Logo

সমুদ্রের অতল গহ্বরে লুকিয়ে আছে রহস্য

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
৮ জুন, ২০২৩, ২২:৩৩
69Shares
সমুদ্রের অতল গহ্বরে লুকিয়ে আছে রহস্য
ছবি: সংগৃহীত

আর্কটিকের অধিকাংশ এলাকা এবং উত্তর আমেরিকা ও ইউরেশিয়ার একাংশকে ঘিরে রেখেছে

বিজ্ঞাপন

মো. রাকিব ভূঁইয়া: আজ ৮ জুন ‘বিশ্ব মহাসাগর দিবস’। ১৯৯২ সালে এই দিবসটি প্রথম পালন শুরু হয়েছিলো। সেই বছর ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরোতে সংঘটিত জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মহাসাগর দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাতিসংঘ এই দিবসটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় ২০০৮ সালে। প্রত্যেক বছরই নির্দিষ্ট একটি থিমের উপর ভিত্তি করে এই মহাসাগর দিবস উদযাপিত হয়। 

পাশ্চাত্ত্য ভূগোলবিদরা তাদের নিজেদের সুবিধার্থে মহাসাগরকে ৫টি অংশে বিভক্ত করেছেন। সেগুলো হলো- (১) প্রশান্ত মহাসাগর। (২) আটলান্টিক মহাসাগর। (৩) ভারত মহাসাগর। (৪) দক্ষিণ মহাসাগর বা এন্টার্কটিকা মহাসাগর। (৫) উত্তর মহাসাগর বা আর্কটিক মহাসাগর। 

বিজ্ঞাপন

প্রশান্ত মহাসাগর আমেরিকাকে এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে বিভক্ত করেছে। আটলান্টিক মহাসাগর আমেরিকাকে ইউরেশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে বিভক্ত করেছে। ভারত মহাসাগর দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে রেখেছে এবং আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াকে বিভক্ত করেছে। দক্ষিণ মহাসাগর এন্টার্কটিকা মহাদেশকে ঘিরে রেখেছে এবং প্রশান্ত, আটলান্টিক এবং ভারত মহাসাগরের বহিরাংশ হিসেবে নির্দেশিত হচ্ছে। উত্তর মহাসাগর বা আর্কটিক মহাসাগরটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি সমুদ্র হিসেবে মর্যাদা পাচ্ছে যা আর্কটিকের অধিকাংশ এলাকা এবং উত্তর আমেরিকা ও ইউরেশিয়ার একাংশকে ঘিরে রেখেছে।

বিজ্ঞাপন

মহাসাগরের অতল গহ্বরে লুকিয়ে আছে বিস্ময়কর সব রহস্য। যদিও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে আমরা সমুদ্রবিজ্ঞানে অনেকদূর এগিয়েছি। তবুও এখনও অনেক বিষয় রয়েছে যার রহস্যের পর্দা আজও উন্মোচিত হয়নি। ভূপৃষ্ঠের ৭০% যেহেতু সমুদ্রের অন্তর্গত। তাই ভূপৃষ্ঠের ৭০% পৃষ্ঠ সমুদ্রের নিচে অবস্থিত। এবং এই পৃষ্ঠের অনেকটাই মানুষের চোখের বাইরে রয়ে গেছে। ইতিমধ্যে যদিও সৌরজগতের বিভিন্ন জায়গায় গবেষণা চালিয়েছে। তবে সেই তুলনায় সমুদ্রের বিষয় নিয়ে গবেষণার পরিমাণ অনেক কম। আমরা সমুদ্রের বিভিন্ন স্থানের গভীরতা মাপতে সক্ষম হলেও সেখানে এখনো পৌঁছাতে পারিনি। তাই এখনও আমাদের কাছে সমুদ্রের তল অজানাই রয়ে গেছে। সমুদ্রের তল আমাদের কাছে বিস্ময়কর একটি রহস্য।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল : 

বিজ্ঞাপন

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল হল ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত প্রসারিত সমুদ্র, যা ভয় এবং অন্তহীন মুগ্ধতা জাগায়। তবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত এই জায়গায় অনেক জাহাজ এমনকি আকাশের চলাচলকারি বিমানও পর্যন্ত নিখোঁজ হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা এখনো এই জায়গায় জাহাজ ও বিমানের নিখোঁজ হওয়ার রহস্য ভেদ করতে পারেননি। এটি এখনও একটি রহস্যময় অঞ্চল।

বিজ্ঞাপন

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ :

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম স্থান। এটির গভীরতা হিমালয় পর্বত এর চেয়েও বিশাল। এই স্থানের গভীরতা এত বেশি থাকায় এখানকার প্রাণ নিয়ে বিজ্ঞানীদের রহস্যের শেষ নেই। তারা এখনো জানেন না এখানে কোন ধরনের প্রাণী বাস করে। এর তলদেশ সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন। সূর্যের আলো এই গভীরতার প্রবেশ করতে পারে না।

বিজ্ঞাপন

রহস্যময় দুধের সাগর : 

