লোকালয়ে বন্য হাতি, ঘুম নেই আনোয়ারাবাসীর


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


লোকালয়ে বন্য হাতি, ঘুম নেই আনোয়ারাবাসীর

নির্বিচারে বনভূমি উজাড় করায়  খাদ্য ও আবাসস্থল সংকটে বিপন্ন বন্য হাতি। ফলে প্রায়ই লোকালয়ে ঢুকে মানুষের ওপরআক্রমণ করছে হাতি। এতে অনেকের প্রাণহানি ঘটছে।বিভিন্ন এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণের আশঙ্কায় জানমালেরনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মানুষ।কারো বসতবাড়ি ভাঙছে, কারো ভাঙছে দোকানপাট, খেয়ে ফেলছে গাছ-পালা, নষ্ট করছে ফসলিজমি। কখনো ঘরে দিচ্ছে হানা, কখনোবা রাস্তায় দিচ্ছে পাহারা। এইভাবে সন্ধা নামলেই প্রতিদিন হাতির আতংকে জানমাল নিয়েসঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, বারশাত, বটতলী ও বারাখাইন ইউনিয়নের মানুষেরা।

শিল্পকারখানা প্রতিনিয়ত গিলে খাচ্ছে পাহাড়, সঙ্কুচিত হয়েছে বসবাসের স্থান, বেড়েছে খাদ্য সঙ্কট। এই কারণেই সন্ধা নামলেইউপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের দেওয়ান বাজার, গুয়াপঞ্চক, খাঁনবাড়ী, মোহাম্মদপুর, বদলপুরা, বন্দর, বারশত ইউনিয়নেরকবিরের দোকান, পশ্চিমচাল, কান্তিরহাট, বটতলী ইউনিয়নের জয়নগর, ছিরাবটতলী, গুচ্ছগ্রাম, জয়নালপাড়া ও বারখাইনইউনিয়নের হাজীগাঁও গ্রামে অবাদে হানা দিচ্ছে হাতির দল। মাঝে মাঝে দিনের আলোতেও এসব এলাকার ফসলি জমিতেবিচরণ করতে দেখা যায় তাদের।

স্থানীয়রা জানান, গত বছর পাঁচেক আগে বাঁশখালীর পাহাড় থেকে বন্য হাতির একটি দল দেয়াং পাহাড় এবং আশেপাশেরপাহাড়ে অবস্থান নেয়। সন্ধা হলেই তারা খাদ্যের সন্ধানে কর্ণফুলী উপজেলার বেশকটি এলাকায় এবং আনোয়ারা উপজেলারবৈরাগ,বারশাত, বটতলী, এবং মাঝে মাঝে বারখাইন ইউনিয়নে নেমে এসে মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, গাছপালা, গাবাদীপশু এমনকি মানুষের জানেরও ক্ষতি করে। গত পাঁচ বছরে মসজিদের ইমাম,পাহারাদার,প্রতিবন্ধীসহ আনুমানিক কর্ণফুলী ওআনোয়ারা উপজেলার ১৭ জনের প্রাণহানি এবং অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন বলেও স্থানীয়রা জানান।

সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কর্ণফুলী বড়উঠান ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভক্তপাড়া গ্রামেবন্য হাতির তাণ্ডবে গার্মেন্টস শ্রমিক মো. এনাম (২২) ও সজিব (২০) গুরুত্বর আহত হয়েছেন। এর আগে ২রা ফেব্রুয়ারিবুধবার ভোররাতে উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক এলাকায় তান্ডব চালিয়ে রফিকুল ইসলামের মুদির দোকানেরমালামাল নষ্ট করে ফেলে এবং একই দিনে মোহাম্মদ উল্লাহপাড়ার ওসমান গণির বাড়ির নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়াল ভেঙে ফেলে বন্যহাতির দল।

এর আগে ২২ জানুয়ারি (শনিবার) বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর গুয়াপঞ্চক এলাকায় দিদারুল আলমের বসতঘর ও সেলিম হকেরদোকান ভাঙচুর করে বন্য হাতির দল। এভাবে বন্য হাতির তান্ডবে প্রতিনিয়ত জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা।

স্থানীয় চায়ের দোকানদার উমর নামের এক বাসিন্দা বলেন, সন্ধা হলেই হাতি নিয়ে খুবই আতংকে থাকি আমরা। প্রতিদিন এরাপাহাড় থেকে নেমে আমাদের ফসল,ঘরবাড়ি, দোকানপাট ভাংচুর করছে। হাতি তাড়ানোর জন্য পাহারাদার দেওয়া হলেও তাতেওকোনো কাজ হচ্ছে না। হাতির পাহারা দিতে গিয়ে হাতির আক্রমণের শিকার হয়েছে অনেকেই। গতবছর হাতি তাড়াতে গিয়েগুয়াপঞ্চক মোহাম্মদ উল্লাহ গ্রামের হাতি তাড়ানো টিমের নেতা আবু বক্কর হামলা শিকার হয়েছেন। গত বুধবার রাত ৩টার দিকেআমার চোখের সামনে পাহাড় থেকে হাতি নেমে দোকান ও বাড়ির দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলেছে। স্থায়ী কোনো সমাধান না হওয়ায় হাতিনিয়ে বেশ আতঙ্কে দিন পার করছি আমরা।

এ বিষয়ে বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ নোয়াব আলী বলেন, গত কয়েকবছর ধরে পাহাড় থেকে বন্য হাতির দল নেমেএখানকার মানুষরে অনেক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে আসছে। কয়েক মাস আগে থেকে উপজেলার গুচ্ছগ্রাম এলাকায় বন্যহাতির একটি দল অবস্থান নেয় বলে শুনেছি। সেখান থেকে প্রতিরাতে কোনো না কোনো গ্রামে হামলা চালাচ্ছে হাতিগুলো।হাতির আতঙ্কে রাত কাটাছে এলাকাবাসী। এ বিষয়ে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারে অবহিত করেছি। তারা ব্যবস্থা নেবেন বলেজানিয়েছেন।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ  বলেন, বন্য হাতির দল গত কয়েক বছর ধরেআনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের দেওয়ান বাজার, গুয়াপঞ্চক, খাঁনবাড়ী, মোহাম্মদপুর, বদলপুরা, বন্দর, বারশতইউনিয়নের কবিরের দোকান, পশ্চিমচাল, কান্তিরহাট, বটতলী ইউনিয়নের জয়নগর, ছিরাবটতলী, গুচ্ছগ্রাম, জয়নালপাড়া ওবারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও গ্রামে হানা দিচ্ছে। এই বিষয়ে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি বন বিভাগকে জানিয়েছি।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম  বলেন,প্রতিনিয়ত বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় হাতির আবাসস্থল ও খাদ্য সঙ্কটদেখা দিচ্ছে। ফলে খাবারের সন্ধানে তারা লোকালয়ে নেমে আসছে। তাতে মানুষের মুখোমুখি হয়ে পড়ায় মানুষের জানমালেরক্ষতি হচ্ছে।

এবিষয়ে বন বিভাগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ রেঞ্জ কর্মকর্তা মিজানুর রহমানও একই কথা জানান। তিনি বলেন, খাদ্য সংকটে হাতিগুলোলোকালয়ে নেমে আসছে। হাতির খাবার জোগান দিতে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। হাতির হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণদেওয়া হবে।

এসএ/