ফৌজদারী মামলার আসামী গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে


Janobani

মো. রুবেল হোসেন

প্রকাশ: ১১:১৬ পূর্বাহ্ন, ৭ই জুন ২০২৩


ফৌজদারী মামলার আসামী গুরুত্বপূর্ণ দুই পদে
ছবি: দৈনিক জনবাণী

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) স্বচ্ছতা দিনে দিনে শুধুই তামাশায় রূপ নিয়েছে। দুদকের ফৌজদারি মামলার আসামী একই সাথে বিসিআইসি'র গুরুত্বপূর্ণ দুইটি পদে বসে আছেন। প্রধান অর্থ কর্মকর্তা কি ভাবে প্রধান নিরীক্ষক হতে পারেন। আর্থিক অনিয়ম হলে নিরীক্ষা করবে কে? তাহলে আর্থিক অনিয়ম ধামা চাপা দেওয়ার জন্যই কি এই অনিয়ম!


বিসিআইসি প্রায় দুই যুগ ধরে সার বিতরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছে। সার আমদানি বিষয়ক এলসি খোলা থেকে শুরু করে বার্ষিক বাজেট তৈরির গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে বিসিআইসি'র অর্থ বিভাগ। যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ বিভাগ যেমন গরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ নিরীক্ষা বিভাগ। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা করার দায়িত্ব নিরীক্ষা বিভাগের। বিসিআইসি'র বর্তমান চীফ অডিটর ও চীফ ফাইন্যান্স অফিসার মো. গোলাম ফারুক দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলার আসামি। ২০১৬ সালের মামলা নং৩১৫২৭। তিনি বর্তমানে জামিনে আছেন।


দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যখন দুর্নীতি মামলা দায়ের করে তখন মো. গোলাম ফারুকের পদবী ছিল উপ-মহাব্যবস্থাপক। মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও মোঃ গোলাম ফারুক ঘনিষ্ট হওয়ায় পদোন্নতির সময় মামলার তথ্য গোপন করা হয়েছে ফলে তিনি মহাব্যবস্থাপক পদে পদন্নোতি পেয়েছেন বলে জানা যায়। 


ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি বিবেচনার সময় ফৌজদারি মামলার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে মো. গোলাম ফারুকের পদোন্নতি বিবেচনা করা হয়নি। যেখানে মো. গোলাম ফারুকের সাময়িক বরখাস্ত থাকার কথা সেখানে মোহাম্মদ জাকির হোসেন তথ্য গোপন করে তাকে পদোন্নতি দিয়েছেন। পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দুইটি পদের দায়িত্ব। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জনবাণীকে বলেন, 'মোহাম্মদ জাকির হোসেনের সুপারিশে দুর্নীতি মামলার জামিন প্রাপ্ত আসামী বিসিআইসি'র চীফ অডিটর ও চীফ ফাইন্যান্স অফিসার হয়েছেন। ডকুমেন্টারি কোন প্রমাণ থাকলে সে বিষয় কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপনের দায়িত্ব কর্মচারী প্রধান মোহাম্মদ জাকির হোসেনের। এসব কারণে মো. গোলাম ফারুক মোহাম্মদ জাকির হোসেনের কাছে দায়বদ্ধ।'


সূত্র জানায়, ২১টি তদন্ত কমিটি'র সদস্য মো. গোলাম ফারুক ইতোমধ্যে কমিটি'র কমন সদস্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে মোহাম্মদ জাকির হোসেনের ইচ্ছার বহি:প্রকাশ ঘটান মোঃ গোলাম ফারুক। এর প্রতিফলন দেখা যায় খোকন চন্দ্র দাস ও প্রকৌশলী সুদীপ মজুমদার, পিইঞ্জ. এর পদোন্নতি বিবেচনার সময়। খোকন চন্দ্র দাস বিসিআইসি'র বাণিজ্য ক্যাডারের গ্রেডেশন তালিকার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি বিবেচনার ঠিক আগমুহুর্তে মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে খোকন চন্দ্র দাসের পদোন্নতি বানচাল করা হয়। উপরন্তু খোকন চন্দ্র দাসকে সার আত্মসাতের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।


ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটে প্রকৌশলী সুদীপ মজুমদার, পিইঞ্জ. এর ক্ষেত্রে। উল্লেখ্য খোকন চন্দ্র দাস ও প্রকৌশলী সুদীপ মজুমদার, পিইঞ্জ. দুই কর্মকর্তার তদন্ত কমিটি'র সদস্য ছিলেন মোঃ গোলাম ফারুক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জনবাণী কে বলেন, 'আমার জানামতে সংখ্যালঘুদের উপর বিসিআইসি বরাবরই বিরূপ আচরণ করে আসছে'


জানা যায়, ইতিপূর্বে একই ঘটনা ঘটে সাবেক মহাব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাসের সাথে। মো. গোলাম ফারুকের সময় কর্ণফুলী পেপার মিলসে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে রূপ নিয়েছিল। বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ তাকে পুরস্কৃত করেছেন। এ সব বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হয়না। তদন্ত হলেও প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না বলে জানা যায়।


সম্প্রতি বিসিআইসি'র ৯৪তম মাসিক সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয় চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স চালু না করার ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পেছনে জড়িতদের চিহ্নিত করে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে। এই কমিটিতেও আছেন মো. গোলাম ফারুক। অদ্যাবধি কোন প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি বলে জানা। কোন স্বার্থে কালক্ষেপন সে বিষয়টিও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে একাধিক কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

অপছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মনগড়া, প্রমাণ বিহীন ও ভুয়া তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করার অভিযোগ রয়েছে মোহাম্মদ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এসব অনিয়ম অবিচার বন্ধ করতে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষকে আরো সোচ্চার হতে হবে তা না হলে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।


জেবি/এসবি