সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের বাড়িতে ডাকাতি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের বাড়িতে ডাকাতি

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী মেজর বজলুল হুদা থাইল্যান্ডে অবস্থানের প্রথম তথ্যদাতা এবং সেখান থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেনের ধামরাইয়ের বৈন্যা গ্রামের বাড়িতে দুর্র্ধর্ষ ডাকাতি হয়েছে। 

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে মুখোশ পরিহিত ডাকাতরা সোহরাব হোসেন তার স্ত্রী ও ছেলেসহ বাড়ির সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ৩ লাখ টাকা, ৮ ভরি স্বর্ণালংকার, ৩টি মোবাইল সেট, সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্কসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। পরে জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ার পর ভোরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সোহরাব হোসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমদের মেজো ভাই।  

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সাবেক রাষ্ট্রদূত বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন অবসরে যাওয়ার পর গত এক বছর ধরে বৈন্যা গ্রামের নিজ বাড়ির দু’তলা ভবনে স্ত্রী রওশন আরা, প্রতিবন্ধী ছেলে নিলয় (৪৫)কে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তাদের সঙ্গে কেয়ারটেকার নজরুল ইসলাম ,রব্বানি ও কাজের বুয়াসহ আরও ৪ জন থাকেন।  বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মুখোশ ও হাফপ্যান্ট পরিহিত ১২-১৪ জনের একদল ডাকাত প্রথমে নিচ তলায় কেয়ারটেকার নজরুল ইসলাম ও রাব্বানির হাত-পা বেধে ওপরের তলায় নিয়ে যায়। এরপর দ্বিতীয় তলায় প্রতিবন্ধী ছেলে নিলয়ের কক্ষে ঢোকে তার বুকের ওপর উঠে বসে মারধর করে এক ডাকাত। এরপর পরিবারের সোহরাব হোসেন ও তার স্ত্রীকে চাপাতিসহ অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাবি ছিনিয়ে নেয়। পরে নগদ ৩ লাখ টাকা, ৮ ভরি স্বর্ণালংকার, ৫টি মোবাইল সেট, সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্কসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। তবে ভবনের ভিতরে ডাকাতরা কিভাবে ঢোকেছে তা কেউ বলতে পারেনি। বাড়ির কোন দরজা বা তালাও ভাঙ্গা হয়নি। 

ভুক্তভোগী সোহরাব হোসেন জানান, ডাকাতরা প্রায় দেড় ঘন্টা অবস্থান করে আমাকে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করেছেন। তারা আমাকে স্যার বলেই সম্বোধন করেছেন। তারা চলে যাওয়ার সময় হুমকি দিয়ে বলে গেছেন, মামলা করলে আপনাদের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে স্যার। ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার কোন দরজা জানালা ভাংচুর করেনি। কিভাবে ডাকাতরা ঘরে ঢোকেছে তাও বলতে পারেননি তিনি। এতে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। 
সোহরাব হোসেনের স্ত্রী রওশান আরা হোসেন বলেন, কয়েকজন ডাকাত সিরাজগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেছেন।
 
 এদিকে ভাইয়ের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা শুনে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদ। 

এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বাড়িতে ডাকাতি হবে তা ভাবতেই পারিনি। আমার মেজো ভাই মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন যখন থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ছিলেন ওই সময় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মেজর বজলুল হুদা থাইল্যান্ডে অবস্থান করছিলেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলাকালীন সময়ে আমার ভাই পাকিন্তানে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ওই সময় আমার ভাই সোহরাব হোসেনকে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিয়েছিলো। কিন্তু এখন কি কারণে আমার ভাইয়ের বাড়িতে ডাকাতি হলো তা বুঝতে পারছি না। তবে প্রশাসনের তদন্তেই বেড়িয়ে আসবে বলে আশা করছি। ভাইয়ের নিরাপত্তা নিয়েও তিনি উদ্বিগ্ন।  
 
এরআগে একই রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাবেক রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেনের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে ধামরাইয়ের ডালিপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ আল জামানের বাড়ির প্রাচীরের ওপর কাটা তারের বেড়া কেটেও একদল ডাকাত ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় বাড়ির লোকজন সিসি ক্যামেরায় দেখে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে ডাকাতরা দেওয়াল টপকে পালিয়ে যায়। 
  
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার ও ধামরাই থানার ওসি আতিকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি ডাকাতি না অন্য কিছু তা তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করি অপরাধীরা শিগগির ধরা পড়বে।

এসএ/