ভাঙ্গন আতঙ্কে মানিকগঞ্জের পদ্মার পাড়ের মানুষ


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


ভাঙ্গন আতঙ্কে মানিকগঞ্জের পদ্মার পাড়ের মানুষ

মানিকগঞ্জে হরিরামপুরে পদ্মা নদীর মাঝখানে বিশাল আকারের চর পড়ায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পানির তীব্র স্রোত তীর ঘেষে যাওয়ায় এ বছর প্রবোল ভাঙ্গনের আশংকা করছে স্থানীয়রা।

এলাকাবাসী জানায়, জেলার হরিরামপুর উপজেলাটি পদ্মা নদী বেষ্টিত এলাকা। এ বছর পদ্মার স্রোত তীর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে, দড়িকান্দি, আন্ধারমানিক, ধুলশুড়া, বাহাদুরপুর, আলগীচর, বকচর,ভাওয়ারডাঙ্গী, খালপাড় বয়ড়া, দাসকান্দি বয়ড়া, কর্মকারকান্দি বয়ড়া ও কমলাপুরসহ উপজেলার  অর্ধশতাধিক গ্রাম । ইতিমধ্যে হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউপির ৩১৮টি গ্রামের অধিকাংশই বিলীন হয়ে গেছে। গত ২০ বছরে ভাঙনের কবলে পড়ে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার তাদের কৃষি জমি, বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়েছে। আবার কেউ কেউ একাধিকবার নদী ভাঙনের শিকারও হয়েছেন। 

তারা আরো  জানান, বেরিবাঁধ, উপজেলা পরিষদ,থানা, স্কুল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ সরকারি একাধিক স্থাপনা নদী থেকে আধা-কিলোমিটারের দুরে থাকার পরও  ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিত নদী শাসন ব্যবস্থা না থাকায় ভাঙ্গন  তীব্র আকারে ধারন করছে বলে স্থানীয়রা জানান। 

অপরদিকে, হরিরামপুর, চর ভদ্রাসন এবং ফরিদপুর সদর উপজেলার অন্তর্গত পদ্মার মাঝে জেগে ওঠা চরে এ উপজলার তিনটি ইউনিয়ন (আজিমনগর, লেছড়াগঞ্জ ও সুতালড়ি) অবস্থিত যেখানে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করে। এ বছর বন্যায় সুতালড়ি রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কল্যান কেন্দ্র, হারুকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেলিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য মানুষের ভিটি-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং হাতিঘাটা বাজার, হাতিঘাটা আশ্রয়ন প্রকল্প (যেখানে ১৯০ টি পরিবার বসবাস করে), নব নির্মানাধীন ৪ তলা বিশিষ্ট আজিমনগর উচ্চ বিদ্যালয় নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে আছে।



ভাঙ্গন কবলিত খালপাড় বয়রা গ্রামের সিদ্দিক  বলেন, “নদীর মধ্যখানে চর পড়ায় পাড় ঘেইষা ধার যাওয়ার কারনে আমাগো বাড়ি ভাইংগা গেছে। আগুনে পুড়লে মাটিটুকু  থাকে নদীতে ভাঙলে কিচ্ছু থাকেনা এই নদীতে আমার বাবদাদার ভিটাটাও কাইরা নিছে। আমি তহন অনেক ছোট ছিলাম,নদীতে যহন আমাগো সবকিছু কাইরা নিলো তারপর আমার বাবা এই বয়রা আইসা বাড়ি করলো। পরে সরকার এই জায়গায় বাঁধটা দিয়া দিলো তারপর থেকে একটু কম ভাঙতো। ভালোই ছিলাম। গত বছর দেখলাম আমাগো বাড়ির সামনে দিয়া চর পড়ছে, কত মানুষ সেই চরে আসতো। এহন ঐ জায়গা দিয়া টলার,স্টিমার যাইতেছে। এ বছরও চর পড়ার কারনে যে ভাব কইরা পানি যাইতেছে আমার মনে হয় এই বেরিবাধ, বাড়িঘর কিছুই থাকবো না। এহন আল্লা মালিক জানে কি হইবো ? আমি ছোট থ্যাইকা দেখতাছি যে বছর কিনার দিয়া পানির ধার যায় সেই বছরই বেশি ভাঙ্গে”।

পদ্মার পাড়ের  আইজুদ্দিন মীর বলেন, “এ বছর নদীর মাঝখানে বেশি পরিমানে চর জাগায় নদীর তীর দিয়ে পানির তীব্র স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় নিচের মাটি ও বালি পানির সাথে চলে যায় এ কারনে নদী বেশি ভাঁঙ্গে। এই বছর যদি সরকার আগে থেকেই নদী শাসনের কোন ব্যবস্থা না করে তাহলে আমাদের ভিটামাটি কিছুই থাকবে না”।

আব্দুর রহমান বলেন,“ আমি খালপাড় বয়রা গ্রামে ৫২ বছর যাবৎ বসবাস করছি। ১৯৯৮ সালে আমাদের পুরাণ বাড়ি ভেঙ্গে যায়। এই ভাঙ্গা-গড়ার মধ্যেই আমাদের জীবন। আমার দেখা মতে, নদীর কিনার দিয়ে স্রোত বেশী থাকলে ভাঙ্গনের প্রবনতাও বেশী থাকে। সরকার যাদি আমাদের দিকে একটু সুদৃষ্টি দিয়ে নদীর মাঝখানের চর কেটে স্রোতের গতিপথ ঘুরাইয়া দেয় তাহলে আমাদের গ্রামের সবাই শান্তিতে বসবাস করতে পারত”। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙ্গনের বিষয়ে উপজেলা ও জেলা সমন্বয় সভায় নিয়মিত আলোচনা করছি। খুব তাড়াতাড়ি আমরা একটি সিন্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো। এ ছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একটি লিখিত চিঠি দিয়ে তাদেরকে অবগত করেছি।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী  মো: মাঈন উদ্দিন জনবাণীকে বলেন, হরিরামপুর পদ্মার ভঙ্গনের বিষয় নিয়ে ডিসি অফিসের সমন্বয় মিটিংএ আলোচনা হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে পদ্মার চরে ডিজিটাল সার্ভে করে কতটুকু বালু কাটা যাবে তা নির্নয় করে জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠিয়েছি।

এসএ/