খোলাবাজারে বিস্ফোরক ও দাহ্য পদার্থ, বিপদের শঙ্কা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


খোলাবাজারে বিস্ফোরক ও দাহ্য পদার্থ, বিপদের শঙ্কা

রাস্তার পাশে সারি সারি সাজানো কোমল পানীয় বোতলের বাহারি রং দেখলে মনে হবে সরকারি অনুমোদন নিয়েই পরিকল্পিত ব্যবসায় ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। আসলে কল্পনার কিছুই সত্যি নয়। যার ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। লাইসেন্স ছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইন-১৯০৮ অনুযায়ী খোলাবাজারে গ্যাস, অকটেন ও পেট্রোল বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ সরকারি এসব নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই রামগঞ্জের সর্বত্র ছোট-বড় বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে দাহ্য পদার্থ। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণভাবে এভাবেই খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে অকটেন ও পেট্রোল। যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পথচারীরা। 

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার সোনাপুর বাজারের ওয়াবদা সড়কের এক জ্বালানি তেল বিক্রেতা বলেন, আমরা ছোট ব্যবসায়ী। সারা দিনে অল্প কয়েক লিটার তেল বিক্রি করি। এ আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। লোকজনের চাহিদা থাকায় এজেন্টদের কাছ থেকে তেল নিয়ে এসে বিক্রি করি। 

রামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা যায়, ওষুধের দোকান,  মুদি দোকান হতে শুরু করে চায়ের দোকান, বিকাশ রিচার্জ লোডের দোকান, প্লাস্টিক সামগ্রীর দোকান, টিনের দোকান, স্যানিটারি দোকান, কাপড়ের দোকানেও চলছে অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল ও কেরোসিন বিক্রিসহ রাস্তার পাশে অকটেন পেট্রোল সারিবদ্ধভাবে রেখে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এসব দোকানের কোনটিরও পেট্রোল বিক্রি করার মতো অনুমোদনপত্র নেই। 

জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস এবং বিস্ফোরক অধিদফতরসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল, অকটেন। কোনো রকম নিয়ম না মেনে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আবার কেউ অনুমোদন ও অগ্নিনির্বাপক ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়াই এ জ্বালানি ও পেট্রোল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দোকানে নেই আগুন নির্বাপক যন্ত্র। দুর্ঘটনা ঘটলে তার প্রতিকারও জানা নেই এসব ব্যবসায়ীদের। জনবহুল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবেই এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। 

একই সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতায় সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ, আর ঝুঁকিতে থাকছে খোদ স্থানীয় প্রশাসন। কারণ খোলা বাজারে অনুমোদনহীন দোকান থেকে পেট্রোল কিনে সরকারের অপশক্তিরা কিংবা দুর্বৃত্তরা ঘটাতে পারে যে কোনো অঘটন। এছাড়া অবৈধভাবে জ্বালানি তেল বিক্রি করায় কোটি টাকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত সরকার। তবে এখন তৎপর প্রশাসন। অসাধুদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা।

কয়েকজন ক্ষুদ্র পেট্রোল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললে তারা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আমাদের ফায়ার সার্ভিস-এর ছাড়পত্র ও অনুমোদন আছে। আবার মাঝেমধ্যে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলে কোনো সমস্যা হয় না। পাশাপাশি বিষ্ফোরক অধিদফতর এবং পরিদর্শকের লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরী হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, হাতের নাগালে পেট্রোল বিক্রি করায় সন্ত্রাসীরা অহরহ পেয়ে থাকে এবং এতে খুব সহজে সন্ত্রাসীরা নাশকতার কাজে পেট্রোল ব্যবহার করতে পারে। অতি দ্রুত প্রশাসনের কাছে এ দাহ্য পদার্থ সড়ক পাশে বিক্রি বন্ধের দাবি জানান তারা।

রামগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক কামরুল হাসান জানান, জেলা প্রশাসন থেকে যারা অনুমোদন আনে তাদের লাইসেন্স দেই। অনাবাসিক এলাকা, অগ্নিনির্বাপণ ও নিরপত্তা ব্যবস্থা এবং যেখানে বাড়িঘর, দোকান ও জনবসতি নেই সেখানে তেল বিক্রির শর্ত অনুযায়ী লাইসেন্স দেওয়া হয়। নিয়ম না মানার ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা জনবাণীকে জানান, অনুমোদনহীন খোলা বাজারে যত্রতত্রে কোনো দোকান বসা, বিক্রি আইনত অপরাধ। একই সঙ্গে যারা অবৈধভাবে বিক্রির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এরই মধ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। এবং খোলাবাজারে পেট্রোল বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কোনো ধরণের অপ্রতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়েও পুলিশ তৎপর রয়েছে। 

এসএ/