ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আতঙ্কের আরেক নাম তাকওয়া পরিবহন


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:০১ অপরাহ্ন, ২৫শে জুন ২০২৩


ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আতঙ্কের আরেক নাম তাকওয়া পরিবহন
ছবিটি তোলা হয়েছে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা থেকে

আতঙ্কের আরেক নাম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তাকওয়া পরিবহনের ‘হাইওয়ে মিনি’ চলে পুলিশের সহযোগিতায়। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালকের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। মহাসড়কের গাজীপুরের  শ্রীপুর অংশের মাওনা চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহের ভালুকা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রতিদিন মহাসড়কে এসব যান।  


অভিযোগ রয়েছে, তাকওয়া পরিবহনের হাইওয়ে মিনি চলাচলের পেছনে মাওনা হাইওয়ে থানা ও ভালুকা ভরাডোবা হাইওয়ে থানা পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা রয়েছে।


গত ১৬ জুন হাইওয়ে মিনি পরিবহনের একটি গাড়িতে ভালুকা এলাকায় এক নারীকে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেয়া হয়। দুই দিন চিকিৎসার পর ওই নারী হাসপাতালে মারা যায়। ওই নারী গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক। ওই ঘটনায় গাড়িটি জব্দের পাশাপাশি এর চালক ও সহকারীকে আটক করেছে পুলিশ। নিহতের ভাই বাদী হয়ে ভালুকা থানায় হত্যা মামলাও দায়ের করেছে। কাগজপত্রবিহীন সেই গাড়িটির চালকের কোন লাইসেন্স ছিল না।


এ ঘটনার এক সপ্তাহ পর গত শুক্রবার (২৩ জুন) মহাসড়কের শ্রীপুর উপজেলার রঙিলা বাজার এলাকায় একই পরিবহনের একটি গাড়ি টেনে হিঁচরে হত্যা করা হয় শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে। নিহত শহিদুল ইসলাম (৬৫) উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে। এ ঘটনায় শহিদুলের স্ত্রী সাহারা খাতুনও গুরুতর আহত হয়। সে বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।


শহিদুল ইসলাম তার স্ত্রীকে নিয়ে এক স্বজনকে দেখতে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। সড়ক পাড় হওয়ার সময় হাইওয়ে মিনি তাকওয়া পরিবহনের একটি গাড়ি তাদের উপর উঠে পড়ে। পরে শহিদুলের স্ত্রী ছিটকে সড়কের পাশে পড়ে গেলেও শহিদুল বাসের সাথে পিষে যায়। পরে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা টেনে হিঁচড়ে আনলে তার মৃত্যু হয়।


পরিবহন শ্রমিক ও হাইওয়ে মিনি তাকওয়া পরিবহনের বেশ কয়েকজন চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ৬০টি গাড়ি হাইওয়ে মিনি তাকওয়া পরিবহন নাম দিয়ে চলাচল করছে বহুদিন ধরেই। এসব গাড়ির নেই কোন ফিটনেস। বেশ কিছু গাড়ি স্থানীয় ওয়ার্কশপগুলাতে নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি করা। নেশাগ্রস্থ যুবক ও অদক্ষ চালকদের নিয়োগ করা হয়েছে এসব পরিবহনে।


আরও পড়ুন: স্ত্রীকে ধাক্কা দেওয়ার প্রতিবাদ করায় স্বামীকে লাথি দিয়ে ফেলে বাসে নিচে পিষে হত্যা


এদের কারণে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি সামাজিক অপরাধও বাড়ছে। এসব পরিবহনের শ্রমিকরাও যাত্রীদের মালামাল, টাকা পয়সা ও মুঠোফোনও ছিনতাই করে মাঝে মধ্যে। প্রতিটি মিনি বাসকে মাসে তিনহাজার টাকা মাসহারা গুনতে হয়। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে এ টাকার একটি ভাগ যায় হাইওয়ে পুলিশের পকেটে। তারা সরাসরি এসব অবৈধযান চলাচলে সহযোগিতা করেন। এছাড়াও মোড়ে মোড়ে এসব পরিবহন থেকে চাঁদা তোলে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও।


মহাসড়কের নিরপত্তায় মাওনা হাইওয়ে থানার অধিভুক্ত এলাকা হচ্ছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ি তুলাফার্ম থেকে মহাসড়কের নাসির গ্লাস পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার। এর পর অংশ ভালুকা ভরাডোবা হাইওয়ে থানার অধীন। দুই থানার অধীনের এলাকায় চলছে অবৈধ যান হাইওয়ে মিনি পরিবহন।


হাইওয়ে মিনি পরিবহনের গাড়ির মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, সব কিছু ম্যানেজ করেই চলতে হয়। এর উপর জায়গা জায়গা চাঁদা দিয়ে দিন শেষে যে লাভ হয় কর্মচারীদের বেতন ভাতার পেছনেই ব্যয় হয়ে যায়। তিনি বলেন, জিপি (চাঁদা) দিলে পুলিশ আমাদের আর হয়রানী করে না, না হলে মামলা দিয়ে দেয়।


হাইওয়ে মিনি পরিবহনের মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাইওয়ে মিনি পরিবহনের ৪০-৪৫টি বাস রয়েছে। এসব গাড়ি মহাসড়কে লোকাল বাস হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। তবে ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা চলাচলের কারণে অনেক পরিবহন শ্রমিক অটোরিকশা চালাতে চলে গেছে। দক্ষ চালক না থাকায় মালিকরা অদক্ষ চালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিয়েছেন। ফিটনেস বিহীন গাড়ি মহাসড়কে কেমন করে চলাচল করে এ বিষয়ে তিনি বলেন, সবাই মিলে মিশেই আমরা গাড়ি চালাই।


হাইওয়ে মিনি চলার পেছনে পুলিশের সহযোগিতার বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে মাওনা হাইওয়ে থানার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কংকন কুমার বলেন, আমরা এসব অবৈধযানে আটক করে নিয়মিত মামলা দিচ্ছি। একইভাবে বক্তব্য দেন ভরাডোবা হাইওয়ে থানার ওসি মাহমুদ।


তবে এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মহাসড়ক নিরাপদ করতে পুলিশ সকল ধরনের অবৈধযান চলাচল বন্ধের বিষয়ে কাজ করছে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই কাজ করছি। তবে যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায় তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।


জেবি/ আরএইচ/