বিজ্ঞাপন

বিশাল সমুদ্রের বিপুল বিস্ময়। সমুদ্র নিয়ে কোন কালেই মানুষের জানার আগ্রহের কমতি ছিল না। বছরের পর বছর যায়, শতকের পর শতক, তবুও সমুদ্র নিয়ে মানুষের জানা শেষ হয় না। এ যেন এক অফুরন্ত জ্ঞানের পাঠাগার। শত শত বছর ধরে নাবিকেরা গভীর সমুদ্রের একটি বিস্ময়ের কথা বলত। তা হল ‘Milï sea’, এটি সমুদ্রের একটি অবস্থা যেখানে রাতে সমুদ্রের পানির বিশাল অংশকে পৃথিবীর চারপাশে আবর্তনরত স্যাটেলাইট থেকে উজ্জ্বল শিখার মতো দেখায়। এটা বেশি দেখা যায় উত্তর-পশ্চিম ভারত মহাসাগরে।

বিজ্ঞাপন

এই সাগরের অবস্থান সোমালিয়ার দক্ষিণ উপকূলে। আড়াইশো বর্গকিলোমিটার স্থানজুড়ে এই সাগরের পানি অন্য সাগরের পানি থেকে একেবারেই আলাদা। বিশেষ করে রাতে মিল্কি সির পানি এক অপার্থিব রং ধারণ করে। পানির রঙের কারণেই কালের বিবর্তনে এই সাগরের নামের সঙ্গে মিল্কি অর্থাৎ দুধের ন্যায় সাদা শব্দটি জড়িয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাল্টিক সাগরতলের অমীমাংসিত এক রহস্য : 

পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে জলের অসংখ্য আধার। মহাসাগর, সাগর, উপসাগর, হ্রদ, নদী ছাড়াও রয়েছে গভীর-অগভীর বহু জলাভূমি। জলের এই উৎসগুলোর তলদেশ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। জলের এই আধারগুলোর তলদেশে রয়েছে স্থলভূমি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এক জগৎ। সেখানে রয়েছে অদ্ভুত দেখতে সব  জীব, অদ্ভুত আকৃতির পাহাড়, আগ্নেয়গিরি, শৈলশিরা- আরো কত কী! এর সামান্যই আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের জানার বাইরে রয়েছে বিশাল এক জলজগত। প্রতিনিয়ত মানুষ অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে এই জগতকে জানার জন্য। 

বিজ্ঞাপন

সাগর-মহাসাগর আর নদীর তলদেশে যেমন অনেক প্রাকৃতিক জিনিস রয়েছে, তেমন মানুষের নির্মিত অনেক কাঠামোও পাওয়া যায়। যেমন: সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়া প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন, ঝড়-তুফানে ডুবে যাওয়া জাহাজ, নৌকা, উড়োজাহাজ, যুদ্ধ বিমান এবং আরো অনেক কিছু। এসব ধ্বংসাবশেষের মাঝে প্রায়ই এমন কিছু দেখা যায়, যা অনেক স্বাভাবিকের সংগায় উতরোয় না। ঠিক এমনই এক অস্বাভাবিক জিনিসের দেখা পাওয়া যায় বাল্টিক সাগরের তলদেশে।

অদ্ভুত সুন্দর শব্দ সৃষ্টিকারী প্রাণি :

১৯৯৭ সালে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অদ্ভুত সুন্দর একটি শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। ওই সময় সমুদ্রে পরিভ্রমণকারী জাহাজের বেশ কয়েকজন লোক শব্দটি রেকর্ড করে রাখে।

পরবর্তীতে বিজ্ঞানীদের কাছে এই শব্দটি হস্তান্তর করা হয়। তারা শব্দটি শুনে অবাক হয়ে যায়। তারা নিশ্চিত করেন যে এটি মানুষের তৈরি কোন ইঞ্জিনের শব্দ নয়। শব্দটি বেশ জোরে এবং কম ফ্রিকুয়েন্সিতে শোনা যাচ্ছিল।এবং শব্দটির মধ্যে অদ্ভুত সুন্দর একটি প্যাটান ছিল। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন হয়তো গভীর সমুদ্রের অনাবিষ্কৃত কোন প্রাণী। এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা এই শব্দের রহস্য ভেদ করতে পারেননি।

পরিশেষে বলা যায় যে, ‘বিশ্ব মহাসাগর দিবস’ শুধুমাত্র উদযাপন ও সম্মানের জন্যই নয়, আমাদের সমুদ্রকে সংরক্ষণ ও রক্ষা করার ক্ষেত্রেও একটি অনন্য সুযোগ প্রদান করে। মানব জীবনে সমুদ্রের গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে এবং যে উপায়ে আমরা এটিকে রক্ষা করতে পারি। কারণ মহাসাগর আমাদের গ্রহের ফুসফুস; শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে, খাদ্য ও ওষুধের একটি প্রধান উৎস এবং জীবজগতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের সমগ্র পৃথিবীর ৩/৪ ভাগ জলে পূর্ণ। সমুদ্র এবং সামুদ্রিক জীবনকে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের বিপদ থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের। পরিশেষে বলা যায় যে, ‘বিশ্ব মহাসাগর দিবস’ পৃথিবীতে পানি এবং জীবন ভারসাম্য রক্ষার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

জেবি/ আরএইচ

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD