দালালদের প্রলোভনে পড়ে বিপাকে পরিবার
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬:২৬ অপরাহ্ন, ৬ই জুলাই ২০২৩
পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে একজনের মৃত্যু হলে আপোষের প্রলোভন দেখিয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা প্রক্রিয়া স্থগিত করান স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গ্রামের দালালরা। ময়না তদন্তের পর মরদেহ পুড়িয়ে ফেললে আপোষের কথা অস্বীকার করছেন বিরোধীয় পক্ষ। মোটা টাকার বিনিময়ে অস্বীকার করছেন দালালরাও।
ঘটনাটি ঘটেছে,আটোয়ারী উপজেলার তোড়িয়া ইউনিয়নের বারঘাটি গ্রামে। দালালের প্রলোভনে পরিবারটি এখন পড়েছে বিপাকে। বিষয়টি এলাকাতেও সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। এদিকে মৃত্যুর সনদও দিচ্ছেন না চেয়ারম্যান।
এসব অভিযোগ এনে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই গ্রামের মৃত গোবিন চন্দ্র দেবের ছেলে গোপাল চন্দ্র দেব।
অভিযোগে জানা যায়, তোড়িয়া মৌজার এস এ ১৬৬৮ নং দাগের ৯ শতাংশ জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দন্দ্ব চলছিল মৃত গোবিন চন্দ্র এবং তোড়িয়া ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ অনিল চন্দ্র দেবের মধ্যে। গত ১৬ এপ্রিল দুপুরে একই জমিতে দুপক্ষই কৃষি কাজ করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। মৃত গোবিন চন্দ্রের পরিবারের অভিযোগ কোদালের ডাঠা দিয়ে গোবিন চন্দ্রের বুকে আঘাত করেন অনিল চন্দ্র দেব। আহত অবস্থায় তাকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। পরে আটোয়ারী হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ নিয়ে যায় পুলিশ।
এদিকে গোবিন চন্দ্রের ছেলেরা এ ঘটনায় হত্যা মামলা করতে চাইলে স্থানীয় কয়েকজন প্রতিবেশি ও তোড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ তাদেরকে আপোষের প্রস্তাব দেন। পরে ৫ লক্ষ টাকা ও ৯ শতক জমির মালিকানা নিশ্চিত করার প্রলোভন দেখিয়ে চুপচাপ থাকতে বলা হয় তাদেরকে। ময়না তদন্তের পর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হলে আপোষের প্রস্তাবকারীরা তাড়াতাড়ি দাহ করার পরামর্শ দেন। মরদেহ পুড়ে ফেলার পরদিন থেকেই আপোষের আলোচনা অস্বীকার করছেন প্রতিপক্ষ ও দালালরা।
এদিকে বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে গোবিন চন্দ্রের মৃত্যুর সনদ চাইলেও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পরিবারকে মৃত্যু সনদ দিচ্ছেনা। এসব অভিযোগ এনে বিচারের দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন অসহায় পরিবারটি।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে স্ত্রীর উপর অভিমান করে স্বামীর আত্নহত্যা
গোবিন চন্দ্রের স্ত্রী নলিতা রানী জানান, আমার চোখের সামনে কোদালের ডাঠা দিয়ে আমার স্বামীর বুকে আঘাত করেছে। পরে তারা আপোষের কথা বলে। আমরা গরিব মানুষ চেয়ারম্যান ও স্থানীয় নেতাদের কথা ফেলতে পারিনি।
ছেলে গোপাল চন্দ্র রায় জানান, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ এবং বেশ কয়েকজন প্রতিবেশি আমাদেরকে আপোষ করার জন্য প্রলোভন দিয়েছে। তারা হত্যার কথা চাপা রেখে পুলিশকে হার্ট এ্যাটাকের কথা বলতে বলেছে। এখন তারা মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে আপোষ মিমাংসার কথা অস্বীকার করছে। আমাদের কাছে সবকিছু মোবাইল রেকর্ড রয়েছে। তাদের জন্য আমরা আদালতে আশ্রয় নিতে পারিনি। এখন মৃত্যু সনদও দিচ্ছেনা। আমাদেরকে নানা রকম হুমকিও দিচ্ছে। আমরা দুই ভাই মা এবং পরিবার নিয়ে গভীর সংকটে আছি।
এদিকে জমি নিয়ে দন্দ্বের কথা স্বীকার করলেও সংঘর্ষ এবং আপোষের কথা অস্বীকার করেছেন অনিল চন্দ্র দেব। তিনি জানান, গবিন চন্দ্র দেবের সাথে কোন সংঘর্ষ হয়নি। তিনি হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছে। আপোষের প্রশ্নই আসেনা। অনিল চন্দ্রদেব অস্বীকার করলেও আপোষ প্রলোভনের কথা বলছেন অনেকে।
গ্রামের নিতাই চন্দ্র জানান, অনিল চন্দ্র দেব ৫ লক্ষ টাকা ও জমির মালিকানা দিতে চেয়ে আমার মাধ্যমে আপোষের প্রস্তাব দিয়েছিল।
তোড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ জানান, মরদেহের ময়না তদন্ত হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট এখনো আসেনি। এ ঘটনায় আটোয়ারী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যু সনদ দেয়া যাবেনা।
আটোয়ারী থানার ওসি সোহেল রানা জানান, অনেক রাতে আমরা মরদেহ পোষ্ট মর্টেমের জন্য নিয়ে আসি। গোবিন চন্দ্র দেবের ছেলেরা ময়না তদন্ত করতে চায়নি। আপোষের প্রলোভন ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই।
জেবি/ আরএইচ/