ঘূর্ণিঝড় মোখার সংবাদে বিপাকে কৃষক


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:০৮ অপরাহ্ন, ১২ই মে ২০২৩


ঘূর্ণিঝড় মোখার সংবাদে বিপাকে কৃষক
ছবি: জনবাণী

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় রোপন করা বোরো ধান কাটা শেষ করতে পারেননি কৃষকরা। 


ইতিমধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর মোখার প্রভাবে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সংবাদে কৃষকরা পড়েছে বিপাকে। অধিক বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার ক্ষতির আশংকা করছেন অনেক কৃষক। 


এ বছর রাউজানে বোরো ধানের ফলন ভাল হলেও শেষ মুহুর্তে পোকার আক্রমনে কৃষকের মুখে এমনিতে নেই কোন হাঁসি। 


রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর সর্তা বৃক্ষভানপুর, বৃন্দাবনপুর, জানিপথর, বানারস, এয়াছিন নগর, ডাবুয়া ইউনিয়ন, চিকদাইর ইউনিয়ন, নোয়াজিশপুর ইউনিয়ন, গহিরা ইউনিয়ন, রাউজান পৌরসভার এলাকা, বিনাজুরী ইউনিয়ন রাউজান ইউনিয়ন, কদলপুর ইউনিয়ন, পাহাড়তলী ইউনিয়ন, নোয়াপাড়া ইউনিয়ন, উরকিরচর ইউনিয়ন, পুর্ব গুজরা ইউনিয়ন, পশ্চিম গুজরা ইউনিয়ন ও বাগোয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলী জমিতে শুস্ক মৌসুমে কৃষকেরা বোরো ধানের চাষাবাদ করেন। চাষাবাদে ধানের ফলন ভাল হয়েছে। 


রাউজানের কিছু কিছু এলাকায় বোরো ধান কাটার পূর্বে ধানে পোকা আক্রমন করে। পোকার আক্রমন থেকে ধান রক্ষা করতে কীটনাশক ও পোকা দমনের জন্য ফোরোমন ফাঁদ ব্যবহার করেন। কিন্তু এ পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা করতে পারেনি বোরো ধান। 


হলদিয়া ইউনিয়নের পাঁচ পুকুরিয়া এলাকার কৃষক নুরুল আজম বলেন, শুস্ক মৌসুমে ১২ একর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করেছি। প্রতি একর বোরো ধানের চাষাবাদ করতে সার বীজ, সেচ, কৃষি শ্রমিকের মজুরী বাবদ খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা । ২৫ একর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করতে ১০ লাখ টাকা খরচ হয় বলে জানান তিনি। 


তিনি আরও জানান, বোরো ধানের ফলন ভাল হওয়ায় প্রথমে আনন্দে মেতে উঠি। হঠাৎ করে বোরো ধানের ক্ষেতে পোকা আক্রমন হওয়ায় পোকা দমনে কয়েকবার কীটনাশক স্প্রে করেছি। কিন্তু পোকার আক্রমন থেকে বোরো ধান রক্ষা করতে পারেনি। তার মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের খবরে আতঙ্কে আছি। সব ধান কেটে ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি। তিনি আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে জানান। 


রাউজানে পোকার আক্রমনে ফলন বিপর্যয় হলেও রাউজান উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসাইন দাবি করছেন কিছু কিছু এলাকায় পোকার আক্রমনে বোরা ধানের ক্ষতি হয়েছে। সব জায়গায় ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। 


এবার বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে দাবি করে উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসাইন আরও জানান, রাউজানে এবার ৬২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। গত বছর হয়েছিল ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। ফলন আশা করছি ৪৩ থেকে ৪৪ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। 


তিনি বলেন, আমাদের চাহিদা রয়েছে ৩৯ থেকে ৪১ হাজার মেট্রিক টন। এবার ফলন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ প্রনোদনা এবং অন্যান্য উৎস হতে সর্বমোট ৫ হাজার ৫০০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ধান এবং সার বিতরণ করা হয়েছে। 

রাউজানের সংসদ সদস্য এবি এম ফজলে করিম চৌধুরীর অর্থায়নে কৃষকদের মাঝে সেচ পাইপ বিতরণ করা হয়েছে। গহিরা ইউনিয়ন এবং রাউজান পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে সেচ সুবিধার্থে পাকা ড্রেন নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। 


উরকিরচর ইউনিয়ন এ কাপ্তাই চট্টগ্রাম সড়কের মাঝে স্থাপিত একটি নাসির মুখে ঝাঁপ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জমিতে বোরো চাষ করা গেছে। 


জানা যায়, রাউজানের সংসদ সদস্য এবি এম ফজলে করিম চৌধুরীর নির্দেশনা মোতাবেক নিরবিচ্ছিন্ন সেচ সংযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি অফিস রাউজানে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেন। যার মাধ্যমে চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহযোগিতায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ মিটার, ২৩০ টি ট্রান্সফর্মার এবং ট্রান্সর্ফমার হতে ১৩০ ফিট এর মধ্যে সেচ মেশিন বসালে বিনামূল্যে লাইন টেনে দেওয়া নিশ্চিত করা হয়। প্রায় ৫৮০ টি সেচ স্ক্রিম রাউজানে বসানো হয়। রাউজানের শর্ষ্যভান্ডার খ্যাত হলদিয়া ইউনিয়নের সর্তার খালে প্রায় ১৪ টি সেচ পাম্প বসেছে। 


উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসাইন আরও জানান, ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঘূর্ণিঝড়ে রাউজানে তেমন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। আমরা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের তারাতাড়ি ধান কাটার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।