কমিশন দিয়ে পাহাড় গিলে খাচ্ছে পাহাড় খেকোরা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


কমিশন দিয়ে পাহাড় গিলে খাচ্ছে পাহাড় খেকোরা

খাগড়াছড়ির রামগড়ে অবাধে চলছে পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলনের উৎসব। পাহাড় খেকোরা হরেক রকম করে নির্বিচারে কাটছে পাহাড়,বনাঞ্চল,ফসলি মাঠের জমি। প্রতিবছর এ পাহাড় কাটার এ উৎসব মূলত শুরু হয় বছরের শেষে অবৈধ ইটের ভাটা গুলোতে মাটি দেওয়ার জন্য। তবে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অজুহাত দেখিয়ে এবছর পুরো সময় জুড়েই পাহাড় কেটে চলছে একটি চক্র। অভিযোগ রয়েছে কমিশনের বিনিময়ে এ চক্রটিকে প্রত্যক্ষ সমর্থন দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলনের অপরাধে জরিমানা করলেও কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সেখানে পুরোদমে আবারো পাহাড় কাটায় ব্যস্ত হয়ে যায় পাহাড় খেকোরা। এতে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে নির্বিচারে পাহাড় কাটার জন্য প্রশাসনকে দুষছে স্থানীয় জনগণ।

জানা যায়,রামগড়ে কোদাল দিয়ে মাটি  কেটে ও তা বহনের জন্য ওয়া ব্যবহারের শর্তে সোনাইআগা এবং তৈছালা ছড়া এই ২টি জায়গায় মাটি ও বালু উত্তোলনের ইজারা দেওয়া হয়।অথচ রামগড়ের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ৩০টি পয়েন্টে এস্কেভেটর ব্যবহার করে নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে।স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় পাহাড়-টিলা ধ্বংস করা হচ্ছে। রাস্তা তৈরি বা মেরামতের অজুহাতসহ নানা কায়দা-কৌশলে কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলা।যার বিনিময়ে পাহাড়খেকো চক্র  থেকে নিয়মিত কমিশন নেয় কয়েকজন নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাটি ব্যবসায়ী জানান,এক ড্রাম ট্রাক পাহাড় কাটা মাটি বিক্রি করা হয় ১২শ টাকা হতে ১৪শ টাকায়। আর ফসলি জমির মাটি বিক্রি হয় ১৮৫০ টাকা। ইটের ভাটায় সরবরাহ করা এক ড্রাম ট্রাক মাটি বিক্রির ১৮৫০ টাকার মধ্যে পায় ১৪শ টাকা পায় তারা  আর  ৪৫০ টাকা যায় সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারিদের কাছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রামগড়ের পাতাছড়া, বলিপাড়া, চিনছড়ি পাড়া, বৈদ্যটিলা, কালাডেবা, সোনাইআগা, খাগড়াবিল, শ্মশানটিলা, নজিরটিলা, ভতপাড়া সহ বিভিন্ন জায় অন্তত ১০-১৫টি পয়েন্টে নির্বিচারে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে।আইন অমান্য করে এস্কেভেটর (ভ্যাকু), কোদাল ও শাবল দিয়ে ফসলি জমির টপসয়েল ও লাল মাটির পাহাড় কাটা হচ্ছে।যার ফলে পাহাড়ের ওপরের অংশ ন্যাড়া করে উজাড় করা হয়েছে গাছপালা। কোথাও খাড়া ভাবে, আবার কোথাও কাটা হচ্ছে আড়াআড়ি ভাবে। আর কিছু কাটা হচ্ছে উঁচু চূড়া থেকে। এভাবে হরেক রকম কায়দায় কাটা হচ্ছে রামগড়ের বিভিন্ন পাহাড়।এসব মাটি  অবৈধ ইটভাটা,পুকুর ভরাট,রাস্তা সংস্কার সহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মানে ব্যবহৃত হয়।

অভিযোগ রয়েছে মাটি ব্যবসায়ীরা এক শ্রেণীর দালাল দিয়ে সাধারণ কৃষককে লোভে ফেলে পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি বিক্রিতে উৎসাহিত করছেন।যার ফলে নিজের ভিটের মাটি পর্যন্ত বিক্রি করতে দ্বিধা করেনা তারা।নজির টিলা এলাকায় পাহাড়ের ওপর পরিবার নিয়ে থাকেন জসিম উদ্দীন নামের এক ব্যক্তি।দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে নিজের ভিটের মাটি বিক্রি করতেন তিনি।খবর পেয়ে পাহাড় কাটার অপরাধে তাকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে রামগড় উপজেলা প্রশাসন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্কুল শিক্ষক জানান,রামগড়-ফেনী মহাসড়ক সহ উপজেলার প্রতিটি অলি গলির রাস্তাগুলো যেন একরকম মরন ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন ইট ভাটার ব্যবহারের জন্য ডাম্পার, মিনিট্রাক দ্বারা সরবরাহ করা কাঠ ও মাটি রাস্তায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে সড়কটি।চরম জনদুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে সাধারন মানুষ। প্রশাসনেরর কোন সঠিক নজরদারি নেয়।যার জন্য অবাধে এসব পাহাড় কেটে পার পেয়ে যাচ্ছে তারা।

রামগড় উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আশিকুর রহমান সুমন বলেন,এভাবে পাহাড় কাটতে থাকলে রামগড়ে একটি পাহাড়ও থাকবেনা।ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে মানুষ।প্রতিবছর এমনিতে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।প্রশাসনের এখনই সঠিক সময় এ পাহাড় খেকো চক্রকে থামানো।

দলের নাম ভাঙ্গিয়ে পাহাড় কাটার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম বলেন,কারো ব্যক্তিগত দায় আওয়ামীলীগ নিবেনা। যারা এ বেআইনী কাজে নিয়োজিত আছে তারা নিজ দায়িত্বে এসব করছে। দল কাউকে এসবে সমর্থন বা সহযোগিতা দেয় না এবং দেবে না।

রামগড় পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম কামাল জানান,পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি উৎসবে পরিনত হয়েছে।প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।

বাংলাদশে পরিবেশ অধিপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম জানান,পাহাড় কাটা গুরুতর অপরাধ।এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসক এবং ইউএনও কে জানানো হবে।

রামগড় উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইউএনও উম্মে হাবিবা মজুমদার বলেন, যখনই পাহাড় কাটার খবর পাই, তখনই অভিযানে যাই। ইতোমধ্যে দুই ব্যক্তিকে  এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এসএ/