জয়পুরহাটে লতি চাষে কৃষকের ভাগ্যবদল
মো. রুবেল হোসেন
প্রকাশ: ১১:২৫ অপরাহ্ন, ১০ই মে ২০২৩
জয়পুরহাটে লতিরাজ কচু চাষ করে কৃষকরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। এখানকার উৎপাদিত কচুর স্বাদে খুব মজাদার ও পুষ্টিগুন সম্পন্ন। তাই এটি স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন এলাকয় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় লতি চাষে খরচ কম ও ফলন বেশি পাওয়া যায়। এছাড়াও উৎপাদিত কচুর লতির বাজারদর ভালো থাকে বলে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।
জানা গেছে, জেলার আয়মারসুলপুর, বেলপুকুরস বাগজানা, শিমুলতলী, দরগাপাড়া, বালিঘাটা, কড়িয়া, ধরঞ্জি, স্লুইচ গেটসহ উপজেলার বিভিন্ন ডোবা ও নিচু জমিতে কৃষকরা লতি চাষ করছেন। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি এবং এপ্রিল থেকে মে মাস এই দুই মৌসমে কচুর লতির চাষ করা হয়। লতি চাষে মাত্র ১-২ মাস পর থেকেই লতি বিক্রি করা যায়। যা প্রায় পরবর্তী ৭-৮ মাস পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। এছাড়াও লতির কান্ডও বড় হতে থাকে। কৃষকরা বিঘাপ্রতি ৩-৪ টন লতি পেয়ে থাকেন। মাত্র ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করে কৃষকরা ৮০-৯০ হাজার টাকার লতি বিক্রি করতে পারেন।
এখানকার উৎপাদিত লতি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় ২০টি দেশে রফতানি হয়।
কৃষক লুতফর রহমান বলেন, গত ২৫ বছর আগে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হওয়া কচুর লতির চাষ এখন বিরাট আকার ধারন করেছে। বর্তমানে এই জেলায় প্রায় ৩০০ শ্রমিকেরও বেশি কচুর লতির জমিতে কাজ করে উপার্জন করে থাকেন। এতে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি দূর হয়েছে বেকারত্ব। বর্তমানে এখানকার কচুর লতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে, কুয়েত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে।
কৃষক দোলন কুমার বলেন, আমি এবছর ৪ বিঘা জমিতে লতি চাষ করেছি। গত বছর ৩ বিঘায় চাষ করে লাভবান হয়েছিলাম। স্থানীয় ও আশেপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় এখানকার লতির বেশ চাহিদা রয়েছে। তাই বাজারে ভাল দামও পাওয়া যায়। লতি চাষে বিঘাপ্রতি আমার ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। কচু ও লতি বিক্রি করে ৭০-৮০ হাজার টাকা লাভ করতে পারি।
উপজেলার দরগাপাড়া গ্রামের লতি চাষি নুরুল আমিন বলেন, আমিসহ এলাকার আরও অনেকেই লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। আমি গত বছর ১ বিঘায় চাষ করেছিলাম। লাভ হওয়ায় এ বছর ৩ বিঘায় চাষ করেছি। লতি চাষে পুরো ৬ মাস জুড়ে ফলন পাওয়া যায়। ফলে লাভের পরিমানও বাড়ে।
ঢাকা থেকে লতি কিনতে আসা আবু জাফর বলেন, জেলার বটতলী বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০-৮০ টন লতি বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সরবরাহ হচ্ছে। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিকেজি লতি ৫০-৬০ টাকা দরে কিনে ঢাকায় সরবরাহ করছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোছা. রাহেলা পারভিন বলেন, এই মৌসুমে জেলায় ১৮০০ হেক্টর জমিতে লতির চাষ করা হয়েছে। আশা করছি এর থেকে প্রায় ৮০ হাজার টন লতি উৎপাদিত হবে। আমরা সব সময় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা করে আসছি।
জেবি/ আরএইচ/