কুমিল্লায় যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আটক ৩


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, ৮ই মে ২০২৩


কুমিল্লায় যুবলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আটক ৩
আটককৃত তিন আসামী

কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন গৌরীপুর পশ্চিম বাজার মসজিদের সামনে (৩০ এপ্রিল) রাতে তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন (৪৫) খুন হন। ঐ দিন রাত আনুমানিক ৮ টার দিকে ৩ জন বোরকা পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন গৌরীপুর পশ্চিম বাজার সংলগ্ন মসজিদের পাশে একটি দোকানের সামনে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় জামাল হোসেনের উপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। 


এই সময়ে বোরকা পরিহিত হামলাকারীরা জামালের উপর এলোপাথাড়ি ভাবে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। অতঃপর ভিকটিম জামাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। 


আহত জামালকে ঘটনাস্থলের উপস্থিত লোকজন গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে মৃত ঘোষণা করে। 


পরবর্তীতে পরিবার আরো নিশ্চিতের জন্য ভিকটিম জামালকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকও তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


হত্যাকান্ডের এই ঘটনাটি দেশব্যাপী বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। হত্যাকান্ডের পরপরই র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব সদর দপ্তরের একাধিক গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং আসামীদের সনাক্তকরণের নিমিত্তে কাজ শুরু করে। 


উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় (২ মে) নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 


ঘটনাস্থল ও ঘটনাস্থলের আশেপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বোরকা পরিহিত ৩ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী স্বাভাবিক পথচারীর বেশে ঘটনাস্থলে আসে। 


এসময়ে ভিকটিম জামাল এজাহারনামীয় ৩নং আসামী মোঃ ইসমাইল (৩৬) ও এলাকার পূর্ব পরিচিত কয়েক জন ব্যক্তির সাথে একটি দোকানের সামনে অবস্থান করছিল। বোরকা পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অতর্কিত ভিকটিম জামালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। 


এসময় ভিকটিম জামাল এর সাথে বোরকা পরিহিত একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর ধস্তাধস্তি হয় এবং ভিকটিম জামাল তাকে ঝাপটে ধরে ফেলে। তখন সাথে থাকা বোরকা পরিহিত অপর একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জামালকে লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং বোরকা পরিহিত অপর ব্যক্তি তার সাথে থাকা পিস্তল দিয়ে ভিকটিম জামালকে খুব কাছ থেকে মাথায় ও বুকে গুলি করে দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। 


এ ঘটনায় অন্য আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আসামীরা দৌড়ে পালানোর সময় একজনের বোরকার মুখের আবরণ খুলে যায় ও একজনের সাথে আরেকজনের ধাক্কা লেগে একজন আসামীর হাত থেকে তার সাথে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রটি মাঠিতে পড়ে যায়। পরবর্তীতে অস্ত্র কুড়িয়ে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। 


ভিডিও ফুটেজ, গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী বোরকা পরিহিত ব্যক্তিদেরকে সনাক্ত করা হয়েছে। সকল তথ্য উপাত্ত, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মাঠ পর্যায় হতে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় (৬ মে) দিনে ও রাতে অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম জেলার আগ্রাবাদ এলাকা, ঢাকা জেলার রায়েরবাগ এলাকা ও কালশী, মিরপুর এলাকা হতে উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় ৩ নং আসামী মো. ইসমাইল (৩৬), পিতা-খুরশিদ মিয়া, ৪ নং আসামী মোঃ শাহীনুল ইসলাম @সোহেল শিকদার(৪০), পিতা-মোঃ আক্তার হোসেন শিকদার, ৭ নং আসামী শাহ আলম @পা কাটা আলম (৩৬), পিতা-মৃত বজলুর রহমান, গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। 


উক্ত ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিম জামালের হত্যার বিষয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ডটি সংঘঠিত হয়েছে। 


আরএক্স/