পারবেন।
জেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরাসহ স্থানীয়রা। তবে পুরানো ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ রয়েছে। পুরানো ব্যবসায়ীরা মুখশায় জায়গা দাবি করছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পুরানো ও নতুন ব্যবাসায়ী বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। তারা লটারীর মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষায় স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
সৈকতের ব্যবাসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের যেখানে বসানো হয়েছে এখানে পর্যটকরা আসছেন না। আমাদের ট্যুরিজম পার্কের পূর্ব পাশে না বসিয়ে পশ্চিম পাশে বসালে বেচাকেনা ভাল হতো।’
আবার অনেক ভাসমান ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, প্রতি বছর একবার দু’বার উচ্ছেদের কবলে পরতে হতো আমাদের। যার কারণে আমাদের অনেক ব্যবসায়ীদের মারাত্মক ক্ষতি হতো। এখন নির্দিষ্ট জায়গা পাচ্ছি। মনে হচ্ছে এখন থেকে নির্ভয়ে শান্তিতে ব্যবসা করতে পারবো। তবে এবারের ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটা বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসলেও আমাদের বেচাকেনা মোটেও ভাল হয়নি। সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে দূরত্ব বেশি হওয়ায় পর্যটকরা এতোদূরে আসছেন না।
কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল কতৃপক্ষরা জানান ‘কুয়াকাটার বিভিন্ন সংগঠনের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো দোকানগুলো এক জায়গায় নেয়ার। অবশেষে সেটা হচ্ছে, এতে সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। সৈকতের প্রবেশ পথ একটি থাকার কারণে পর্যটকদের চাপের সময় সৈকতে ওঠা নামা করতে নানা সমস্যা হয়। দোকানগুলো স্থানান্তরিত হবার ফলে সমস্যার সমাধান হলো। জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রসংশার দাবি রাখে’।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন (কুটুম) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, জেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সফল হলে কুয়াকাটা সৈকত এলাকার সৌন্দর্য ফিরে আসবে।
এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘কুয়াকাটার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বার বার উচ্ছেদের কবলে পরে নিঃস্ব হয়ে যায়। যেখানে সেখানে দোকানগুলো থাকলে সৈকতের পরিবেশ নষ্ট হয়। আমি জেলা প্রশাসকের সাথে বার বার এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। অবশেষে দোকানগুলোকে নির্দিষ্ট জায়গা বসাতে পারছি। এতে দোকানীরা পাবে ব্যবসার সুষ্ঠ পরিবেশ, সৈকতে বাড়বে সৌন্দর্য।’
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুয়াকাটার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বার বার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু পুনঃবাসন করা হয়নি। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মহোদয় স্থায়ীভাবে পুনঃবাসনের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে সম্ভব হয়নি। তাই আপাতত অস্থায়ীভাবে সৈকতের আশেপাশে এলোমেলো বসে থাকা দোকানগুলো ট্যুরিজম পার্কের পাশে বসানো হচ্ছে। পরবর্তীতে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের সেখানে স্থানান্তর করা হবে।
আরএক্স/