বছর পার হয়ে গেলেও উদ্বোধনের অপেক্ষায় আধুনিক বাস টার্মিনাল
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২:২৮ অপরাহ্ন, ৭ই জুন ২০২৩
মাদারীপুরে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও বিদ্যুৎ সংযোগসহ নানা জটিলতায় বাস টার্মিনালটি চালু করতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধন না হওয়ার কারনে টার্মিনাল থাকা সত্বেও আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলো শেখ হাসিনা মহাসড়কের দুপাশে দাঁড় করিয়ে রাখতে হচ্ছে।
এদিকে মহাসড়কের পাশে বাসগুলো দাঁড় করিয়ে রাখায় সাধারণ যানবাহন চলাচল ও পথচারীদের হাঁটাচলায় ব্যাহত হচ্ছে। টার্মিনালে প্রবেশ করতে না পারায় বাসের চালকরা বাধ্য হয়ে মহাসড়কের দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছেন। ফলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
মাদারীপুর পৌরসভা কার্যালয়ের সূত্র জানায়, পৌর এলাকার গৈদি মৌজার পাকদী এলাকায় চার একর ৩৭ শতাংশ জমি দুই কোটি ৪৮ লাখ টাকায় অধিগ্রহণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনতলা বিশিষ্ট আধুনিক বাস টার্মিনালের কার্যাদেশ দেয়া হয়। কাজটি ফরিদপুরের আলাউদ্দিন ট্রেডিং কোং লিমিডেট নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়।
প্রথম পর্যায় এই বাস টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। পরে নকশা কিছুটা পরিবর্তন করা হলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার ১৭৭ টাকায়। নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে তিন দফায় তিন বছর কাজের মেয়াদকাল বৃদ্ধি করে। সবশেষ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের ৩০ এপ্রিল মেয়াদের মধ্যে আধুনিক এই বাস টার্মিনালটি নির্মাণ কাজ শেষ করে।
আলাউদ্দিন ট্রেডিং কোং লিমিডেট প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলুর হক বলেন, ‘বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সবকিছুই শেষ। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ইলেক্ট্রিসিটির কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। তাই মৌখিকভাবে আমরা পৌর কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে পৌরসভার কিছু বকেয়া বিল নিয়ে ঝামেলা চলছে। এ কারণে সংযোগ দিচ্ছে না।’
সরেজমিনে বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল আকৃতির আধুনিক বাস টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শেষ হলেও টার্মিনালের ভিতরে নেই কোনো যানবাহন। টার্মিনালের সামনে অর্থাৎ মহাসড়কের দুপাশে লাইন ধরে দূরপাল্লার বাসগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা। অস্থায়ী কাউন্টারগুলো টার্মিনালের সামনে চেয়ার টেবিল বসিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। টার্মিনালের প্রবেশ পথ তালাবন্ধ। এ কারণে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে যাত্রীদের খোলা আকাশের নিচে নয়তো মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
মাদারীপুর সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার কামরুল হাসান বলেন, ‘টার্মিনাল চালু না হওয়ায় আমরা মহা সংকটে আছি। বর্ষাকালে বাসগুলো রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা যায় না। দুর্ঘটনার ভয়াবহ ঝুঁকি থাকে। তা ছাড়া টার্মিনাল চালু না থাকায় যাত্রীরাও চরম দুর্ভোগ পোহান। এটি চালু জন্য আমরা পৌর কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করে যাচ্ছি। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’
এ সম্পর্কে মাদারীপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আবুল কালাম বলেন, ‘আমাদের আধুনিক বাস টার্মিনালটি প্রস্তুত। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে না। এ কারণে আমরা উদ্বোধনের করতে পারছি না। কী কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে না এটা নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আমাদের মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে একাধিক মিটিং করেছেন। তবে আমরা আশাবাদী, খুব শিগগিরি এই টার্মিনালের কার্যক্রম চালু হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে মাদারীপুর পৌরসভার অধীনে থাকা ২১টি মিটারে তিন কোটি ৫১ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া দাবি করে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল উল্লেখ করে মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ওই বছরই জুলাই মাসে আদালতে একটি মামলা করেন। এই মামলাটি আদালতে এখনো চলমান। বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে মাদারীপুর পৌরসভার এই জটিলতা সমাধান না হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ মাদারীপুর বাস টার্মিনালে সংযোগ দিচ্ছে না।
জানতে চাইলে মাদারীপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার আবু আহমদ ফিরোজ ইলিয়াস বলেন, ‘আমাদের ২১টি মিটারের বিল বকেয়া ছিল। ইতোমধ্যে একটি বিল যাচাই-বাছাই করে পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি বিলগুলো যাচাই বাছাই করে পরিশোধ করা হবে। তা ছাড়া মামলা তো চলছেই। আর আধুনিক বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরেই আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু তারা সংযোগ দেয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আমাদের মতবিরোধ ছিল। তবে সেটা সমাধান হয়ে গেছে। আশা করছি, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ দিবেন।
জানতে চাইলে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড মাদারীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মাদারীপুর পৌরসভা থেকে বাস টার্মিনালে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে পূর্ণাঙ্গ আবেদন করেন নাই। তারা পূর্ণাঙ্গ আবেদন করলে আমরা বিধি মোতাবেক সংযোগ দিয়ে দিবো। আমাদের দিক থেকে কোনো জটিলতা নেই। তারা এক বছর আগে টার্মিনালে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে একটি চিঠি দিয়েছিল। সেখানে বলেছিল, টার্মিনালে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন। কিন্তু এভাবে চিঠি দিলেই তো আর সংযোগ দেয়া সম্ভব না। আমরা ফিরতি চিঠি দিয়ে বলেছি, যথাযথ ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া মেনে পূর্ণাঙ্গ আবেদন করলে আমরা সংযোগ দেব। কিন্তু তারা আবেদন করেন নাই।
আরএক্স/