লবনাক্ত জমিতে আম চাষে কৃষকের বাজিমাত
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪:৪৫ অপরাহ্ন, ২৬শে মে ২০২৩
একসময় ধানের ওপর নির্ভরশীল ছিল দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কৃষকরা। বর্ষা মৌসুমে জমিতে ধান চাষ করেই জীবন চালাতেন তারা। এখন সেই জমিতে আম চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপকূলের কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে আম চাষে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তাই আমের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলার আম দিয়েই এখানকার আমের চাহিদা পূরণ হতো। কিন্তু এ বছর উপজেলায় ১১০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আমের চাষ হয়েছে।
আরোও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা
যথাযথ পরিচর্যা ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। উপজেলার বাজারগুলোতে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জাতের আম। বালুর ধুপে লবনাক্ত জমিতে ও চাষ করা হয়েছে আম, শুধু আম চাষ নয়, চর অঞ্চলে সব ধরনের গাছ এখন বড় হচ্ছে। ২/১ বছর আগে গাছ গুলো বাঁচাতে কস্ট হলেও এখন প্রযুক্তির ব্যবহারে সঠিক পরিচর্যায় এগিয়ে যাচ্ছে উপকূলের কৃষক।
কলাপাড়ার আমচাষি মো. জাহাঙ্গীর মুসুল্লী। লতাচাপলী ইউনিয়নের মুসুল্লীয়াবাদ গ্রামে পাঁচ একর জমিতে রয়েছে তার তিনটি বাগান। চার বছর আগে তিনি দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে দেশি-বিদেশি প্রায় ২০ প্রজাতির আমের চারা সংগ্রহ করেন। আর তাতেই সফলতার মুখ দেখেন তিনি। এ বছর ১২-১৫ লাখ টাকার আম বিক্রির প্রত্যাশা করছেন জাহাঙ্গীর।
জাহাঙ্গীর মুসুল্লী বলেন, অনেক সময় দেখা যায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা আমে ফরমালিনসহ কীটনাশক দেওয়া থাকে। সেই আম খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই ভাবলাম আমি নিজেই আমের বাগান করব এবং সবার জন্য উৎপাদন করব নিরাপদ ফল, দামও থাকবে সহনীয়। সেই চিন্তা থেকেই বাড়ির সামনে এবং অন্য আরও তিনটি জমিতে গড়ে তুলি আমের বাগান।
জাহাঙ্গীর মুসুল্লী আরও বলেন, আম্রপালি, মিশ্রিপাল, হাড়িভাঙ্গা, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, বারি-৪, হিমসাগর, কিউজাইসহ প্রায় ২০ প্রজাতির আমের কলম চারা রোপন করি। দুই বছর ধরে সবগুলো গাছেই আম ধরতেছে। বিগত বছরের তুলনায় এবার আমের অনেক ভালো ফলন হয়েছে। তবে তীব্র গরম এবং বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে আমের মুকুল কিছুটা ঝরে গেছে। তবুও খুব ভালো ফলন হয়েছে আমার বাগানে। আমের পাশাপাশি আমার বাগানে রয়েছে লেবু, পেয়ারা এবং ১০ প্রজাতির কলা।
কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক সিকদার অর্নব বলেন, আমি কুয়াকাটা থেকে মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ বিহার দেখতে যাচ্ছিলাম। তখন আমাদের গাড়ি চালক বলেন যে এখানে অনেক বড় আমের বাগান রয়েছে, তাই চলে আসলাম। আসলে সত্যিই অসম্ভব সুন্দর একটি বাগান, আমার পরিবারের সবার খুব ভালো লেগেছে যায়গাটি এবং আমরা ২০ কেজি আম ক্রয় করেছি।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, কলাপাড়ায় গত ৪-৫ বছর ধরে আম চাষে বেশ পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে এ বছর প্রচুর আমের উৎপাদন হয়েছে। কলাপাড়ায় প্রায় ১১০ হেক্টর জমিতে ২০০টি ছোট-বড় আমের বাগান রয়েছে। এ বছর উপজেলায় সর্বমোট ২৫০ মেট্রিক টনের বেশি আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কোনো চাষি বাগান শুরু করার আগে তাকে পরামর্শ দেওয়াসহ তার চাষ পদ্ধতির দিকে আমরা নজর রাখি। তবে চারা কিংবা কীটনাশক দেওয়ার কোনো সুযোগ আমাদের তৈরি হয়নি। পরবর্তীতে বরাদ্দ দেওয়া হলে আমরা তখন বিতরণ করব কৃষকদের মাঝে।
আরএক্স/