ইবিতে উর্মি হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:৪২ অপরাহ্ন, ২১শে মে ২০২৩
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম উর্মির হত্যার নয় মাসেও সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ায় মানববন্ধন করেছে উর্মির পরিবার, শিক্ষক এবং সহপাঠীরা।
রবিবার (২১ মে) সকাল ১২ টার দিকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটক সংলগ্ন মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বক্তারা বলেন, আমরা ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভাগের অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম উর্মির হত্যাকান্ডে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে উপস্থিত হয়েছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে আমাদের সাথে আজকে নিশাত তাসনিম উর্মির দুই বছরের ফুটফুটে শিশু প্রত্যয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুজিব ম্যুরাল চত্বরে দাড়িয়ে তার মায়ের হত্যার বিচারের দাবিতে আমাদের সাথে শামিল হয়েছে। আমরা মনে করি এ দাবিতে উর্মির সন্তান প্রত্যয় আমাদের শক্তি। আমার মনে হয়না এত কম বয়সে কোনো সন্তান তার মায়ের বিচারের দাবিতে এতগুলো হাতের সাথে যুক্ত হয়ে মানববন্ধনে যুক্ত হয়েছে।
তারা বলেন, উর্মি হত্যার মামলায় যারা বিবাদী তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তারা এখন জামিনে বেরিয়ে এসেছে এবং এই বিচারকার্যকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য নানা ধরনের অপকর্ম ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এ মামলার প্রমাণ যা ছিলো সব নষ্ট করার জন্য পায়তারা করছে। আশ্চর্যের বিষয় হল বিচারিক প্রক্রিয়ায় একটা হত্যাকান্ডের যে সমস্ত আলামত ছিলো শুরুর দিকে এটি হত্যাকান্ড ও হত্যামামলা হিসেবে পুলিশ নিয়েছে। কিন্তু পুলিশের দেওয়া রিপোর্টের সাথে পোস্টমর্টেম রিপোর্টের কোনো মিল নাই।
মহামান্য আদালত নিশাত উর্মির হত্যার বিচার দাবিতে যে বিচার মামলাটি চলমান সেই মালমার অধিকতর তদন্তের জন্য পিআিবিকে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা এটাও জানতে পেরেছি। পিবিআই বিস্ময় প্রকাশ করেছে যে প্রাথমিক ঘটনার বিবরণের সাথে মেডিকেল বোর্ডের ময়নাতদন্তের কোনো মিল নাই। ময়নাতদন্তের যে প্রতিবেদন তার সাথে পুলিশের দাখিল করা কোনো প্রতিবেদনে মিল নাই।
আরও বিস্ময়কর ব্যাপার এই, যেখানে হত্যাকান্ডের মামলা নেয়া হয়েছে সেই জায়গায় পুলিশ কি করে একটা ইউডি মামলা প্রতিবেদন দাখিল করে এবং বাদীকে আত্মহত্যা মামলা হিসেবে আরজি দেওয়ার জন্য কি করে চাপ প্রয়োগ করে।
আমরা মনে করি এর ন্যায় বিচার হতে হবে। উর্মির হত্যার সাথে যারা জড়িত তার স্বামী প্রিন্সসহ তার শুশুর এবং শাশুড়ী এবং পরোক্ষভাবে যারা মদদ দিয়েছে তাদের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার হতে হবে। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে অনেক বিচার বিলম্বিত হয়েছে আর নয় ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ তাদের মেধাবী শিক্ষার্থী হত্যার বিচার চাই। এছাড়াও এই ঘটনার সঙ্গে আমরা যারা নয়মাস ধরে সংগ্রাম করছি প্রত্যেকটা মানুষ আন্তরিক ভাবে বিচার চাই। এই বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য রাষ্ট্র যন্ত্রের সাথে যারা জড়িত আছেন যাদের দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসন আদালত সবার কাছে আমাদের আর্জি থাকবে যে প্রাণ চলে গেছে তাকে আমরা পাবো না। কিন্তু অবিচারের দৃষ্টান্ত বা নজির যেনো স্থাপিত না হয়।
এছাড়াও তারা বলেন, শিক্ষাঙ্গন থেকে আর কোনো নিশাত উর্মি যেনো এভাবে হত্যার শিকার না হয়। এবং বিচার বঞ্চনায় যেনো কোনো পরিবার নিভৃতে না কাঁদে। শিক্ষার্থী, সহকর্মী, সহপাঠী যারা আছে তারা যেনো না কাঁদে। এধরনের অবিচারের নমুনা দৃষ্টান্ত যেনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে না হয়।
নিশাত উর্মির অনেক কিছুর দেওয়ার ছিলো দেশ এবং জাতিকে সে জায়গা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হলো। তার পরিবারকে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে। এবং এই শিক্ষিত পরিবার তার মা একজন শিক্ষিকা এবং তার বাবা একজন কর্মজীবী মানুষ একজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষ তাদেরকে বিপর্যস্ত করে ফেলা হয়েছে।
টাকার জোরে টাকার শক্তিতে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন বদলে গেছে। ডাক্তারের মেডিকেলের প্রতিবেদন বদলে গেছে। আমরা জানি ন্যায়বিচারে সবচেয়ে শক্তিশালী সত্য যখন প্রকাশিত তখন দ্বিগুণ তিনগুণ শক্তিতে উদ্ভাসিত হয়। তখন এই টাকার শক্তি ও পেশির শক্তি টেকশয় হবে না। ন্যায়বিচারের কাছে এসকল অপশক্তি পরাজিত হবে।
নিশাত উর্মির হত্যার বিচারে আমাদের আন্তরিক দাবি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুশাসন এবং গনতন্ত্রের জন্য যে সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছেন, দেশকে একটি সুন্দর গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন, সেই উন্নত সমৃদ্ধ দেশের সুশাসন নিশ্চিত করবার জন্য নিশাত উর্মির হত্যার বিচারের দাবিতা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এসময় নিশাত উর্মির মা বলেন, আমার মেয়েটা মানুষের মত মানুষ হবে অথচ অকালে মেয়েটা ঝরে গেছে। সে জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসেছি। ছাত্রসমাজের কাছে আমার নিবেদন তারা আমার মেয়ে হারানোর যন্ত্রনাকে নিজেদের যন্ত্রনা মনে করুক। এবং আমার সাথে বিচারের দাবীতে তারা রাস্তায় নামুক। সবাই যেন একসঙ্গে একই সাথে আমার সন্তানের হত্যার বিচারের দাবি জানায়।
নিশাত তাসনিম উর্মির বাবা বলেন, গত ০৮ সেপ্টেম্বর রাতে পুলিশ বলছে যে রাত ১০টা থেকে সাড়ে১০ টার মধ্যে আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। এই সময়টাতে এ পরিবারের কোন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে না। সবাই সেখানে উপস্থিত ছিল থাকা অবস্থায় আমার মেয়েটা মারা গিয়েছে। পুলিশি রিপোর্টে বলা আছে তার গলায় আঙ্গুলের কালো ছাপ, শ্বাসরুদ্ধ টিপে ধরা আঙ্গুলের কালো ছাপ বিদ্যমান রয়েছে এছাড়াও গালে কালোচিরা দাগ আছে এবং প্রিন্সের আংটির দাগও আছে। তারপর হাসপাতালে থেকে পুলিশ যখন তার রিপোর্ট করে তখন পরিস্কার করে হত্যার মামলা নিয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময় ময়নাতদন্তের পরে সেখানে বলা হয়েছে আত্মহত্যা করেছে। আমরা এটাকে কোনভাবে মেনে নিতে পারিনি। আদালতে এর বিরুদ্ধে না রাজি প্রতিবেদন দাখিল করেছিলাম এখন পিবিআই কুষ্টিয়া এর তদন্ত করছে। আমরা চাই যে এর সুষ্ঠু বিচার হোক এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসুক কারা জড়িত।
এপ্রসঙ্গে গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মামলাটির অধিকতর তদন্তের সার্থে পিবিআই এর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পিবিআই জোনের পুলিশ সুপার মো: শহীদ আবু সরোয়ার বলেন, মামলাটি আমরা সম্প্রতি হাতে পেয়েছি। সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সাথে আমরা মামলাটি তদন্ত করবো।
আরএক্স/