শূন্যের কোঠায় সুন্দরবনের গাছ পাচার, কঠোর অবস্থানে বনবিভাগ


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:১৪ পূর্বাহ্ন, ৫ই জুন ২০২৩


শূন্যের কোঠায় সুন্দরবনের গাছ পাচার, কঠোর অবস্থানে বনবিভাগ
সুন্দরবন

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগে সুন্দরীসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পাচার এখন আর তেমন একটা নেই বললেই চলে। এক সময় হরহামেশা সুন্দরবনের গাছ পাচার হলেও বর্তমানে তা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। 


মূলত সুন্দরী ও পশুর গাছের ব্যবহার এবং জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ নিষিদ্ধের পর থেকেই কমতে শুরু করে বনের গাছ পাচারের ঘটনা। এরপর বনবিভাগের স্মার্ট প্যাট্রলিং টিম গঠনের পর থেকেই কমতে শুরু করে বন সংশ্লিষ্ট অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও। 


এসব অপরাধ কমাতে বনবিভাগের সময়ও লেগেছ বেশ। ১৬-১৭ বছর ধরে বনবিভাগের কঠোরতায় গাছ পাচার পুরোপুরি বন্ধ ও বন অপরাধও অনেকাংশে কমে এসেছে। তবে পাস পারমিট নিয়ে মাছ শিকারের নামে বিষ প্রয়োগসহ মাঝে মধ্যে অন্য যেসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে তা প্রতিরোধেও বনবিভাগ কঠোর অবস্থানে। 


মাছ শিকারের আড়ালে কেউ বিষ প্রয়োগসহ বনের ক্ষতি করলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করে বনবিভাগ। ফলে জেলেসহ বনের ওপর নির্ভরশীলদের মাঝে বনবিভাগের কঠোরতা ও মামলার ভীতি সৃষ্টি হওয়ায় কমছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।


বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের আয়তন ২ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর। মোট আয়তনের ৩১ শতাংশ জলাভূমি আর ৬৯ শতাংশ বনভূমি। সুন্দরবনের এ বিভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে নদী-খালের সংখ্যা ৪২০টি। 


এ বনে রয়েছে সুন্দরীসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা। অতি মূল্যবান গাছ হিসেবে পরিচিত সুন্দরী, পশুর, বাইন ও গরান। তাই দীর্ঘকাল ধরেই সুন্দরবন থেকে পাচার হয়ে আসছিল এসব গাছ। ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত গাছ পাচার হচ্ছিল অহরহ। আর সেই সময়ে বনবিভাগ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের অভিযানে প্রতিনিয়ত জব্দ হতো সুন্দরীসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। একপর্যায়ে প্রশাসনের তৎপরতায়ও গাছ পাচার বন্ধে হিমসিম খেতে হয় বনবিভাগকে। 


তাই বনজসম্পদ পাচার রোধে বনবিভাগ ২০০৭ সালে সুন্দরবন থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ নিষিদ্ধ করে। এর পরের বছর সুন্দরী ও পশুর গাছের ব্যবহার বন্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বনবিভাগ। সুন্দরবন থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ বন্ধ ও সুন্দরী-পশুর গাছের ব্যবহার বন্ধের পর থেকেই কমতে শুরু করে গাছ পাচার। বর্তমানে গাছ পাচার শূন্যের কোঠায়। গাছ পাচার বন্ধসহ অন্য বনজ ও জলজ সম্পদ রক্ষায় ২০১৬ সালে বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত হয় স্মার্ট প্যাট্রলিং টিম। 


সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের দুটি ও শরণখোলা রেঞ্জের দুটিসহ মোট চারটি স্মার্ট প্যাট্রলিং টিম সর্বদা বনের অভ্যন্তরের নদী-খালে টহলে নিয়োজিত থাকায় কমেছে বন সংক্রান্ত নানা অপরাধও। স্মার্ট প্যাট্রলিং টিমের রয়েছে দ্রুতগামী নৌযান ও আধুনিক যন্ত্রপাতি। ফলে এ টিমের চোখ ফাঁকি দিয়ে অপরাধ কর্মকাণ্ড সংগঠিত করা কঠিন হয়ে পড়ায় অপরাধীরা পিছু হটতে শুরু করে। স্মার্ট প্যাট্রলিং টিমের সুবাদে মাছ ধরার পাস পারমিট নিয়ে অসাধু জেলেরা বনের নদী-খালে যে বিষ প্রয়োগ করতো তাও কমে এসেছে অনেকাংশে। 


আগের তুলনায় অনেকাংশে কমেছে চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্যও। সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের দুটি রেঞ্জ কার্যালয়, সাতটি স্টেশন ও ৩৪টি ক্যাম্পে ৫১৬ জন লোকবলের বিপরীতে রয়েছে ৩০০ জন। ২১৬ জনের জনবল কম থাকা সত্ত্বেও বনবিভাগের নিয়মিত টহল ও কঠোরতায় গাছ পাচার, বিষ প্রয়োগ, বন্যপ্রাণী শিকারসহ বন সংক্রান্ত অপরাধ কমে আসছে দিন দিন। সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবন থেকে ২০০৭ সালে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ নিষিদ্ধ করা হয়। 


কারণ জ্বালানির আড়ালে বাওয়ালিরা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পাচার করতেন। এরপর ২০০৮ সালে সুন্দরবনের সুন্দরী ও পশুর গাছের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে সুন্দরী, পশুরসহ অন্য প্রজাতির গাছ পাচার বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ২০১৬ সালে স্মার্ট প্যাট্রলিং টিম গঠনের পর বন সংক্রান্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে। 


তিনি বলেন, গাছ পাচার বন্ধে বনের গাছপালা বৃদ্ধি ও শিকার প্রতিরোধের কারণে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হচ্ছে। আগামীতেও বনবিভাগ বনজ সম্পদ রক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকবে। ফলে বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন জীববৈচিত্র্য ও সম্পদের অনন্য আধারে পরিণত হবে।


আরএক্স/