বাউফলে চরাঞ্চলের ৩০ হাজার মানুষ ‘মোখা’ ঝুঁকিতে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:৫৩ অপরাহ্ন, ১২ই মে ২০২৩


বাউফলে চরাঞ্চলের ৩০ হাজার মানুষ ‘মোখা’ ঝুঁকিতে
ছবি: সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় আইলা, সিডর, মহাসেন, সিত্রাং ও বুলবুলের আঘাতের ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিচ্ছিন্ন চন্দ্রদ্বীপসহ ১৮টি চরাঞ্চলের মানুষ। বিগত ঘূর্ণিঝড় গুলোতে নদী বেষ্টিত এসব চরাঞ্চলের প্রাণহানিসহ জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। 


আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী (১৪ মে) উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এমন পূর্বাভাসে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এসব এলাকার মানুষের। এসব চরে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ না থাকায় মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। 


উপজেলার মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন নদী বেষ্টিত ইউনিয়ন চন্দ্রদ্বীপ। ছোট বড় ১১ টি চর নিয়ে এ ইউনিয়ন গঠিত। যার ১টির নাম চরব্যারেট। এ চরে প্রায় ৩ হাজার মানুষ বসবাস করে। ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বসে এখনকার মানুষের নিরাপত্তার জন্য নেই কোনো আশ্রয় কেন্দ্র। শুধু চরব্যারেট নয়, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চররায়হাসেব, চর উত্তর মিয়াজান, চরকিসমত, চর নিমদী, উত্তর দিয়ারা কচুয়া, চরওয়াডেলে নেই কোনো আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায়  চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করেন এখানকার মানুষ। এতে ঘটে হতাহতের ঘটনা।


চরব্যারেটের বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, চরব্যারেটে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। আর চরের চারপাশে নদী থাকায় আমরা দুরের কোনো আশ্রয় কেন্দ্র যেতেও পারি না। আবার ট্রলারের ব্যবস্থা থাকলে ঘরবাড়ি, গরু মহিষ রেখে কেউ যেতে চায় না।


সাবেক ইউপি সদস্য মো. নাগর আলী হাওলাদার বলেন, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন উপজেলার মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। আর চরব্যারেট চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 


রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির চন্দ্রদ্বীপ ইউপির টিম লিডার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চন্দ্রদ্বীপে আশ্রয় কেন্দ্র সংকট রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা গুলোতে আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বসে প্রায় ঘটে প্রাণহানীর ঘটনা। তারপরেও রেড ক্রেসিন্টে সোসাইটির কর্মীরা মানুষের সচেতনা বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকি। 


চন্দ্রদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক আলকাছ বলেন, চন্দ্রদ্বীপে ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করে। সাইক্লোন সেল্টার আছে মাত্র ৫টি। ঝুঁকিপূর্ণ ৬টি এলাকায় নেই কোনো আশ্রয় কেন্দ্র। আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার লিখিত আবেদন করেছি। কোনো কাজ হচ্ছে না। 


এদিকে উপজেলা ধুলিয়া ইউনিয়নের নদী বেষ্টিত বিচ্ছিন্ন এলাকা চর বাসুদেবপাশা। এ এলাকায় প্রায় ২ শতাধিক মানুষ বসবাস করেন। এখানেও কোনো আশ্রয় কেন্দ্র। ঘূর্ণিঝড়ের সময় অনেকে ঘর বাড়ি ফেলে রেখে ধুলিয়া স্কুল এন্ড কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করেন। তবে অনেকে ঘর বাড়ি গরু মহিষ এসবের ঝুঁকি নিয়ে ওই চরেই অবস্থান করে। 


ঘূর্ণিঝড়ে আরেক ঝুঁকিপূর্ণ চর ফেডারেশন। কালাইয়া ইউনিয়নের অংশ এ চর। এখানে অর্ধশত মানুষ বসবাস করে। এখানেও নেই আশ্রয় কেন্দ্র। ২০০৭ সালের সিডরে ৪৫ জন নারী ও পুরুষের প্রাণহাণি ঘটে। তারপর থেকে অনেকেই ফেডারেশন ত্যাগ করেছেন। এখনো কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। 


তথ্য মতে, সিডরসহ বিগত ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার চরফেডারেশনে ৪৫ জন, চন্দ্রদ্বীপে ৭ জন, কেশবপুর, কালিশুরী ও কনকদিয়ায় ৫ জন নারী, পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছেন। এসব চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় বেশি ক্ষতির মূখে পড়ে ফসল। বিশেষ করে বোরো ধানসহ রবিশস্য। বিভিন্ন সময় নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় ও জলোচ্ছ্বস ঠেকাতে বেড়িবাঁধের দাবি করে আসছে এলাকাবাসী। 


ধুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির বলেন, ধুলিয়ার চর বাসুদেবপাশায় কোনো আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় ওখানে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে থাকেন। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ঝড়ের পূর্বাভাস পেলে ট্রলারে করে বাসুদেব পাশার লোকজনকে ধুলিয়ার আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে আসি। 


এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল আমিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের জান মালের নিরাপত্তার জন্য ১৫৭টি সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে বিচ্ছিন্ন জনপদ চন্দ্রদ্বীপে তুলনামূলক কম সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে। ওখানে বেশ কয়েকটি সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবো।