বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯:৩১ অপরাহ্ন, ২রা মে ২০২৩


বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব
ফাইল ছবি

যুদ্ধ, মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তন-এই তিন প্রভাবে বর্তমান বিশ্ব অন্যতম প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। এর ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট এবং গুরুতর খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা গোটা বিশ্বে দুর্ভিক্ষের সংকেত দিচ্ছে। যদিও মহামারি ও যুদ্ধ তুলনামূলকভাবে নতুন ঘটনা; জলবায়ু পরিবর্তন তো কয়েক দশক ধরে চলমান। জলবায়ু পরিবর্তন আবহাওয়ার ঘটনা যেমন খরা, বন্যা, দাবদাহ, মাটির নিম্ন-উর্বরতা হেতু উৎপাদন হ্রাস, বৃষ্টির অস্বাভাবিক ধরন এবং ভারী সার ব্যবহার থেকে অ্যাসিড বৃষ্টি ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত। এই দুষ্টচক্র সব ধরনের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টি, পরিবেশের ক্ষতি, পানির অভাব এবং নতুন নতুন মানুষ, উদ্ভিদ ও প্রাণীর রোগের উদ্ভব ঘটায়।জলবায়ু পরিবর্তন সরাসরি মাটির উর্বরতা, বৃষ্টির ধরন, ফসলের ফলন এবং খাদ্য উৎপাদন, পুষ্টি উপাদান এবং পুষ্টির জৈব উপলভ্যতাকে প্রভাবিত করে পুরো খাদ্যব্যবস্থাকে বিরূপ করে। এসব পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহে ম্যাক্রো ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট হ্রাস করে। পরোক্ষ প্রভাব হিসেবে আরও সমস্যা যেমন কীটপতঙ্গ দ্বারা খাদ্যশৃঙ্খলের বিভিন্ন পর্যায়ে নষ্ট হওয়া এবং খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ায়।খাদ্যব্যবস্থার আওতায় উৎপাদন, সংগ্রহ, পরিবহন, প্রক্রিয়াকরণ, বণ্টন, বাণিজ্য ও বিপণন, নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যের ব্যবহার এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্য, আর্থসামাজিক এবং পরিবেশের ফলাফল অন্তর্ভুক্ত। নব্যপ্রস্তর বিপ্লবে কৃষির আবির্ভাব প্রধানত উদ্ভিদভিত্তিক খাদ্যের দিকে মোড় নেয়। খাদ্যব্যবস্থা আরও বিকশিত হয়েছে নগরায়ণ, খাদ্য সঞ্চয় ও পরিবহনব্যবস্থা, বাণিজ্য রুট এবং ভোক্তা চাহিদার উন্নয়নের সঙ্গে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রক্রিয়াজাত, শক্তি ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ঘন খাবারের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ এবং পরিবহনে বিপ্লব ঘটিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যের পুষ্টি উপাদান পরিবর্তন করে মানুষের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। 


উচ্চ মাত্রার কার্বন ডাই-অক্সাইডের ফলে ফসলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে বটে, কিন্তু উদ্ভিদের প্রোটিন উপাদান এবং ক্যালসিয়াম,আয়রন, জিঙ্কের মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস হ্রাস করে। উচ্চতর কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবেশে উৎপাদিত হওয়া বেশির ভাগ ফসলের ভোজ্য অংশে নাইট্রোজেন এবং প্রোটিনের ঘনত্ব হ্রাস পায়। ক্রমবর্ধমান প্রাণিজ খাদ্য ব্যবহার এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যের মধ্যে একটি বিপরীত সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া পরিবেশের ওপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলে। এটি বৈশ্বিক পুষ্টির অবস্থার উন্নতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ, কেননা প্রাণিজ উৎসের খাবার গ্রহণের সঙ্গে ছোট শিশুদের উন্নত বৃদ্ধি এবং বিকাশ যুক্ত। কারণ, প্রাণিজ খাবার থেকে প্রোটিন এবং আয়রনের মতো পুষ্টির জৈব উপলভ্যতা বেশি। বিকল্প প্রোটিন উৎস যেমন উদ্ভিদ প্রোটিন, ভোজ্য পোকামাকড়, সামুদ্রিক শৈবাল, অণু শ্যাওলা এবং কোষ কালচারভিত্তিক প্রোটিন কম পরিবেশগত ক্ষতচিহ্ন রাখতে পারে। জলবায়ুবিষয়ক সব আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনে সপ্তম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে। বর্ধিত তাপ মাত্রায় জনজীবন এখনই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। চলতি মাসে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখা যায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় দুবাই, কুয়েত সিটির মতো বিশ্বের উষ্ণতম শহরগুলোর তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ৩০ মার্চ জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং জানান যে জলবায়ু টাইম বোমা বিস্ফোরণের পথে।২০১৫ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষ আরও বেশি ক্ষুধার্ত ও বাস্তুচ্যুত হবে, যা বিশ্বে সংঘর্ষ বাড়িয়ে তুলবে। জলবায়ুবিষয়ক সব আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনে সপ্তম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে। বর্ধিত তাপমাত্রায় জনজীবন এখনই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এখনই না থামালে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্ব আরও ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ হয়ে যাবে।


এই শতকের শেষ পর্যন্ত বিশ্ব শিল্পবিপ্লবের সময়ের তুলনায় আরও ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণ হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব এই সপ্তম পরিবেশগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের ওপর কি হতে পারে? পৃথিবী প্রতিবছরই তার কার্বন নিঃসরণের রেকর্ড ভাঙে, যা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটা বড় কারণ। মানুষের নিজেদের ব্যবহার ও বাজার সিদ্ধান্ত গুলোই মূলত প্রকৃতিকে কার্বনসমৃদ্ধ করার জন্য দায়ী। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ হয় কয়লা ও তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় আমাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য। বিগত ৭০ বছরে পৃথিবীর জনসংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে। পৃথিবীর জনসংখ্যার ১৮.৫ শতাংশ নিয়ে চীন সবচেয়ে বেশি, ২৭ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র ১১ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করছে পৃথিবীর জনসংখ্যার ৪.৩ শতাংশ মানুষ নিয়ে। কার্বনের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করছে বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো আর জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশগত ভাবে নাজুক দেশগুলো। বাংলাদেশের ১১০ মিলিয়ন মানুষ নদী বা জলাশয়ের কাছাকাছি বাস করে। এখনো বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ লোক গ্রামাঞ্চলে বাস করে। দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ কৃষিনির্ভর জীবিকা নির্বাহ করে। ১.৫ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণ নদী, জলাশয় ও সমুদ্র থেকে মাস সংগ্রহ করার কাজে যুক্ত। মৎস্যসম্পদ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৩.৮ শতাংশ অর্থ যুক্ত করে এবং বাংলাদেশের মানুষের খাবারে প্রোটিনের একটি বড় উৎস। বাংলাদেশের ২ শতাংশ মানুষ বননির্ভর কাজ করে এবং এই সম্পদ থেকে অর্থনীতিতে ৩ শতাংশ যুক্ত হয়। প্রাকৃতিক এসব সম্পদ শুধু জীবিকা ও অর্থনীতিকেই না, জীববৈচিত্র্যকেও সমৃদ্ধ করে। বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য কেবল সৌন্দর্যে না, বৈচিত্র্যেও ভরপুর বলেই বিশ্বে বিরল ধরনের। এই ছোট একটি ভূখণ্ডে পাঁচ ধরনের জীববৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। 


বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা এই বিস্তৃত জীববৈচিত্র্যকে ধারণ ও পালন করেই গড়ে উঠেছে। বায়ুমণ্ডলে অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে বিশ্বব্যাপী চরম জলবায়ু অবস্থা দেখা দিচ্ছে তাতে ঝড়, দাবদাহ, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা, আকস্মিক বন্যা, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন,নদী শুকিয়ে যাওয়ার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সঙ্গে মাটির নিচের পানির স্তর শুকিয়ে যাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পরিবেশে স্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি হয়, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষের খাদ্যাভ্যাসে ৫ গ্রাম লবণ প্রয়োজন দৈনিক, যার প্রায় পুরাটাই দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ পায় পানি থেকে। লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে ওই অঞ্চলে মানুষের মাঝে হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভপাতের মতো শারীরিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে।বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সমুদ্র-তীরবর্তী এলাকায় লবণাক্ততা বাড়বে ২৬ শতাংশ। তাতে কেবল মিঠাপানির অভাব দেখা দেবে না, সমুদ্রনির্ভর জীববৈচিত্র্য চক্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাতে প্রকৃতির ওপর নির্ভর মানুষের জীবন ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, মানুষ শহরমুখী হবে, প্রকৃতি অসহনীয় হয়ে পড়বে, খাদ্যাভাব হবে। আন্তোনিও গুতেরেস বলছেন, আর সময় নষ্ট করা সম্ভব না। জল বায়ুর এই দ্রুত পরিবর্তন ঠেকাতে আমাদের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্বের শক্তিধর ও সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো কার্বন উৎপাদন বন্ধ করলেই জলবায়ু পরিবর্তনের গতি কমে আসবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে হঠাৎ করে সব কল-কারখানা, যাতায়াত, বাণিজ্য-সবকিছু বন্ধ করে কার্বন নিঃসরণ এ মুহূর্তেই বন্ধ করা সম্ভব না। তবে সদিচ্ছা থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। যদিও সেই পথে বর্তমানে যথেষ্ট বাধা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে নানান স্বার্থের দ্বন্দ্বে বিভক্ত। 


আমেরিকা ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করতে চায়, রাশিয়া চায় না তাঁর দ্বারপ্রান্তে পশ্চিমা শক্তি বসে তাঁর ওপর নজরদারি করুক তাই সে ইউক্রেন দখল করতে ব্যস্ত।

 

রাশিয়ার এমন আগ্রাসনে আমেরিকা রাশিয়াকে এমনভাবে পরাজিত করতে চায় যেন সে আর কখনো কোনো দেশ দখল করার সামর্থ্য না রাখে। ভারত সাগর, প্যাসিফিক সাগর ও ইউরোপ ও এশিয়াব্যাপী চীন তাঁর বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। আমেরিকা চীনের উন্নয়ন ঠেকাতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বাণিজ্যকে। তাতে পুরো এশিয়া বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে দুই বলয়ে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে এই যুদ্ধে সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে। জলবায়ু পরিবর্তন ও শরণার্থী সমস্যার মতো জরুরি বিষয়গুলো যুদ্ধের সামনে যেন নগণ্য হয়ে না পরে তার জন্য বিশ্বের জনগণকে এক হতে হবে। যার যার সরকারকে চাপের মুখে ফেলতে হবে পরিবেশবান্ধব নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। পরিবেশ বাঁচাতে হলে সব রাষ্ট্রকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। পৃথিবী ৩৫০ মিলিয়ন বছর ধরে সাতটি পর্যায়ে পরিবর্তন হয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে। তবে বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তন যেকোনো সময়ের থেকে বেশি ভয়াবহ। কারণ, এর পরিবর্তনের গতি অনেক দ্রুত ও এর প্রভাব পড়বে অনেক বড় জনগোষ্ঠীর ওপর। বিখ্যাত ভারতীয় পরিবেশবিদ বন্দনা শিবা পরিবেশের এই পরিস্থিতিকে বলছেন ‘জলবায়ুগত বিশৃঙ্খলা’। মানুষ আর প্রকৃতির মধ্যে যখন ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় তখন একে-অপরের ওপর নির্ভরশীলতার সম্পর্কটাও ভেঙে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি ক্ষতবিক্ষত হবে প্রকৃতি। তাই এই সমস্যা মোকাবিলা করতে হলে মানুষ ও প্রকৃতিকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের ক্ষমতা নেই প্রকৃতিকে বাঁচানোর। মানুষ কেবল তাঁর নিজের ব্যবহার সংশোধন করতে পারে। পরিবেশের ক্ষয় হয়, এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। 


প্রাকৃতিক সম্পদের অহেতুক বাণিজ্যিকীকরণ করে প্রতিনিয়ত প্রকৃতি থেকে সম্পদ না নিয়ে তাঁকে সময় দেওয়া দরকার পুনরুৎপাদনের জন্য। জীববৈচিত্র্যে মানুষ একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। মানুষের জন্য জীববৈচিত্র্য না, বরং জীববৈচিত্র্যের জন্য মানুষ। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। আর দেড় দশকে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে চলে যাবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভের স্বপ্ন যেন মানুষের লালসায় পরিণত না হয়ে মানুষ ও পরিবেশকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়। পশ্চিমা দেশের কর্মের প্রভাবেই বাংলাদেশের চরম জলবায়ু অবস্থা-ভেবে অসহায়বোধ না করে নিজেদের করণীয় করা প্রয়োজন। প্রকৃতি তাঁর নিজস্ব পদ্ধতিতে নিজের ক্ষত পূরণ করে। তাঁকে সময় দেওয়া প্রয়োজন প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের জ্ঞান অর্জন করতে হবে প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত মানুষের কাছ থেকে। বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তা ও গ্রামপর্যায়ের মানুষের থেকে এই জ্ঞান আহরণ করে জীববৈচিত্র্যকে আবার সমৃদ্ধ করতে হবে। তখনই প্রকৃতি নিজস্ব শক্তিতে তাঁর প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়তে পারবে। পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে পরিবেশগত ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে মানুষের জন্য ও পরিবেশের জন্য। প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে প্রয়োজন সদিচ্ছা, সহযোগিতা, ব্যবস্থাপনা, উদারতা, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা। বাংলাদেশের জনগণকে যেই প্রকৃতি খাবার সংগ্রহ করে, বাসস্থান দেয়, জীবিকা, সংস্কৃতি ও অনুভূতি দেয় তাঁর নিরাপত্তায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে পুরো বিশ্বকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। ভয়াবহভাবে বিভক্ত জনগোষ্ঠীকে এই পরিবেশই হয়তো এক করতে পারে যদি মানুষ সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জনস্বার্থে। ফলে প্রান্তিক জাতি বা দেশ সমূহ ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্য লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড নামক আলাদা তহবিল চেয়ে আসছে উন্নত দেশগুলোর কাছে।