ভোগান্তির ৫৩ বছর
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:০৪ অপরাহ্ন, ৯ই জুন ২০২৩
পটুয়াখালী কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার-ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ১৩ কিঃ মিঃ সড়কটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই কাঁচা। সামান্য বৃষ্টি হলেই চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। প্রতিনিয়তই মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাঁচা সড়ক পাঁকা হবে এ আশায় এলাকাবাসী ৫৩ বছর ধরে অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু কাঁচা সড়ক আর পাঁকা হয় না। জনপ্রতিনিধিরা বারবার শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই সড়কটিতে কোনো কাজ হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ধুলাসার - ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের সড়কের সংযোগস্থল অনন্তপাড়া খাপড়াভাঙ্গা ব্রিজ হতে মহিপুর থানা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকা না করায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো লোককে কাদা ভেঙে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষায় সড়কটি কর্দমাক্ত হয়ে যায়। ফলে কোনো ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল তো দূরের কথা, মানুষ পায়ে হেঁটে চলতেও কষ্টের শিকার হন। এ সড়ক দিয়ে সুরডুগী, তারিকাটা, মনসাতলী, সেরাজপুর, উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামের লোকজন যাতায়াত করে থাকে। বিকল্প কোন রাস্তা না থাকায় এলাকাবাসী বাধ্য হয়েই কাদা-পানি মাড়িয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে।
মহিপুর থানা, কুয়াকাটা হাসপাতাল, কলাপাড়া উপজেলা সহ উপজেলার সকল কার্যক্রমে এই রাস্তা ব্যবহার করতে হয়, এছাড়াও অফিস আদালত সরকারি বাংক জরুরি সেবা ফায়ার সার্ভিস সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্হাপনার সুফল থেকে বঞ্চিত এই এলাকার বাসিন্দারা। ভোগান্তিতে গ্রামীণ হাটবাজারের ব্যবসায়ীরাও রাস্তায় কাঁদা থাকায় সাপ্তাহিক বাজার সহ দোকানপাটে আসছেনা কেউ এতে বেচা বিক্রি নেই বললেই চলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা পানিতে একাকার। সড়কের মাঝখানে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের। আর তাতে প্রতিনিয়ত জমছে পানি। চলাচল করতে পারছে না যানবাহন। পায়ে হেটে চলাচল করাও এখন কষ্টসাধ্য। সড়কটি পাঁকা হলে একদিকে যেমন বিভিন্ন গ্রামের ছাত্র-ছাত্রী ও লোকজনের যাতায়াতে ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে মুমূর্ষু রোগী বহনে বেগ পেতে হবে না। শ্রমজীবী মানুষেরা ভ্যান, অটোরিকশা চালিয়ে সহজে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। এলাকার কৃষকরা ধান, কাঁচা ফসল কম খরচে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন।
ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের সুরডুগী গ্রামের সরকারি চাকরিজীবী হাচিনা বেগম জানান , আমি ফ্যামিলী প্লানের ডাক্তার এখানে দুই এক ইউনিয়নে এমবিবিএস নেই কোন মহিলার বাচ্চা হলে আমাকে যেতে হয়। কিন্তু রাস্তা কাঁচা থাকায় অনেক সময় যেতে পাড়িনা ঘটে দূর্ঘটনা এই রাস্তাটি খুবই দরকার।
সেরাজপুরের মেডিসিন বিক্রয় করা হাসান বলেন, মহিপুর সদরে যেতে এখান থেকে যেতে প্রতিদিন আমাকে ৩ কিঃ মিঃ রাস্তা অতিক্রম করতে হয়, যা খুবই কষ্টসাধ্য মাঝে মধ্যে বেশি বৃষ্টি হলে যেতেই পাড়িনা, কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের একটি মাত্র রাস্তা এটি। বর্ষার দিনে এই রাস্তা খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে চলা যায় না ধুলোবালিতে, অনেক সময় মাটি পিছলে বয়স্ক মানুষ পড়ে গুরুত্বর আহত হয়। মোটরসাইকেল, ভ্যান গাড়ি, সাইকেল কাদার মধ্যে দেবে গিয়ে উল্টে যায়। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
চাপলি বাজারের বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, মশিউর রহমান বলেন, শুক্রবার এই বাজারে হাঁট বসে, এখানে বৌলতলী নয়াকাটা তারিকাটা সুরডুগী খাপড়াভাঙ্গা সহ, কয়েকটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম থেকে হাজার মানুষ আসেন। সপ্তাহিক হাট করতে কিন্তু বৃষ্টি হলে সিংহভাগ মানুষ বাসা বাড়িতে থেকে যায় এই জনচলাচল রাস্তাটি পাঁকা করণ সময়ের দাবি। তিনি আরও জানান, বাজার উন্নয়নে এই কানেক্ট রাস্তা গুলোর আগ্রঅধিকার বেশি থাকে তবু কেন হচ্ছেনা জানা নেই,এই রাস্তা গুলো পাঁকা হলে বাজার উন্নয়ন সহ বেচাবিক্রি বেশি হবে যেখান থেকে সরকার পাবে রাজস্ব আমরা পাবো স্মার্ট বাংলাদেশ।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কলাপাড়া এলজিডি অফিসার বলেন, স্থানীয় এমপি মহোদয় অনেক গুলো রাস্তার জন্য চাহিদা দিয়েছেন। দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর চাহিদাটি পাঠানো হবে। এলাকাবাসীর চলাচলের উপযুক্ত করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তবে বেরিবাঁধে রাস্তা গুলোর কাজ করা আমাদের এলজিইডির জন্য কঠিন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় থাকায় তাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা যাচ্ছেনা তবুও দেখি মানুষের দুঃখ লাঘবে আমরা সমন্বয় করে কাজ করবো।
স্থানীয় সাংসদ সদস্য আলহাজ্ব মহিব্বুর রহমান মহিব জানান , ইতিমধ্যে উপজেলার বেশ কয়েকটি রাস্তার জন্য কাগজপত্র অফিসে পাঠিয়েছি আশা করছি খুব দ্রুত এই রাস্তা গুলো মানুষ চলাচলের উপযোগী হবে। সরকারের কোটি টাকা উন্নয়ন হলেও এই কাঁদামাখা রাস্তার জন্য এগুলো কোন কাজে আসছে না এগুলো গুরুত্ব সহকারে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আরএক্স/