তিন বছর ধরে নলকূপ থেকে বের হচ্ছে গরম পানি!


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:৪১ অপরাহ্ন, ৭ই মে ২০২৩


তিন বছর ধরে নলকূপ থেকে বের হচ্ছে গরম পানি!
নলকূপ থেকে বের হচ্ছে গরম পানি

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী (গিলারচালা) এলাকার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন নিরাপদ পানির আশায় গভীর নলকূপ স্থাপন করেছিলেন, কিন্তু ওই নলকূপ থেকে বের হচ্ছে গরম পানি। নলকূপ স্থাপনের  কিছুদিন ঠান্ডা পানি বের হলেও গত তিন বছর যাবত নলকূপ থেকে বের হচ্ছে গরম পানি । 


শনিবার (৬ মে) স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত এই গরম পানির রহস্য বা অজানা বিষয়টি  জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানালে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ল্যাবে  আর্সেনিক পরীক্ষা রহস্য জানাবেন।


ওই বাড়িতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গভীর নলকূপ থেকে গরম পানি বের হচ্ছে খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে আশপাশের বাসিন্দারা ওই বাড়ীতে এসে পানি নিজ হাতে ছুঁয়ে দেখছেন।    


ওই সময় উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা রাশিদুল জানান, ২৬০ ফুট গভীর নলকূপ দিয়ে গরম পানি বের হচ্ছে। তবে কেন এবং কী কারণে নলকূপ থেকে গরম পানি বের হচ্ছে, এর কারণ কেউ বলতে পারছে না।


একই এলাকার সুফিয়া আক্তার জানান, সাহাব উদ্দিনের নলকূপের পানি অনেকটা গরম পানির মতো। বাড়ির ভাড়াটিয়ারা পানি ব্যবহারের কয়েক ঘন্টা আগে পানি সংরক্ষন করে পাত্রে রেখে দেয়। পরে পানি ঠান্ডা হলে ওই পানি তারা ব্যবহার করে। তবে সাবানের পানির মতো এই পানি অনেকটা পিচ্ছিল। এটার গন্ধটাও একটু অন্যরকম।


শাহাব উদ্দিনের ছেলে কাউসার জানান, প্রায় ১৫/১৬ বছর আগে বসত ঘরের সামনে তার বাবা গভীর নলকূপ স্থাপন করে। পরে ওই নলকূপ থেকে নিয়মিত গরম পানি বের হতে থাকে। পরে সুপেয় ও নিরাপদ ঠান্ডা পানি উত্তোলনের আশায় মটর উঠিয়ে পাঁচ হাত দূরে বাড়ীর পাশেই প্রায় ৮ বছর আগে আবার গভীর নলকূপ স্থাপন করে। তখন ওই নলকূপ থেকে ঠান্ডা পানি বের হলেও গত তিন বছর যাবত পানিতে গরম অনুভূত হচ্ছে। ঠান্ডা পানির বদলে গরম পানি বের হচ্ছে। তাৎক্ষকি ওই নলকূপ থেকে বের হওয়া পানি কোন কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।  


সাহাব উদ্দিনের বাড়ীর ভাড়াটিয়া মোসাম্মৎ নাসিমা আক্তার মিমি জানান, তিনি গত পাঁচ বছর যাবত এ বাড়িতে ভাড়া থাকেন। আগে পানি ভালো ছিল। গত তিন বছর যাবত গরম পানি বের হওয়ায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ পানি দিয়ে গোসল করা যায় না। পানি ব্যবহার করলে শরীর চুলকায়, মাথার চুল পড়ে যায়। হাত-মুখ ধুয়ে স্বস্তি পাওয়া যায় না। ফ্রিজে পানি সংরক্ষন করে ঠান্ডা হলে তারপর ব্যবহার করতে হয়। তাছাড়া ফ্রিজের পানি দিয়ে গোসল করালেও ঠান্ডা লেগে যায়।


সাহাব উদ্দিন বলেন, প্রথমে বসত ঘরের সামনে ২২০ ফুট গভীর নলকুপ স্থাপন করে পানি ব্যবহার করছিলেন। হঠাৎ করে নলকূপের পানির অস্বাভাবিক রং ধরা পড়ে এবং হালকা গরম পানি বরে হতে থাকে। পরে এই নলকূপের ৫ হাত দূরত্বে ২৬০ ফুট গভীরতা করে আরেকটি নলকূপ স্থাপন করি। নতুন নলকূপ থেকে প্রথম কয়েকদিন ঠান্ডা পানি বের হয়েছিল। এই নলকূপে তিন বছর আগে থেকে গরম পানি আসা শুরু করে। বছর তিন যাবত নলকূপের পানি কুসুম কুসুম গরম। সংরক্ষন করে ঠান্ডা হওয়ার পর এই পানিই ব্যবহার করতে হচ্ছে। পানি গরম হওয়ায় আমার বাড়ীর ভাড়াটিয়া আসে না। যারা ভাড়া আছে তারাও বাসা খঁজুতেছে চলে যাওয়ার জন্য। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে নতুন করে নলকূপ বসানো হলেও পানির কোনো পরিবর্তন হয়নি।  


তিনি আরো বলেন, আমার বাড়ীর পাশেই প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের ডাইং প্ল্যান্টের স্থাপন করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করলে তাদের নির্ধারীত প্রকোৗশলী এসে বিষয়টি দেখে সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু দেখি দেখি বলে তিন বছর পার করে দিলেও কোনো সামাধান দিচ্ছেন না।


স্থানীয় পরিবেশকর্মী খোরশেদ আলম বলেন, গরম পানি বের হওয়ার খবরে আমি নিজ উদ্যোগে ওই নলকূপের পানি সংগ্রাহ করে বেসরকারী কয়েকটি দপ্তরে পাঠিয়েছি। কেন গরম পানি বরে হচ্ছে তা পরীক্ষা ছাড়া বলা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।


শ্রীপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সহকারী প্রকৌশলী ফয়সাল খান জানান, গভীর নলকূপ থেকে গরম পানি বের বিষয়টি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধমের জানতে পেরেছেন। শনিবার অফিস বন্ধ তাই রবিবার অফিস সময়ে তিনি বিষয়টি দেখবেন। 


আরএক্স/